লেডিস পার্লার নিয়ে চিটাগং ক্লাবে লঙ্কাকাণ্ড, ‘অনিয়মে’ কাজ পেল অখ্যাত প্রতিষ্ঠান

সর্বোচ্চ দর দিয়েও ডাক পায়নি ‘আলভিরাস’

চট্টগ্রামের ‘অভিজাত ক্লাব’ হিসেবে পরিচিত চিটাগং ক্লাবে লেডিস বিউটি পার্লার পরিচালনার জন্য দুই দফা টেন্ডার ডেকে শেষ পর্যন্ত কাজ দেওয়া হয়েছে সর্বনিম্ন দরদাতা অখ্যাত এক প্রতিষ্ঠানকে। আলভিরাসসহ সর্বোচ্চ দরদাতা চারটি প্রতিষ্ঠানকে উপেক্ষা করে সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজও দেওয়া হয়েছে টেন্ডারবিধির কোনো নিয়ম না মেনেই। আর এই কাজে সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছেন চিটাগং ক্লাবের চেয়ারম্যান শিল্পপতি নাদের খান— এমন অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, চিটাগং ক্লাবের লেডিস বিউটি পার্লার পরিচালনার জন্য স্থানীয় কয়েকটি সংবাদপত্রের মাধ্যমে দুই দফায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। এর মধ্যে প্রথম দফার দরপত্র সরাসরি বাতিল করে দেয় ক্লাবের নির্বাহী কমিটি। এর কারণ হিসেবে জানা যায়, ক্লাবের নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহাবুবুল কবীর শান্তনু কমিটির সভায় অভিযোগ করেন, ওই দরপত্রে অংশগ্রহণকারী দুটি প্রতিষ্ঠান ‘মানসম্পন্ন’ ছিল না।

এরপর আবার দ্বিতীয় দফায় দরপত্র আহ্বান করা হয় ক্লাবের বিউটি পার্লার পরিচালনার জন্য। এই দরপত্রে মোট ছয়টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে আলভিরাস পার্লার ১ লাখ টাকা মাসিক ভাড়া দেওয়ার প্রস্তাব করে। টাচ অ্যান্ড গ্লো নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান ৯০ হাজার, সায়মা ইসলাম নামের অপর একজন ৮৫ হাজার, অদ্বিতীয়া নামের একটি প্রতিষ্ঠান ৮০ হাজার টাকা মাসিক ভাড়ায় পার্লারটি পরিচালনার প্রস্তাব দেয়। অন্যদিকে সর্বনিম্ন দরদাতাদের মধ্যে সৈয়দা জিনাত আরা নিপুন ৮০ হাজার টাকা এবং লুসি বিউটি পার্লার ৭০ হাজার টাকা দর প্রস্তাব করে।

কমিটির দায়িত্বশীলদের সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার (২২ আগস্ট) চিটাগং ক্লাবের নির্বাহী কমিটির ১৮তম সভায় দরদাতাদের তথ্য উপস্থাপন করার পর ক্লাবের চেয়ারম্যান নাদের খান আকস্মিকভাবে সর্বোচ্চ দরদাতা প্রথম তিনটি প্রতিষ্ঠানের বদলে যৌথভাবে চতুর্থ সবনিম্ন দরদাতা গোসাইলডাঙ্গার সৈয়দা জিনাত আরা নিপুনকে পার্লার পরিচালনার ভার দিতে অনড় ভূমিকা পালন করেন। নাদের খান এ সময় ক্লাবের সচিবকে মৌখিকভাবে জিনাত আরা নিপুনকে জিজ্ঞাসাও করতে বলেন যে, তিনি সর্বোচ্চ দরদাতার (আলভিরাস পার্লার) চেয়ে পাঁচ হাজার টাকা বেশি দিতে পারবেন কিনা।

সর্বনিম্ন দরদাতার সঙ্গে ক্লাব চেয়ারম্যানের এমন অভিনব সমঝোতায় বিস্মিত হন কমিটি সদস্যদের অনেকেই। সৈয়দা জিনাত আরা নিপুন কন্ঠশিল্পী ও বিএনপির অঙ্গ সংগঠন জাসাসের নেতা আবদুল মান্নান রানার স্ত্রী।

এরপর তড়িঘড়ি করে বুধবার (২৪ আগস্ট) চিটাগং ক্লাবের নির্বাহী কমিটির পক্ষে ক্লাবের সচিব অবসরপ্রাপ্ত কমোডর আশরাফ উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে সৈয়দা জিনাত আরা নিপুনকে চিটাগং ক্লাবের লেডিস বিউটি পার্লার পরিচালনায় নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়। এ বাবদ মাসিক ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৫ হাজার টাকা।

