চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য আবু তাহের যোগ দেওয়ার পর থেকেই অনিয়ম ও দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় শিক্ষকদের সঙ্গে তার দূরত্ব বাড়ছে। অথচ এই শিক্ষকদের টানা আন্দোলনের ফলস্বরূপ সরকার সরকার গত ১৯ মার্চ প্রফেসর ড. আবু তাহেরকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে নিয়োগ দেয়।
সাধারণ শিক্ষকদের অভিযোগ, নতুন উপাচার্য আবু তাহের সদ্য বিদায়ী উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতারের অনুসারীদের নিয়ে পথ চলছেন। তারা বলছেন, নতুন উপাচার্য নিয়োগের প্রায় দুই মাস হতে চললেও প্রশাসনিক বেশিরভাগ পদে রয়ে গেছে শিরীণপন্থি শিক্ষকরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক জ্যেষ্ঠ শিক্ষকের অভিযোগ, শিরীণপন্থি শিক্ষকদের সঙ্গে পরামর্শ করেই সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন নতুন উপাচার্য।
কয়েকজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক জানান, নানা অনিয়মের অভিযোগ থাকার পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের পরিচালক, আইকিউএসির পরিচালক, গবেষণা পরিচালনা ও প্রকাশনা দপ্তরের পরিচালক, স্টেট শাখার প্রশাসক, পরিবহন দপ্তরের প্রশাসক, শহীদ আব্দুর রব হল, শাহ আমানত হল, আলাওল হল, সোহরাওয়ার্দী হল, শাহ আমানত হল, শাহ জালাল হল, শেখ হাসিনা হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট ও হাউস টিউটরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করছেন শিরীণ আখতারের অনুসারীরা।
সর্বশেষ শিক্ষক সমিতির সাবেক এক নেতা বিভিন্ন অভিযোগ তুলে বর্তমান প্রশাসনের দেওয়া দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করে চিঠি দিয়েছেন। তার অভিযোগ, শিরীণ আখতার যাদের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতির ‘হাট’ বসিয়েছেন, তারা কিভাবে এখনো বর্তমান প্রশাসনে সক্রিয় থাকবে? তাদের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা ‘লজ্জাজনক’, ‘অপমানজনক’ ও ‘বিব্রতকর’ বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
জানা গেছে, রসায়নবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ড. ফণী ভূষণ বিশ্বাসকে গত ৯ মে আব্দুর রব হলের আবাসিক শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই চিঠির প্রেক্ষিতে যোগদানে অপরাগতা প্রকাশ করে সোমবার (১৩ মে) তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর একটি চিঠি দেন। পারিপার্শ্বিক অবস্থা পর্যালোচনায় বর্তমানে প্রশাসনিক পদে যোগদান করা রীতিমতো ‘লজ্জাজনক’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
চিঠিতে ড. ফণী ভূষণ বিশ্বাস লিখেন, ‘গত ৯ মে আমাকে এক বছরের জন্য আবদুর রব হলের আবাসিক শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। চবি শিক্ষক সমিতির কার্যনিবাহী পর্ষদ-২০২২-এ কার্যনির্বাহী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে সদ্য সাবেক উপাচার্য প্রশাসনের বিভিন্ন অনিয়ম ও অপশাসনের বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করি। আমাকে এমন একটি হলে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে যেখানে হল প্রাধ্যক্ষের দায়িত্বে এখনো রয়েছেন সদ্য বিদায়ী উপাচার্যের আমলে বিভিন্ন দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত একজন শিক্ষক। যার বিরুদ্ধে ইউজিসির পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
ওই চিঠিতে লেখা হয়, ‘অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, চবির বর্তমান প্রশাসনের বিভিন্ন পর্ষদে প্রায় দুই মাস পূর্বে বিদায়ী উপাচার্যের প্রশাসনের অপকর্মের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বেশ কিছু শিক্ষক এখনো বিভিন্ন হলে প্রাধ্যক্ষের দায়িত্বসহ আরও অনেক প্রশাসনিক পর্ষদে বহাল রয়েছেন। আমার নামে ইস্যুকৃত চিঠির সাথে একইদিনে সদ্য বিদায়ী উপাচার্যের প্রশাসনে অত্যন্ত সক্রিয় থেকে বিতর্কিত কাজ করা আরও কয়েকজন শিক্ষককে কয়েকটি হলে নতুন করে আবাসিক শিক্ষকের পদে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। এমতাবস্থায়, উপরোক্ত প্রশাসনিক পদে যোগদান করা আমার জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক, অপমানজনক ও বিব্রতকর। তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমি আবাসিক শিক্ষক পদে যোগদান করতে সুস্থ মস্তিস্কে অপরাগতা প্রকাশ করছি।’
এ প্রসঙ্গে ড. ফণী ভূষণ বিশ্বাস চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘দীর্ঘ সময় বিগত প্রশাসনের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে শিক্ষক সমিতির সঙ্গে থেকে সাধারণ শিক্ষকদের সাথে নিয়ে আমরা আন্দোলন করেছি। এ আন্দোলন আমলে নিয়ে সরকার নতুন উপাচার্য নিয়োগ প্রদান করেছে। কিন্তু এখনো দুর্নীতিগ্রস্থ প্রশাসনের লোকজন প্রশাসনিক দায়িত্বে রয়ে গেছে। তাদের সাথে আমার পক্ষে কাজ করা সম্ভব না। কারণ যাদের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করেছি, তাদের সঙ্গে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করা আত্মমর্যাদার পরিপন্থী।’