শফীপুত্রকে সরানোর পর হাটহাজারী মাদ্রাসার আন্দোলনে ‘সাময়িক বিরতি’ (ভিডিও)

শনিবার মজলিসে শুরার পূর্ণাঙ্গ বৈঠকে বাকি সিদ্ধান্ত

হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানীকে চট্টগ্রামের হাটহাজারী দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদরাসার শিক্ষক (সহকারী শিক্ষা সচিব) পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে মজলিশে শুরার ৩ সদস্য ও শিক্ষকদের নিয়ে এক বিশেষ সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ছাত্রদের পক্ষ থেকে দেওয়া বাকি দাবিগুলোর বিষয়ে শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) মজলিশে শুরার বাকি সদস্যদের নিয়ে বসে সিদ্ধান্ত দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে বৈঠক শেষে। এসব সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে আন্দোলনে সাময়িক বিরতি দিয়ে মাদ্রাসার গেইট খুলে দিলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসা পর্যন্ত দেশের সকল কওমি মাদ্রাসার ক্লাস বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শুরু হওয়া এই আন্দোলনের মুখে সন্ধ্যার পর আশেপাশের এলাকার মজলিশে শুরার সদস্যদের নিয়ে এই জরুরি বৈঠকে বসেন আল্লামা আহমদ শফী। রাত ১০টার দিকে মাদ্রাসার শুরা সদস্য ও মেখল মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা নোমান ফয়জী আন্দোলনরত সিদ্ধান্তগুলো শিক্ষার্থীদের পাঠ করে শোনান।

এর আগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আনাস মাদানীর কক্ষে হামলা চালায়। সন্ধ্যা নাগাদ চালানো এই হামলায় হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মাঈনুদ্দিন রুহী আহত হন। ওই সময় আল্লামা আহমদ শফীর পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বন্ধ করার অনুরোধ করা হলেও সেটি প্রত্যাখান করে বিশেষ শুরা বৈঠকের দাবি জানায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শফীর ছেলে আনাস মাদানীকে চট্টগ্রামের হাটহাজারী দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদরাসার শিক্ষক পদ থেকে বহিষ্কারের দাবিতে বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২ টা থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী এ আন্দোলন শুরু করে। মাদ্রাসার প্রধান ফটক বন্ধ করে দিয়ে মাদ্রাসার ভেতরে অবস্থান নেয় বিক্ষোভরতরা।

শফীপুত্রকে সরানোর পর হাটহাজারী মাদ্রাসার আন্দোলনে ‘সাময়িক বিরতি’ (ভিডিও) 1

তারা মাদরাসার মুহতামিমের পদ থেকে আল্লামা শফীকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন মুহতামিম নিয়োগসহ ছয় দফা দাবি জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। এই দাবিগুলো হলো— অবিলম্বে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে আনাস মাদানীকে বহিষ্কার করতে হবে। আনাস কর্তৃক অবৈধভাবে অব্যাহতি দেওয়া তিনজন শিক্ষককে পুনর্বহাল করতে হবে। আনাস কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত সকল অযোগ্য-অথর্ব এবং অসৎ চরিত্রের শিক্ষক ও স্টাফদের ছাঁটাই করতে হবে। ছাত্রদের ওপর সব ধরনের জুলুম ও হয়রানি বন্ধ করতে হবে। আল্লামা আহমদ শফী সাহেব কর্মক্ষম না থাকায় তাকে কার্যকরী মুহতামিম থেকে সম্মানজনকভাবে অব্যাহতি দিয়ে একজন ‘মুখলিস, বুযুর্গ ও দক্ষ আলেমকে’ মুহতামিম নিয়োগ দিতে হবে।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, আহমদ শফী বর্তমানে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। তিনি শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ অক্ষম। এ অবস্থায় আনাস মাদানী নিজের ইচ্ছেমত কোনো নিয়ম না মেনে মাদ্রাসা থেকে শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরিচ্যূত করছেন।

এর আগে হাটহাজারী মাদ্রাসা, হেফাজতে ইসলাম ও কওমি মাদ্রাসা বোর্ডের (বেফাক) ওপর প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উঠেছে হেফাজত আমির আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানীর বিরুদ্ধে।

আনাসের বাবা আহমদ শফী দেশের প্রবীণ কওমি আলেম। একইসঙ্গে তিনি চট্টগ্রামের হাটহাজারী দারুল উলুম মুঈনুল ইসলামের (হাটহাজারী মাদ্রাসা) মহাপরিচালকও। এছাড়া তিনি হেফজতের আমির ও বেফাকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বেও রয়েছেন।

শফীপুত্রকে সরানোর পর হাটহাজারী মাদ্রাসার আন্দোলনে ‘সাময়িক বিরতি’ (ভিডিও) 2

হাটহাজারী মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষক ও ছাত্রদের অভিযোগ, আহমদ শফী দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত কারণে মাদ্রাসার প্রশাসনিক তদারকিতে অক্ষম হয়ে পড়ছেন। একাধিকবার তাকে দেশে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। নিজের বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় আহমদ শফী দফতারিক কাজে ছোট ছেলে মাওলানা আনাস মাদানীর ওপর নির্ভর হয়ে পড়েন। এই সুযোগে মাওলানা আনাস মাদানী হাটহাজারী মাদ্রাসা, হেফাজতে ইসলাম ও বেফাকে নিজের বলয় বাড়াতে তৎপরতা চালাচ্ছেন।

শাহ আহমদ শফী নিজের একক সিদ্ধান্তে ছেলে মাওলানা আনাস মাদানীকে হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। মাদ্রাসার মহাপরিচালকের ছেলে হিসেবে তিনি প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। তার সুপারিশের ভিত্তিতে মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগ, বরখাস্ত করা হয় প্রতিষ্ঠানের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!