শান্তনু বিশ্বাস হঠাৎ থেমে গেলেন পয়ষট্টিতে এসে

নাট্যকার ও সঙ্গীতশিল্পী শান্তনু বিশ্বাস মৃত্যুবরণ ‌করেছেন। ৬৫ বছর বয়সী এই নাট্যনিদের্শক ও অভিনেতা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) বিকাল ৫টায় তাকে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একদিন পর শুক্রবার (১২ জুলাই) বিকাল ৪টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

স্ত্রী ও দুই কন্যা রয়েছে শান্তনু বিশ্বাসের। চট্টগ্রাম গ্রুপ থিয়েটার ফোরামের সদস্য সংগঠন কালপুরুষ নাট্য সম্প্রদায়ের দলীয় প্রধান ও বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন চট্টগ্রাম বিভাগের নির্বাহী সদস্য নাট্যজন শুভ্রা বিশ্বাস শান্তনু বিশ্বাসের জীবনসঙ্গী।

প্রয়াত শান্তনু বিশ্বাসের মরদেহ সর্বস্তরের সাংস্কৃতিক কর্মীদের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য শনিবার (১৩ জুলাই) সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ও বিকেল ৪টায় চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে রাখা হবে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা বিবেচনা করে দুই জায়গায় ব্যবস্থা করা হয়েছে।

১৯৫৪ সালে চট্টগ্রামে জন্ম নেওয়া নাট্যকার-গায়ক শান্তনু বিশ্বাস শুধু এ দুই পরিচয়েই সীমাবদ্ধ থাকেননি। নিজে গান লিখেছেন, সুর করেছেন, গানের অনুবাদও করেছেন। আর পাশাপাশি সুরেলাকণ্ঠে গেয়ে মুগ্ধ করেছেন দর্শক-শ্রোতাদের। জীবনযাপনে শান্তনু বিশ্বাস সাধারণ কিন্তু তার তারুণ্যদীপ্ত ব্যক্তিত্ব, সৃষ্টির উৎকর্ষ তাকে করে করেছে অসাধারণ-অনন্য।

শান্তনু বিশ্বাস মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীকালে থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নাটক লেখা, অভিনয় ও নির্দেশনা শুরু করেন। ১৯৭৬ সালের দিকে চট্টগ্রামে শান্তনু বিশ্বাস আরও ক’জন নাট্যকর্মীসহ অঙ্গন থিয়েটার গড়ে তোলেন। ‘কালো গোলাপের দেশ’ তাঁর লেখা প্রথম নাটক, ‘দপ্তরে রাজ দপ্তরী’। এ দুটো অঙ্গন থিয়েটার ইউনিট নিয়মিত প্রদর্শন করেছে। এর আগেই তিনি ‘অঙ্গন’ এবং ‘গণায়ন’-এ অভিনয় করে সারা দেশে একজন শক্তিমান অভিনেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেন। এরপর তিনি কেবল নাটকই লিখলেন না, নির্দেশনা আবহও তৈরি করলেন তৃতীয় নাটক- ‘নবজন্ম’-তে। দর্শকের স্মৃতিতে আমৃত্যু অমলিন থাকবে মুক্তিযুদ্ধের ওপর একটি ভিন্ন আঙ্গিকে লেখা নাটক ‘ইনফরমার’ যা রচনা, নির্দেশনা এবং অভিনয়ের সকল কৃতিত্বে তিনি সারা দেশে ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা পান। এছাড়া ‘ভবঘুরে’, ‘নির্ভার’ নাটক রচনা ছাড়াও শান্তনু বিশ্বাস বিশ্বনাট্যের বহু নাটক অনুবাদ করেছেন, রূপান্তরও করেছেন, কিশোর নাট্য রচনা করেছেন।

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয় শান্তনু বিশ্বাসের গানের বই ‘গানের কবিতা- খোলাপিঠ’। চিরকেলে গান নিয়ে শান্তনু বিশ্বাসের বোঝাপড়া। স্বাধীনতা উত্তরকালে তাঁর বেশ কটি মিশ্র অ্যালবাম বের হয়। ২০০৬ সালে এটিএন মিউজিক থেকে তাঁর কথা ও সুরে সুবীর নন্দী ও ইন্দ্রাণী সেনের দ্বৈত অ্যালবাম বের হয়। ২০০৭ সালে ইমেপ্রস অডিও ভিশন থেকে বের হয় ‘ঝিনুক ঝিনুক মন’- এটি অরুণিমা ও শান্তনু বিশ্বাসের যৌথ সংকলন। ২০০৮ সালে অগ্নিবীণার ব্যানারে বের হয় বাপ্পা মজুমদারের সঙ্গে যৌথ অ্যালবাম ‘বহমান’। ২০০৯ সালে বেরোয় তাঁর প্রথম একক অ্যালবাম ‘চিরকুট’। ২০১১ তে বেরোয় দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ‘পোস্টম্যান’ এবং ২০১৪-র মার্চে বেরোয় ‘খড়কুটো’ তৃতীয় একক অ্যালবাম। ২০১৮ সালে ‘গানের কবিতা খোলাপিঠ’র সঙ্গে নাট্যগ্রন্থ ‘নির্ভার’ও প্রকাশিত হয়।

নাট্যাঙ্গনে শোক
বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনের পথিকৃৎ, কালপুরুষ নাট্য সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা, নাট্যকার, নাট্যনির্দেশনক, নাট্যাভিনেতা, সুরকার, গীতিকার ও সংগীত শিল্পী শান্তনু বিশ্বাসের আকস্মিক প্রয়াণে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন (চট্টগ্রাম বিভাগ)-এর সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মোসলেম উদ্দীন সিকদার ও সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল আলম বাবু এবং চট্টগ্রাম গ্রুপ থিয়েটার ফোরামের সভাপতি খালেদ হেলাল ও সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ শাহ্ আলম গভীর শোক প্রকাশ করেছে। তারা বলেন, ‘১৯৭৫ সালে তিনি নাটকের সাথে যুক্ত হন। গত ২৮ জুন তাঁর রচনা, নির্দেশনা ও অভিনিত নাটক ‘নির্ভার’ এর প্রথম মঞ্চায়ন হয়। তাঁর অকাল প্রয়াণ নাট্যাঙ্গনের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!