শুকর হাড়ের ১১ চালান এবার ফেরত পাঠাতে তোড়জোড়

ভিন্ন পথে হাঁটছে আমদানিকারকরা

নিষিদ্ধ শুকরের হাড়যুক্ত চালান আটকে যাওয়ায় ১১ চালান ফেরত পাঠাতে তোড়জোড় শুরু হয়েছে ৬ কোম্পানির। ‘ফিশ ফিড ও মিট অ্যান্ড বোন মিল’ ছাড় নিতে না পেরে উল্টো চালানটি ফেরত পাঠাতে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন আমাদানিকারক কোম্পানিগুলো।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস সূত্র বলছে, ‘ফিশ ফিড ও মিট অ্যান্ড বোন মিলের ৩৭টি চালান আটক রয়েছে কাস্টমসে। এরমধ্যে ১১টি চালান ফেরত নেওয়ার আবেদন করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর)। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ৩ চালান ফেরতও গেছে। কয়েকদিনের মধ্যে ৪ চালান ফেরত যাওয়ায় কাগজপত্র প্রস্তুত করা হয়েছে।

চালান ফেরত নেওয়া কোম্পানিগুলো হলো ফিসটেক বিডি লিমিটেড, ম্যাগনিফাই এগ্রো লিমিটেড, এডভান্স এগ্রোটেক বিডি লিমিটেড, ভিএনএফ এগ্রো লিমিটেড, অ্যাকোয়াটেক এগ্রো বিডি লিমিটেড ও মিসাম এগ্রো লিমিটেড।

সূত্র মতে, সম্প্রতি পাঁচটি চালান ফেরত পেতে মামলা দায়ের করা হয়েছে হাইকোর্টে। অপরদিকে ১১টি চালান বিদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য কাস্টমসে আবেদন করা হয়েছে। এর বাইরে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে নিষিদ্ধ এ পণ্যের ৩৭টি চালান আটক রয়েছে। ফিশ ফিড (মাছের খাবার) আমদানির নামে শূকরের হাড় ও বর্জ্যযুক্ত প্রাণিখাদ্য (মিট অ্যান্ড বোন মিল) নিয়ে আসার ঘটনায় চালান খালাস না দিতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ। এ সংক্রান্ত পণ্য খালাস না দেওয়ায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলমকে লিগ্যাল নোটিশও দিয়েছেন অনেক আমদানিকারক।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ সূত্র জানায়, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনাম থেকে ফিশ ফিড ঘোষণা দিয়ে আমদানিকৃত চালানটিতে একাধিক রাসায়নিক পরীক্ষায় বোভাইন অ্যান্ড প্রোসিনের (শূকরজাত দ্রব্য) অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। আমদানি নিষিদ্ধ এই পণ্য কোনভাবেই খালাসের অনুমতি দিচ্ছে না কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, অধিকতর পরীক্ষার জন্য সর্বোচ্চ তিনটি ল্যাবে পাঠানো হয় নমুনা। এ ক্ষেত্রে দুই ল্যাবের ফলাফল একই হলে চালানটি ছাড় বা আটক রাখা হয়।

কাস্টম কমিশনার মো. ফখরুল আলম বলেন, ‘ভুলে এসব চালান চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে। বিদেশে থেকে যেসব কোম্পানি এ চালানগুলো পাঠিয়েছেন তারা ভুল করেছে বলে উল্লেখ করা হয়। ফলে ভুলে আসা চালান ফেরত নিতে হাইকোর্টেরও শরণাপন্ন হয়েছেন অনেক আমদানিকারক। তাই কোর্টের আদেশের প্রেক্ষিতেই কয়েকটি চালান ফেরত যাচ্ছে।’

তিনি বলেছেন, জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য আমদানির মাধ্যমে দি ইম্পোটার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স কন্ট্রোল অ্যাক্ট ১৯৫০ এবং আমদানি নীতি আদেশ ২০১৫-১৮ এর অনুচ্ছেদ ১৭, পরিশিষ্ট ১ এর খ অংশের বিধান লংঘন করেছে আমদানিকারক।

উল্লেখ্য, বিশেষজ্ঞরা বলেছেন এসব খাদ্যে মুরগি ও মাছ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। ফলে এটি মানব স্বাস্থ্যের জন্য চরম ক্ষতিকর। এবার কঠোর নজরদারির আওতায় এসেছে সিন্ডিকেটটি। গত ৬ মাসে মিট অ্যান্ড বোন মিলের (শূকরের বর্জ্য, হাড় ও মাংসযুক্ত মাছ ও মুরগির খাবার) ৩৭টি চালান আটক করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ। এসব চালানে একাধিকবার রাসায়নিক পরীক্ষার পর মিট অ্যান্ড বোন মিলের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।

এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরে আটকে যাওয়া এসব চালান খালাস নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সংশ্লিষ্ট আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ এজেন্টরা। চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিজস্ব ল্যাব, চট্টগ্রামের পিআরটিসি (পোল্ট্রি রিসার্স অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার) এবং ঢাকার আইসিডিডিআরবিতে একাধিকবার পণ্যগুলোর রাসায়নিক পরীক্ষায় শূকরের বর্জ্যযুক্ত খাবারের প্রমাণ মিললেও পণ্যগুলো খালাস নিতে ভিন্ন পথে হাঁটছে আমদানিকারকরা।

এএস/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!