সংবাদপত্র অফিসে হামলা চেষ্টার নিন্দায় সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন
জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি
দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিন অফিসে সংঘবদ্ধ উপায়ে হামলা চেষ্টার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে কর্মরত পেশাদার সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি সালাহউদ্দিন মোহাম্মদ রেজা এবং সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক এক বিবৃতিতে বলেন, পত্রিকা অফিস ঘেরাও, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও হামলার চেষ্টা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এসবের মাধ্যমে যে ভয়ভীতির পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে তা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য চরম হুমকি।
এদিকে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক সবুর শুভ গণমাধ্যমে পাঠানো অপর এক বিবৃতিতে এ ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানিয়েছেন।
দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিন অফিসে হামলা চেষ্টার প্রতিবাদ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন (বিপিজেএ) চট্টগ্রামের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মিয়া আলতাফ।
অপর এক বিবৃতিতে ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন সাতকানিয়া-লোহাগাড়া সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি এসএম রানা ও সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক।
বিবৃতিতে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বলেন, চট্টগ্রাম প্রতিদিন অফিসে হামলার চেষ্টার ঘটনা শুধু ন্যাক্কারজনকই নয়, এটা স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপরই হামলা। এই ধরনের হামলা চেষ্টা সাংবাদিকতার মর্যাদাও ক্ষুণ্ন করে।
নেতৃবৃন্দ চট্টগ্রাম প্রতিদিন অফিসে হামলার চেষ্টা ও গণজমায়েত করে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টিকারীদের শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনার জন্য আইনশৃংখলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
যা ঘটেছিল মঙ্গলবার
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বেলা আড়াইটার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর জামালখান এলাকায় দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিন কার্যালয়ের সামনে অন্তত চারটি বাস থেকে নেমে আসা একদল লোক বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে, যা বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চলতে থাকে। একপর্যায়ে তারা অফিসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসন বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করে। এ ঘটনায় জামালখান এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং আশেপাশের অনেক দোকানপাট ভয়ে বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে পরিকল্পিত ‘মব’ তৈরির মাধ্যমে চট্টগ্রাম প্রতিদিন কার্যালয়ে হামলা চালানোর পরিকল্পনা ছিল বলে অভিযোগ করেছে চট্টগ্রাম প্রতিদিন কর্তৃপক্ষ।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, দুপুর দুইটার দিকে নারী ও পুরুষের একটি দল বাসে করে অজ্ঞাত স্থান থেকে এসে চট্টগ্রাম প্রতিদিন কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়। কিছুক্ষণ পর আরেকটি বাসে করে আরও একটি দল সেখানে আসে। বেলা আড়াইটার দিকে শতাধিক লোক জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে বিআরটিসির একটি ডাবল ডেকার বাসে করে আরও শতাধিক লোক এসে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যোগ দেয়।
বিক্ষোভের সময় তারা চট্টগ্রাম প্রতিদিন-এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেয় এবং অনেকেই প্ল্যাকার্ড বহন করে, যাতে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে নিয়ে বিভিন্ন সমালোচনা লেখা ছিল। একপর্যায়ে সেখানে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে কোতোয়ালী থানার পুলিশ বিক্ষোভকারীদের রাস্তার একপাশে সরিয়ে দেয়।
বিকেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চট্টগ্রাম প্রতিদিন কার্যালয়ের সামনে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের একটি দল অফিসে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের সিঁড়ির মুখে আটকে দেয়। এ সময় চট্টগ্রাম প্রতিদিন-এর কর্মীরা কার্যালয়ের ভেতরে কার্যত অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন।
বিক্ষোভকারীদের অনেকে নিজেদের চট্টগ্রাম ইপিজেডের প্যাসিফিক গ্রুপের কর্মী বলে পরিচয় দেন সংবাদকর্মীদের কাছে। তাদের কেউ কেউ কারখানার আইডি কার্ডও গলায় ঝুলিয়ে রাখেন। তবে মানববন্ধনে অংশ নেওয়া কয়েকজন জানান, তারা কেন এসেছেন তা জানেন না। চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (সিইপিজেড) অবস্থিত প্যাসিফিক ক্যাজুয়ালসের মালিক সৈয়দ মোহাম্মদ তাহমীর। তিনি প্যাসিফিক জিন্সের প্রতিষ্ঠাতা নাছির উদ্দিনের ছেলে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম প্রতিদিন-এর সম্পাদক হোসাইন তৌফিক ইফতিখার বলেন, ‘প্রকাশিত কোনো সংবাদের বিষয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে শান্তিপূর্ণভাবে সেটি জানানোর উপায় রয়েছে। তবে এভাবে ‘মব’ তৈরির মাধ্যমে মূলত চাপ সৃষ্টি করতেই চট্টগ্রাম প্রতিদিন কার্যালয়ের সামনে লোক জড়ো করে হামলা চালানোর পরিকল্পনা ছিল বলে আমরা ধারণা করছি।’
তিনি বলেন, ‘কোনো অন্যায় চাপের মুখে অতীতেও আমরা নত হইনি, ভবিষ্যতেও কখনোই আমরা নতি স্বীকার করবো না।’