শাহাদাত-বক্করের বলয়মুক্ত চট্টগ্রাম যুবদলও, কমিটি গঠনের নির্দেশ কেন্দ্রের

চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলকে আগামী এক মাসের মধ্যে তাদের অবশিষ্ট ১০টি থানা ও ২৮টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডের কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ নির্দেশের মাধ্যমে নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করের প্রভাবমুক্ত হলো চট্টগ্রাম নগর যুবদল। এর আগে ৩ জুলাই ২০১৯ ঘোষিত যুবদলের পাঁচটি থানা ও ১৫টি ওয়ার্ড কমিটিতে শাহাদাত-বক্করের পছন্দের নেতারা পদ না পাওয়ায় যুবদলের সাথে মতবিরোধ তৈরি হয়। ওই মতবিরোধের সূত্র ধরে গত ১২ মাস যুবদলের কমিটি গঠন প্রক্রিয়া বন্ধ ছিল।

যুবদলের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নীরব ও সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন টুকুর তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রাম নগর যুবদলের বাকি ১০টি থানা ও ২৮টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড কমিটি গঠন করার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। তারেক রহমান যুবদলের নেতাদের সঙ্গে স্কাইপে বৈঠকে এই নির্দেশ দেন।

২৭ জুলাই থেকে পরবর্তী এক মাসকে ‘সাংগঠনিক মাস’ ঘোষণা করেছে নগর যুবদল। এই একমাসের মধ্যে ৩৮টি কমিটি ঘোষণা করার পাশাপাশি প্রতিটি ওয়ার্ড ও থানায় যুবদলের সদস্য সংগ্রহ করা হবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ১ জুন মোশাররফ হোসেন দীপ্তিকে সভাপতি, মোহাম্মদ শাহেদকে সাধারণ সম্পাদক, ইকবাল হোসেনকে সিনিয়র সহ-সভাপতি, মোশাররফ হোসেনকে সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক এবং এমদাদুল হক বাদশাকে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে ‘সুপারফাইভ’ কমিটি গঠন করে যুবদল। চার মাসের মাথায় ৩ অক্টোবর নগর যুবদলের ২৩১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় যুবদল।

পরের বছর ৩ জুলাই নগরের পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও, বায়েজিদ, পাহাড়তলী ও খুলশী থানায় প্রতিটিতে ৫১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে নগর যুবদল। এর আগে পাঁচলাইশ থানা কমিটি গঠন হয়েছিল ১৯৮৭ সালে, পাহাড়তলী থানা ১৯৯৭ সালে। সে হিসেবে এই দুটি থানা কমিটির আহবায়ক কমিটি গঠন হয় যথাক্রমে ৩২ আর ২২ বছর পর।

একই সাথে জালালাবাদ ওয়ার্ড, পাঁচলাইশ ওয়ার্ড, চান্দগাঁও ওয়ার্ড, মোহরা ওয়ার্ড, পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ড, পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ড, শুলকবহর ওয়ার্ড, উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড, উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড, দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ড, সরাইপাড়া ওয়ার্ড, পাহাড়তলী ওয়ার্ড, লালখান বাজার ওয়ার্ড, নাছিরাবাদ সাংগঠনিক ওয়ার্ড, আমিন শিল্পাঞ্চল সাংগঠনিক ওয়ার্ডের আহ্বায়ক কমিটিও ঘোষণা করা হয়।

এরপর শাহাদাত-বক্করের অনুসারী নেতা শামসুল হক বিভিন্ন স্থানে বিকল্প কমিটি ঘোষণা করার চেষ্টা করলে দুই পক্ষ মুখোমুখি হয়। তার জেরে নাসিমন ভবনের মাঠে নগর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে মারামারিও হয়। মারামারির ওই রাতে শামসু ও তার অনুসারীদের সাথে ডা. শাহাদাত নাসিমন ভবনে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে শামসুর অনুসারীরা দীপ্তি-সাহেদসহ নগর যুবদলের নেতাদের আসামি করে কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেন। একদিন পর পাল্টা মামলা হয়। পরে যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন টুকুর মধ্যস্থতায় ওই ঘটনার মীমাংসা হয়।

যুবদলের নিয়ন্ত্রণ নিতে না পেরে ডা. শাহাদাত কেন্দ্রীয় বিএনপির দপ্তর থেকে নগর বিএনপির ‘সুপারিশ সাপেক্ষে’ কমিটি গঠন করতে যুবদলের প্রতি নির্দেশনা এনেছিলেন। পরে এ নিয়ে সমালোচনার পর পাঁচ দিনের মাথায় সেই নির্দেশনা পরিবর্তন হয় কমিটি গঠনে নগর বিএনপি নেতাদের ‘পরামর্শ গ্রহণ’ করতে।

এই চিঠি আদান-প্রদানের মধ্যে নগর যুবদলের নেতারা কৌশলে কেন্দ্রীয় যুবদল থেকে কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় স্থগিতাদেশ নিয়ে আসেন। প্রায় ১৩ মাসের মাথায় এসে যেই সময়টাতে নগর যুবদলের অবশিষ্ট ৩৮ কমিটি গঠনের নির্দেশনা এলো সেই সময়টাতে ডা. শাহাদাত ও আবুল হাশেম বক্কর নগর বিএনপির সিদ্ধান্ত গ্রহণের অবস্থাতেও নেই। তারা রুটিনওয়ার্কই করছেন। কারণ তারা ৫ আগস্ট ২০১৯ নিজেদের কমিটির মেয়াদ শেষ করেছে। লন্ডন থেকে স্কাইপে বৈঠকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শাহাদাত-বক্করকে শুধুমাত্র চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের জন্য বর্ধিত সময় দিয়েছেন। নির্বাচনের পরপরই নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের ঘোষণাও সেই বৈঠকে দিয়ে রেখেছেন।

তবে যুবদলের অবশিষ্ট কমিটিগুলো গঠন নিয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম নগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তি বলেন, ‘বিএনপি আমাদের অভিভাবক সংগঠন। তাদের পরামর্শ অবশ্যই নেবো। যারা বিগত দিনে আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ছিল তাদের কেউ কমিটি থেকে বাদ যাবে না।’

এফএম/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!