চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার প্রাণকেন্দ্র আমিরাবাদ বটতলী শহরের পাশে বয়ে চলা একমাত্র খাল বোয়ালিয়া খাল একসময় পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের অনন্য নিদর্শন ছিল। এক যুগ আগেও খালে দেশীয় মাছের ছড়াছড়ি ছিল চোখে পড়ার মতো। কই, মাগুর, শিং, টেংরা, টাকি, শোল, বোয়ালসহ পাঁচমিশালি মাছের আধিপত্য ছিল। জলে সাপ, ব্যাঙ, কুচিয়া, কচ্ছপসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী সহজেই দেখা যেত।

বোয়ালিয়া খালের উৎপত্তি লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে ৭ কিলোমিটার পূর্ব দক্ষিণে উত্তর কলাউজান মিশ্রী বরপাড়া এলাকার বিস্তীর্ণ কৃষিজমিতে। উৎপত্তিস্থল থেকে খালটি লোহাগাড়া উপজেলার কলাউজান ইউনিয়ন, লোহাগাড়া সদর ইউনিয়ন ও আমিরাবাদ ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রায় ১১ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া সীমান্তে টঙ্গাবতীর মুখে গিয়ে টঙ্গাবতী নদীতে মিশেছে।
স্থানীয় প্রবীণরা জানিয়েছেন, একসময় বড়শি ও জাল দিয়ে সহজেই হরেক রকমের মাছ পাওয়া যেত। খালের পানি কৃষি ও গৃহস্থলির কাজে ব্যবহার হতো। গোসল ও নৌকা চলাচলও সহজ ছিল। কিন্তু এখন বোয়ালিয়া খাল মাছ, ব্যাঙ বা অন্য জলজ প্রাণী ছাড়া, মশার প্রজননের বিশাল আস্তানায় পরিণত হয়েছে।
বোয়ালিয়া খাল রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক আবদুল্লাহ মোহাম্মদ শরীফ জানিয়েছেন, ভয়াবহ দূষণের কারণে খালের পানি কালো হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পানির ওপর নানা ধরনের পোকা ভেসে বেড়াচ্ছে এবং মানুষ স্বাভাবিকভাবে চলাচলও করতে পারছে না। স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি, বিশেষত মশাবাহী ডেঙ্গুসহ নানা রোগের সম্ভাবনা। কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ এমরান জানিয়েছেন, দূষণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে খালের দখলও। খালের জায়গা দখল করে কয়েকশ পাকা স্থাপনা গড়ে উঠছে। বটতলী শহরের এক কিলোমিটার অংশে দখল ও দূষণের মাত্রা সবচেয়ে বেশি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, স্থানীয় সেফটি ট্যাংক ও বিভিন্ন ভবনের পয়ঃনিষ্কাশনের নল খালের দিকে প্রবাহিত হওয়ায় খালটি ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। খালের গড় প্রস্থ আনুমানিক ৩০ ফুট হলেও দখলের কারণে অনেক অংশে মাত্র ৮ থেকে ১০ ফুটে নামিয়ে এনেছে। এতে শুধু খালের জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে না, বরং বন্যার ঝুঁকিও বাড়ছে।
বোয়ালিয়া খাল রক্ষা কমিটি শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) সকালে গোলামবারী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের হল রুমে আত্মপ্রকাশ করেছে। আহ্বায়ক আবদুল্লাহ মোহাম্মদ শরীফ, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রেহেনা আক্তার, যুগ্ম আহ্বায়ক রাজিন আহমদ চৌধুরী, সদস্য সচিব মোহাম্মদ এমরান, যুগ্ম সদস্য সচিব ফায়জাত উল্লাহ, সদস্য শহিদুল ইসলাম, কাউসার আলম চৌধুরী, খোরশেদ আলম, বোরহান উদ্দীন সুজন, হাফেজ মোহাম্মদ শোয়াইব, সরওয়ার কামাল, বাবু সত্যজিত পাল, মোহাম্মদ ফারুক, আনোয়ার হোসাইন, বাবু রিটন পাল, বাবু রাজিব পাল উপস্থিত ছিলেন।



