শেয়ারবাজারে আবার ফেঁসে গেলেন এমদাদুল, এবার ব্রোকারেজ হাউজ

কাট্টলী টেক্সটাইলের জালিয়াতিতেও জরিমানা হয়েছিল তিন কোটি

প্রচলিত নীতিমালা ও আইন না মেনেই ব্যবসা করে যাচ্ছিল চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) দুটি ব্রোকারেজ হাউজ। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুল লঙ্ঘন করায় অভিযুক্ত এই দুটি ব্রোকারেজ হাউজকে সাত লাখ টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

অভিযুক্ত ব্রোকারেজ হাউজ দুটি হল ডিএন সিকিউরিটিজ লিমিটেড এবং ফার্স্টলিড সিকিউরিটিজ লিমিটেড। এর মধ্যে ডিএন সিকিউরিটিজ লিমিটেডকে পাঁচ লাখ টাকা এবং ফার্স্টলিড সিকিউরিটিজ লিমিটেডকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। কমিশনের বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) অনুষ্ঠিত সভায় এ জরিমানা করা হয়।

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ বাদামতলীর ডিএন সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমদাদুল হক চৌধুরী। তিনি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কাট্টলী টেক্সটাইল মিলসসহ চট্টগ্রামভিত্তিক লাকী গ্রুপেরও কর্ণধার।

এর আগে গত ১৬ জুলাই শেয়ারবাজার থেকে আইপিওর মাধ্যমে টাকা তুলে, সেই টাকার সঠিক ব্যবহার না করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে মিথ্যা তথ্য দেওয়ায় কাট্টলী টেক্সটাইল মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমদাদুল হক চৌধুরী ও পরিচালকদের তিন কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি তদন্ত করে দেখতে পায়, কাট্টলী টেক্সটাইল মিলস টাকা খরচ তো করেইনি, বরং তারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে জাল দলিল তৈরি করে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকে দিয়েছিল।

সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) জানিয়েছে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের ২০১৮ সালের মে মাসের প্রতিবেদনে ডিএন সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আইন লঙ্ঘনের তথ্য উঠে আসে।

তদন্তে দেখা গেছে, ব্রোকারেজ হাউজটি গ্রাহকদের ট্রেড সম্পাদনের জন্য কনফার্মেশন নোটিশ না দিয়ে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুল ১৯৮৭-এর ৪(৫) ধারা ভঙ্গ করেছে। পে ইন স্লিপ সংরক্ষণ না করে ডিপজিটরি (ব্যবহারিক) প্রবিধানমালা ২০০৩-এর প্রবিধি-৫৩ এর তফসিল ৫(২)(১) ভঙ্গ করেছে। কোম্পানির আলাদা ওয়ার্ক স্টেশনে ডিলার কোডে ট্রেড সম্পাদন না করে ২০০৮ সালের ১২ আগস্ট বিএসইসির দেওয়া নির্দেশনা লঙ্ঘন করেছে। কনসলিডেটেড কাস্টমার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের (সিসিএবি) অর্থ কোম্পানির নিজ নামে আইপিও শেয়ার ক্রয়ের জন্য ব্যবহার করে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুল ১৯৮৭-এর রুল ৮ এ(১) ভঙ্গ করেছে। কোম্পানি পাঁচ লাখ টাকার বেশি নগদ গ্রহণ করে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুল ১৯৮৭-এর রুল ৮ এ(১)(সিসি)(i) ভঙ্গ করেছে।

অন্যদিকে প্রচলিত নীতিমালা ও আইন লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত অপর ব্রোকারেজ হাউজ ফার্স্টলিড সিকিউরিটিজ লিমিটেডকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ফার্স্টলিড সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসের পরিদর্শন প্রতিবেদনে আইন লঙ্ঘনের তথ্য উঠে আসে।

আগ্রাবাদের জীবন বীমা টাওয়ারে অবস্থিত এই প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক সিলেটের মুহিতুল বারী মুহিত।

সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফার্স্টলিড সিকিউরিটিজ কোম্পানির ব্যবসায়িক সত্যতা, সঠিকতা ও হালনাগাদ অবস্থা বিবেচনার জন্য হিসাব বই ও অন্যান্য ডকুমেন্টস প্রস্তুত ও সংরক্ষণ না করে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুল ১৯৮৭-এর ৮(১) ধারা ভঙ্গ করেছে। কোম্পানির একজন অনুমোদিত প্রতিনিধিকে তার নিজের নামে সিকিউরিটিজ ক্রয়-বিক্রয় করতে দিয়ে ‘ডিড অফ এগ্রিমেন্ট অফ অথরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ’ এর ৫ ধারা লঙ্ঘন করেছে।

এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি কোম্পানির কনসলিডেটেড কাস্টমার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ঘাটতি থাকার পাশাপাশি কনসোলিডেটেড কাস্টমার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ডিলার অ্যাকাউন্টে অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে। সেই সঙ্গে একাধিক কনসোলিডেটেড কাস্টমার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করা হয়েছে। এতে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুল ১৯৮৭-এর রুল ৮এ(১) এবং (২) ভঙ্গ হয়েছে। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দ্যা রিস্ক বেজড ক্যাপিটাল অ্যাডেকোয়েসি রেশিও ১:২০ পরিপালন করেনি। এর মাধ্যমে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুল ১৯৮৭-এর রুল ১৫(১) ভঙ্গ করেছে। কোম্পানিটি পরিচালক ও কর্মকর্তাদের ঋণ দিয়েছে। এর মধ্যেমে ২০১০ সালের ২৩ মার্চে দেয়া বিএসইসির নির্দেশনা লঙ্ঘন করেছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!