শহরের ভেতর ময়লা পানির ভাগাড় গরীবুল্লাহ শাহ্ সড়ক!

শরতের চকচকে দুপুর, মেঘের আনাগোনা থাকলেও আপাতত বৃষ্টির দেখা নেই। বৃষ্টি না এলে কী হবে, সড়কজুড়ে ঠিকই ময়লা পানির ছড়াছড়ি। ছবি দেখে যে কারও মনে হতে পারে এটি ছোটখাটো কোনো নালা। নালার মতো সড়কের এই বেহাল দশা চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড় এলাকার পাশের গরীবুল্লাহ শাহ মাজার সড়কে। শহরে রাতভর পরিচ্ছন্নতার সফল অভিযান চললেও পরিচ্ছন্নকর্মীদের দেখা নেই এই সড়কে।

অসংখ্য মানুষ প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে চলাফেরা করেন। প্রায় শ’তিনেক গাড়ি দূরপাল্লার পথে যাওয়া আসা করে। এই সড়ক মাড়িয়ে যে যার গন্তব্যে গেলেও পায়ে হাঁটা মানুষদের পড়তে হয় ভোগান্তিতে। সড়কের পাশেই বাস কাউন্টার। শ’খানেক যাত্রী দূরপাল্লার পথ যেতে যাওয়া-আসা করে বাক্সপেটরা নিয়ে। ভারিক্কি গোছের বাক্সপেটরা নিয়ে এই ময়লা পানি মাড়িয়ে কাউন্টারে গেলে জনাকয়েক সাধারণ মানুষ দু’চারটে গালমন্দ করেই ক্ষান্ত দেন। আবার কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও ক্ষোভ ঝাড়েন। তাতে দু’চারশত লাইক কমেন্টস পেলেও কর্তাবাবুদের দেখা মেলে না। সংশ্লিষ্ট মহল ‘শুধু কাজ হচ্ছে, করছি ‘ বলেই সব ঝামেলা চুকানোর চেষ্টা করে।

হানিফ পরিবহন কাউন্টারের যাত্রী সাইদুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সারারাত জার্নি করে রাস্তায় নেমেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। কেমনটা লাগে? এটা কি গ্রিন সিটি আর ক্লিন সিটির নমুনা!

কুসুমবাগ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা সুমাইয়া শিমু বলেন, ‘বাচ্চাদের নিয়ে স্কুলে যেতে গেলে মাঝে মাঝে এই অবস্থা দেখে জিইসি হয়ে যেতে হয়। হয় টাকা যায় নয়তো অনেক হাঁটতে হয়। একটু বলবেন, এভাবে আর কত দিন? রেহাই পাব না নাকি আমরা!’

বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সৈয়দা আলা বলেন, ‘মা ব্যস্ত থাকলে একা স্কুলে যেতে হয়। তখন টাকা বাঁচাতে হেঁটে স্কুলে যাই। এই রাস্তা দিয়ে গেলে স্কুলের জুতা আর চেনা যায় না। কী যে ঘেন্না লাগে। উফ্, অসহ্য!’

মো.আবু সাদেক নামের একজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছবি সংবলিত পোস্টে লিখেছেন, ‘এটি গরিব উল্লা শাহ মাজারের পাশের চিত্র। অর্থাৎ গরিব উল্লা শাহ মাজারের পাশে যে বাস কাউন্টারগুলো আছে, সেই বাস কাউন্টারগুলোর সামনের চিত্র এটি। বাসের সার্ভিস দিয়ে বছরে এরা কোটি কোটি টাকা ইনকাম করলেও এই নালা গুলো পরিষ্কার এবং নালার পাশে কোন দেওয়াল করে দেয়নি।যার কারণে বৃষ্টি ছাড়াই এখানে সড়কে এই ময়লা পানি উঠে যাচ্ছে। এসব কি ওপরমহলে দেখার কেউ নাই?’

তবে এই বিষয়ে কথা বলতে চাইলে চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ শফিকুল মান্নান সিদ্দিকী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘কেন কাজ হবে না? এখানে নালায় যদি কেউ কিছু ফেলে তাহলে প্রতিবন্ধকতা হবে। আচ্ছা, এটা ক্লিয়ার করে দেবো। এখনই দেখতেছি আমরা।’

এ প্রসঙ্গে চসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আপনাদের কাছে থেকে খবর পেয়ে সরজমিন পরিদর্শন করেছি। এটার কাজ ধরা হয়েছে। ইতিমধ্যেই কিছু মাটি উত্তোলন করা হয়েছে। যেটা আছে কালকে থেকে কাজ করবে। পরিচ্ছন্নকর্মীদের বলে দিয়েছি। কিছুদিন আগেও কাজ করা হয়েছে। এটা ভরাট হয়ে গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ জায়গায় প্রতিদিন দুই শতাধিক গাড়ি ছাড়ে। কাউন্টারে আসা যাত্রীরা খাবার খেয়ে নালায় ফেলে দেয়। আবার মাজারে থাকা ভিক্ষুকদের খাবার দিলে তারাও খেয়ে ময়লাগুলো নালায় ফেলে দেয়। যার ফলে কিছুদিন পর পর ময়লা জমে ভরাট হয়ে যায়। আমরা কাউন্টারগুলোকে বলে দিয়েছি এ ধরনের বিষয়ে লক্ষ্য রাখার জন্য। ভিক্ষুক যারা আছেন তাদেরও বলা হয়েছে নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে ময়লা ফেলার জন্য। প্রয়োজনে এখানে একটা বাস্কেট রাখা হবে।’

এসআর/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!