Yakub Group

আচমকা এমন সিদ্ধান্ত জানার পর ওইদিনই চিটাগং ক্লাব লেডিস বিউটি পার্লারের মেম্বার ইনচার্জ (এমআইসি) এডভোকেট সাবরিনা চৌধুরী ক্লাবের সচিব বরাবর চিঠি দেন এমন অনিয়মের প্রতিবাদ জানিয়ে।

জবাবে ক্লাবটির সচিব আত্মপক্ষ সমর্থন করার পর বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) এডভোকেট সাবরিনা চৌধুরী ক্লাবের সচিব বরাবর একটি আরও একটি চিঠি দেন। চিটাগং ক্লাবের লেডিস বিউটি পার্লার নিয়ে ‘অবিচার ও অনিয়ম’ তুলে ধরে সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ক্লাবের লেডিস বিউটি পার্লার পরিচালনার জন্য যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল, সেখানে বিভিন্ন নামি প্রতিষ্ঠানের সন্তোষজনক অংশগ্রহণ ছিল। এতে আলভিরাস নামের একটি প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ১ লাখ টাকা প্রস্তাব করে।

চিঠিতে এডভোকেট সাবরিনা লিখেছেন, ‘লেডিস বিউটি পার্লারের মেম্বার-ইন-চার্জের দায়িত্বে থাকায় আমি হাউসকে সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন করার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। কারণ পার্লার চালানোর জন্য জিনাত আরা নিপুণের প্রতিষ্ঠানটি আলভিরাসের চেয়ে যথেষ্ট পেশাদার নয়। এ সময় নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহাবুবুল হক শান্তনু বলেন, জিনাত আরা নিপুণকে পার্লার চালানোর সুযোগ দেওয়ার কোনও উপায় আছে কিনা? এরপর চেয়ারম্যান সচিবকে নির্দেশ দেন, জিনাত আরা নিপুণ সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান আলভিরাসের চেয়ে বেশি টাকা দিতে পারবেন কিনা সেটা সরাসরি কেবল নির্বাহী কমিটিকে জানাতে। অথচ ক্লাবের ১৮তম সভায় এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত বা অনুমোদনই দেওয়া হয়নি।’

এডভোকেট সাবরিনা জানান, ‘লেডিস বিউটি পার্লারের ইনচার্জ হিসেবে আমি দক্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে সর্বোচ্চ দরদাতা আলভিরাসকে নির্বাচন করার জন্য প্রস্তাব করি।’

ক্লাবের সচিবকে উদ্দেশ্য করে চিঠিতে এডভোকেট সাবরিনা আরও উল্লেখ করেন, ‘চিঠিতে আপনি উল্লেখ করেছেন (দরপত্র বাছাইয়ে) কোনও অবিচার করা হয়নি। কারণ ক্লাবের ব্যবস্থাপনা কোনও বা সমস্ত দরপত্র গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান করার অধিকার সংরক্ষণ করে।’

এডভোকেট সাবরিনা প্রশ্ন তোলেন, ‘কোনো বৈধ কারণ ছাড়াই দরপত্রের সর্বোচ্চ দরদাতাকে বাতিল করা এবং সর্বনিম্ন দরদাতাকে সর্বোচ্চ দরদাতার চেয়ে বেশি অর্থ প্রদানের প্রস্তাব দেওয়া কি তাহলে সঠিক পদ্ধতি?’

চিটাগং ক্লাব লেডিস পার্লারের সংস্কার কাজেও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে এডভোকেট সাবরিনা সেই চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, ‘লেডিজ পার্লারের সংস্কার কাজের জন্য ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা অনুমোদন করার পরদিন ক্লাবের সচিব এবং রক্ষণাবেক্ষণ কাজের আহ্বায়ক সেলিম হঠাৎ করেই চেয়ারম্যানকে গিয়ে জানান, কিছু সংস্কার কাজ বাদ দেওয়া যেতে পারে। এরপরই চেয়ারম্যান (নাদের খান) ক্লাব কর্মীদের সংস্কারের কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেন। অথচ সংস্কারের কাজগুলো ছিল জরুরি। এ নিয়ে লেডিজ পার্লারের ইনচার্জ হিসেবে তাকেও কিছু জানানো হয়নি।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!