শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে বন্দরের আউটারে পণ্য উঠানামা বন্ধ

নৌযান শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের আউটারে জাহাজ থেকে পণ্য উঠানামা বন্ধ রয়েছে। ১১ দফা দাবি আদায়ে সোমবার (১৯ অক্টোবর) রাত ১২টা এক মিনিট থেকে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটে করছে নৌযান-শ্রমিকরা। এতে মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) সকাল থেকে কোন লাইটার জাহাজ আউটারে না যাওয়ায় বন্ধ রয়েছে পণ্য উঠানামা।

বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের আওতাধীন আটটি সংগঠন এই ধর্মঘটে অংশ নিয়েছে।

বাংলাদেশ লাইটার শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নবী আলম বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের আউটারে কোন লাইটার যাচ্ছে না। ফলে আউটারে পণ্য উঠানামা বন্ধ রয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি থেকে কোন লাইটারও ছেড়ে যায় নি।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে দৈনিক একশ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। মাদার ভেসেলের ডেমারেজ দিতে হবে প্রতিদিন। এছাড়া খাদ্যসামগ্রীর ডেলিভারী না হওয়ার কারণে খাদ্যের দাম বেড়ে যাবে।

মাহবুবুল আলম বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দিয়েছি। এ ধর্মঘট যাতে দ্রুত প্রত্যাহার সেজন্য মন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছি।

চট্টগ্রাম জেলা নৌযান শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য সচিব কবির হোসেন বলেন, কর্ণফুলী নদীতে সব লাইটার নোঙ্গর করতে শুরু করেছে। সোমবার রাত ১২টা থেকে দেশব্যাপী চলছে এ ধর্মঘট। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের ক্ষতি দৈনিক একশত কোটি টাকা।

বন্দর সচিব ওমর ফারুক বলছেন, বন্দরে ডেলিভারী স্বাভাবিক রয়েছে। কিন্তু আউটারে বড় কোম্পানিগুলোর ব্যক্তিমালিকানা লাইটার দিয়ে পণ্য খালাস করছে শিল্পগ্রুপগুলো।
আউটার থেকে নদীপথে নারায়ণগঞ্জ, খুলনা ও বরিশাল পর্যন্ত পণ্য পরিবহন করা হয়। নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে সেগুলোও বন্ধ রয়েছে।

শ্রমিকদের ১১ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, নৌযান শ্রমিকদের পরিচয়পত্র, নিয়োগপত্র ও সার্ভিস বুক প্রদান; শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; সকল শ্রমিকদের খাদ্য ভাতা প্রদান করা; ভারতগামী জাহাজের ল্যান্ডিং পাসসহ সেখানে থাকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করা; নদীপথে সকল ধরনের চাঁদাবাদি-সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ করা; নদীর নাব্যতা রক্ষা করা; পরীক্ষা বোর্ডের দুর্নীতি ও মেরিন কোর্টের হয়রানি বন্ধ করা; কথায় কথায় শ্রমিক নির্যাতন বন্ধ ও প্রভিডেন্ট ফান্ড চালু করা; জাহাজে কর্মরত অবস্থায় শ্রমিকরা মৃত্যুবরণ করলে তাদের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান করা।

চট্টগ্রাম জেলা নৌযান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, আমরা দীর্ঘদিন থেকেই অবহেলিত। আমাদের চাকরির জান-মাল ও পরিবারের কোন নিরাপত্তা নেই। এতকিছুর পরও সরকারের কাছ থেকে কোন ধরনের সিদ্ধান্ত আমরা পাচ্ছি না। আগেও সরকার ও মালিকদের পক্ষ থেকে আমাদের দাবি মানার ওয়াদা দিয়েছিল। যেহেতু ওয়াদা ভঙ্গ করেছে, তাই ধর্মঘটে যেতে বাধ্য হয়েছি। এবার দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট প্রত্যাহার করব না।

নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন সূত্রে মতে, নৌযান শ্রমিকরা ২০১৫ সাল থেকে আন্দোলন করে আসছে দাবি আদায়ের জন্য। এগুলোর কয়েকটি দাবি পূরণ হলেও অমীমাংসিত ১১ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে ২০১৮ সালে শ্রম অধিদফতরে আবেদন করেন ফেডারেশন নেতারা। যার অনুলিপি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, নৌযান মালিকদের বিভিন্ন সংগঠনসহ সংশ্নিষ্ট সব দফতরে দেওয়া হয়। কিন্তু শ্রম ও কর্মসংস্থান অধিদফতর থেকে সমস্যা সমাধানে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন নেতাদের।

এদিকে, শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে ১১ দফা উপস্থাপন করা হলেও তাদের মূল দাবি ২০১৬ সালে প্রকাশিত গেজেট অনুযায়ী সর্বস্তরের শ্রমিকদের বেতন দিতে হবে।

প্রসঙ্গত, গত ১৩ অক্টোবর রাজধানীর বিজয়নগরে শ্রম অধিদফতরের সামনে নৌশ্রমিক অধিকার সংরক্ষণ ঐক্য পরিষদের মানববন্ধন থেকে এই ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। এর আগে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি ঘোষণা করেছে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন। এতে সম্মতি জানিয়ে এ ধর্মঘটে অংশ নিয়েছেন নৌযান শ্রমিকদের আটটি সংগঠন।

এএস/এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!