আশ্বিন মাসে প্রায় ১০ দিন ধরে দুর্গাপুজার উৎসব পালিত হয়। যদিও প্রকৃত অর্থে, উৎসব শুরু হয় ষষ্ঠীর দিন থেকে। যুগ যুগ ধরে বিশ্বাস করা হয়, এদিনই দেবী দুর্গা মর্তে এসেছিলেন।
বুধবার (৯ অক্টোবর) সকাল ৬টায় মণ্ডপে মণ্ডপে বোধন আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্যদিয়ে উৎসবের প্রথম দিন ষষ্ঠী পূজা শুরু হয়েছে। এছাড়াও শুরু হয়েছে চণ্ডীপাঠ, সঙ্গে ঢাকের বাদ্য ও শঙ্খধ্বনি।
লোকনাথ পঞ্জিকা অনুযায়ী, বুধবার ৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠী, ১০ অক্টোবর মহাসপ্তমী, ১১ অক্টোবর মহাষ্টমী ও ১২ অক্টোবর মহানবমী। এরপর ১৩ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে সমাপ্তি ঘটবে শারদীয় দুর্গোৎসবের।
বছরব্যাপী বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীরা শারদীয় দুর্গোৎসব জন্য অপেক্ষা করে থাকেন।
সনাতন শাস্ত্র অনুযায়ী, এ বছর দেবী দুর্গার আগমন দোলায় বা পালকিতে। পালকি বা দোলায় দেবীর আগমন বা গমন হলে এর ফল হয় মড়ক। খাদ্যশস্যে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ হবে ও রোগব্যাধি বাড়বে।
এছাড়া দেবী স্বর্গে গমন করবেন ঘোটকে বা ঘোড়ায়। শাস্ত্র মতে, দেবীর গমন বা আগমন ঘোটকে হলে ফলাফল হয় ছত্রভঙ্গ। এটা সামাজিক ও রাজনৈতিক এলোমেলো অবস্থাকে ইঙ্গিত করে।
বৃহস্পতিবার মহাসপ্তমী, শুক্রবার মহাঅষ্টমী আর শনিবার হবে মহানবমীর পূজা। পঞ্জিকা মতে, এবার মহানবমী পূজার পরই দশমী বিহিত পূজা হবে।
গত ২ অক্টোবর মহালয়ার মাধ্যমে দেবীপক্ষ ও শারদীয় দুর্গোৎসবের পুণ্যলগ্নের শুরু হয়।
এদিকে নগরীর বেশিরভাগ মণ্ডপে লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশকে নিয়ে অধিষ্ঠিত হয়েছেন দেবী দুর্গা। আনন্দ আয়োজনে বরণ করা হয় দেবী দুর্গাকে।
সরেজমিন দেখা গেছে, বুধবার সন্ধ্যায় নগরীর জেএম সেন হলে দেবীর বোধন ও অধিবাস অনুষ্ঠিত হয়। এসময় চণ্ডীপাঠসহ আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। এসময় সেখানে পূণ্যার্থী ও দর্শনার্থীরা ভিড় জমান। নিরাপত্তায় পূজামণ্ডপের প্রবেশপথে বসানো হয়েছে আর্চওয়ে। এছাড়া মণ্ডপের ভেতর নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যদেরও দেখা গেছে সতর্ক অবস্থানে।
পূজা উপলক্ষে পঞ্চমী থেকে দশমী পর্যন্ত জেএম সেন হল প্রাঙ্গণে মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল।
বুধবার বিকাল ৫টায় গীতাপাঠ, সন্ধ্যা ৬টায় প্রতিমা মঞ্চের আবরণ উন্মোচন ও সন্ধ্যারতি এবং সাড়ে ৬টায় মায়ের বোধন ও অধিবাস অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রাষ্ট্রীয় ব্যক্তিবর্গ, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী নেতৃবৃন্দের শুভেজ্ঞা জ্ঞাপন এবং রাত সাড়ে ৮টায় সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে। পূজামণ্ডপের নিরাপত্তায় আাইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন রয়েছে।
জেএমসেন হলে পূজা দেখতে এসেছেন নবনীতা সেন। নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে নবনীতা বলেন, ষষ্ঠীর অনুভূতিটাই অন্যরকম। এদিন বাড়ির সবাই মিলে বেলতলায় আল্পনা এঁকেছি। বুধবার থেকে দুর্গাপূজা শুরু। ভাবছি প্রতিদিনই নতুন নতুন মণ্ডপে যাব, বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরব। মজাটাই অন্যরকম। সারাবছর মুখিয়ে থাকি এ দিনটার জন্য।
এছাড়া নগরের অন্যান্য পূজামণ্ডপে পূজা-অর্চনা, প্রসাদ বিতরণ, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিক্ষাবৃত্তি, বস্ত্র ও শিক্ষাসামগ্রী বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি রয়েছে।
এবার চট্টগ্রাম নগরের ১৬ থানায় ২৯২টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলায় ১ হাজার ৫৯৪টি মণ্ডপে প্রতিমা পূজা ও ৫২৮টিতে হবে ঘটপূজা।
এদিকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পূজা উদযাপন পরিষদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত শারদীয় দুর্গোৎসবের উদ্বোধন করেছেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।
বুধবার (৯ অক্টোবর) কমিটির সভাপতি আশুতোষ দে’র সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব কুমার চৌধুরীর সঞ্চালনায় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বলন করেন চট্টগ্রাম রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী শক্তিনাথানন্দ।
উপস্থিত ছিলেন প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম, কুসুমকুমারী সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লোকমান উদ্দিন, বিনয় ভূষণ আচার্য, অনুপম দে, সুদীপ দাশ, রুপসী দাশ, নারায়ণ চন্দ্র দাশ, রঘু দাশ, অজয় দাশ।
আইএমই/ডিজে