সংবাদমাধ্যমে বক্তব্য দেয়ায় চবি অধ্যাপককে শোকজ

সংবাদমাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড নিয়ে বক্তব্য দেয়ায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবুল হাসেমকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নোটিশ হাতে পাওয়ার সাত কর্মদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) অধ্যাদেশ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সিলেকশন বোর্ডে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ সদস্য রাখতে হয়। কিন্তু গত ১৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়া ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে এ বিভাগের কোনো বিশেষজ্ঞ শিক্ষক ছিলেন না বলে অভিযোগ আছে। এছাড়া আড়াই বছর আগে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির আলোকে তিন পদের বিপরীতে পাঁচজনকে সুপারিশ করা হয়েছে বলেও জানা যায়। এ ঘটনায় সিলেকশন বোর্ডে ফারসি ভাষা ও সাহিত্যের বিশেষজ্ঞ না থাকাকে ‘নিন্দনীয় এবং হাস্যকর’ বলে জানিয়েছিলেন ওই অধ্যাপক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান স্বাক্ষরিত নোটিশে বলা হয়, ‘গত ১৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক পদে শিক্ষক নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ড গঠন নিয়ে ২০ নভেম্বর বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর এ আপনি বলেছেন, “সিলেকশন বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে অবশ্যই ফারসি ভাষা ও সাহিত্যের বিশেষজ্ঞ থাকতে হয়। কিন্তু এবারে সিলেকশন বোর্ডের কেউ ভাষা ও সাহিত্যের বিশেষজ্ঞ নন। এমন ঘটনা নিন্দনীয় ও হাস্যকর।” চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট ১৯৭৩ এর প্রথম সংবিধির ৫(২) ধারা অনুসারে চট্টয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক বিভাগে সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক পদে শিক্ষক নিয়োগের সিলেকশন বাের্ড গঠন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারনী পর্ষদ সিন্ডিকেট। ২০২০ সালের ১৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ৫২৮ তম সভার ৬ নম্বর সিদ্ধান্ত অনুসারে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সিলেকশন বাের্ড গঠন করা হয়। আপনার উক্ত বক্তব্যের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালদের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারনী পর্ষদের সিদ্ধান্তকে অবজ্ঞা করা এবং নির্বাচনী বাের্ডের বিশেষজ্ঞ সদস্যগনকে অসম্মান ও অবমাননা করার সামিল। উক্ত নির্বাচনী বোর্ডে একজন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট অনুষদের ডিন, যিনি সাহিত্যের স্বনামধন্য শিক্ষক এবং অপরজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের ফারসি ভাষার সিনিয়র অধ্যাপককে সিন্ডিকেট মনােনয়ন প্রদান করেছে।’

নোটিশে আরও লেখা হয়, ‘বিভাগের একজন সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আপনার কোনো বক্তব্য থাকলে কিংবা সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার কোন প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলে তা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তপক্ষকে নিখিতভাবে জানতে পারতেন। এ ব্যাপারে আপনি এ যাবতকালে কোনো লিখিত বক্তব্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট পেশ করেননি। অথচ যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিধিবিধান মেনে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে, তখন আপনি এটাকে “নিন্দনীয় ও হাস্যকর” বলে মিডিয়াতে বক্তব্য রেখে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তকে অবজ্ঞা করেছেন এবং নির্বাচনী বাের্ডের বিশেষজ্ঞ সদস্যকে অপমানিত করেছেন। যার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে। এটি চট্টগ্রাম বিশবিদ্যালয় কর্মচারী (দক্ষতা ও শৃংখলা) সংবিধি অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আপনার মন্তব্যের বিষয়ে ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দেওয়া জন্য আদেশক্রমে অনুরােধ করা হলো।’

নোটিশ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বিশ্বিবদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘তিনি সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন। তাকে বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে বলা হয়েছে।’

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে আরও জানা যায়, গত ১৪ নভেম্বর ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের তিন সদস্যের বোর্ড বসে। তিন সদস্যের এ বোর্ডে পদাধিকারবলে সভাপতি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। বোর্ডের অপর দুই সদস্য হলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনিস্টিউটের অধ্যাপক শামিম বানু ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন ও বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মহীবুল আজিজ। এদের কেউই সরাসরি ফারসি ভাষা সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক বা বিশেষজ্ঞ নন।

অভিযোগ আছে, ফারসি বিভাগের প্ল্যানিং কমিটি থেকে সিলেকশন বোর্ডের সদস্যের জন্য যে চারজনকে সুপারিশ করা হয়েছিল, তাদের একজনকেও রাখা হয়নি নিয়োগ বোর্ডে। এছাড়া আবেদনকারীদের মধ্যে পিএইচডি ডিগ্রিধারী, প্রথম শ্রেণিতে প্রথম একাধিক প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও অপেক্ষাকৃত অযোগ্যদের সুপারিশ করা হয়েছে বলে অভিযোগ আবেদনকারীদের।

প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক প্রাপ্ত পিএইচডি ডিগ্রিধারী আবেদনকারী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষার্থী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় এমন ব্যক্তিদের আসা উচিৎ যারা শিক্ষা জীবনে সর্বোচ্চ ফলাফল অর্জন করেছে। পাশাপাশি যেখানে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক দিয়ে আমাদের সম্মানিত করেছেন, সেখানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমাদেরই আসা উচিৎ। এটা আমার গর্ব বা অহংকার নয়, এটা আমার অধিকার। কিন্তু আমি শুনেছি তিন জনের জায়গায় পাঁচজনকে সুপারিশ করা হয়েছে যাদের অধিকাংশই তুলনামূলক অযোগ্য। এমনকি যতটুকু জেনেছি তারা ঠিক মতো ফার্সি পড়তেও পারে না।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজ বেগম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘রিট খারিজ না হলে সিলেকশন বোর্ড বসতে পারে না। আর এ বিষয়ে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ জানায়নি। কেউ যদি তথ্য প্রমানসহ অভিযোগ দেয় তাহলে আমরা বিষয়টি দেখবো।’

এমআইটি/এমএহক

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!