চট্টগ্রামের পতেঙ্গা গুপ্তখালে যমুনা অয়েল কোম্পানির ডিপোতে ঠকানো হচ্ছে শ্রমিকদের। ৫ বছর আগের রেটেই এখানে মজুরি পাচ্ছেন এখানকার শ্রমিকরা। তার ওপর শ্রমিকের মজুরির উপর বড় অংকের কমিশন বসিয়েছে ঠিকাদার। ৩৬৮ টাকা নির্ধারিত থাকলেও জনপ্রতি শ্রমিককে একদিনের বেতন দেওয়া হচ্ছে মাত্র ২৮৫ টাকা। গত ৫ বছর ধরেই বাকি টাকা যাচ্ছে শ্রমিক সরবরাহকারী একমাত্র ঠিকাদারের পকেটে।
দুই বছর পরপর দরপত্রের মাধ্যমে শ্রমিক সরবরাহের ঠিকাদার নিয়োগের কথা থাকলেও ৫ বছর ধরে সেটি বন্ধ। এক ঠিকাদারই তাই গোটা প্রতিষ্ঠানকে জিম্মি করে রেখে ঠকাচ্ছে নিরীহ শ্রমিকদের।
নিয়ম অনুযায়ী প্রতি দুই বছর পরপর বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শ্রমিক-ঠিকাদার নিয়োগের দরপত্র দেওয়ার বিধান থাকলেও কর্তৃপক্ষ এ নিয়ম মানছে না গত ৫ বছর ধরে। নিয়ম ভেঙে একজন ঠিকাদারের সঙ্গেই চুক্তির মাধ্যমে শ্রমিক নেওয়া হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে সুকৌশলে শ্রমিক সরবরাহের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন ঠিকাদার মো. নিজাম উদ্দিন। দরপত্র ছাড়াই ওই চুক্তির ভিত্তিতে জনপ্রতি শ্রমিকের বেতন নির্ধারিত ছিল ৩৬৮ টাকা। অথচ বাস্তবে জনপ্রতি শ্রমিককে দেওয়া হচ্ছে মাত্র ২৮৫ টাকা। ওই ঠিকাদার প্রতিমাসে শ্রমিকদের জনপ্রতি হাজিরা ও ওভারটাইম নয়ছয় করছেন। অস্থায়ী প্রায় ৪০০ শ্রমিকের হিসাব দেখিয়ে কোম্পানি থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে টাকা— মিলেছে এমন অভিযোগও।
জানা গেছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির প্রায় ৫ বছরের দরপত্রের মাধ্যমে শ্রমিক সরবরাহের কাজ পায় ঠিকাদার মো. নিজাম উদ্দিন। এ দরপত্রের কার্যাদেশ অনুযায়ী চট্টগ্রামের প্রধান কার্যালয়সহ গুপ্তখালের ডিপোতে ৪০০ শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছে। এসব শ্রমিকের বেতন ও ওভারটাইম পরিশোধ করা হয় ঠিকাদারের মাধ্যমে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শ্রমিক জানান, বাজারদর অনুযায়ী বর্তমানে সবকিছুর দাম বেড়েছে। গত ৫ বছরের মধ্যে অনেক নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। এখানে কাজ করলে বেতন দেয়, না করলে দেয় না। প্রতিদিনের কাজের জন্য দেওয়া হচ্ছে মাত্র ২৮৫ টাকা। মাস শেষে পাচ্ছি ৮ হাজার ৫৫০ টাকা। প্রতিদিন গাড়ি ভাড়া, ব্যক্তিগত খরচ চালিয়ে ঘরভাড়াও দিতে পারি না। এ টাকা দিয়ে সংসার চালাতে খিমশিম খেতে হচ্ছে।
তাদের অভিযোগ, ঠিকাদার কোম্পানি সব শ্রমিককে জিম্মি করে রেখেছে। নতুন দরপত্রের সময় আসলে সিবিএ নেতাদের ‘ম্যানেজ’ করে ঠিকাদার। দরপত্র আহবান পিছিয়ে দেওয়া হয়। পরে নতুন করে ঠিকাদার মো. নিজাম উদ্দিনের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করা হয়। এর সুযোগ নিয়ে ঠিকাদার বিভিন্ন অনিয়ম করে মাস শেষে কোম্পানি থেকে টাকা আদায় করে নিচ্ছেন। আর শ্রমিকরা ন্যায্য বেতন না পেয়ে হতাশা ও কষ্ট নিয়ে জীবন পার করছেন।
অভিযোগের জানতে চাইলে ঠিকাদার মো. নিজাম উদ্দিন ব্যস্ততার অজুহাতে কিছু বলতে চাননি।
যমুনা অয়েল কোম্পানি চট্টগ্রামের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দিন আনসারী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনার আগে টেন্ডার প্রক্রিয়া করতে উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে টেন্ডার প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা হবে।’
এমএফও/সিপি