চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বানুরবাজারে সীমা স্টিল রি-রোলিং মিল লিমিটেডে (এসএআরএম) কর্মরত এক শ্রমিকের করোনা শনাক্ত হওয়ার ঘটনায় কারখানাটি লকডাউন করলো প্রশাসন। ওই কারখানার ১৫০ জন শ্রমিককে হোম কোয়ারেন্টাইন মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১২ মে) দুপুর ১টায় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশিক উর রহমানের নেতৃত্বে যৌথবাহিনী কারখানাটি লকডাউন করে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের নির্দেশ দেয়।
এ বিষয়ে সীতাকুণ্ড উপজেলা করোনা বিস্তার রোধ ও প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন রায় চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশিক উর রহমানের নেতৃত্বে একটি টিম সীমা স্টিল রি-রোলিং মিলস পরিদর্শন করেছে। আমরা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কারখানাটি লকডাউন করেছি। সামনে ঈদ, শ্রমিকদের বেতনের একটি বিষয় আছে। যদি কাজ করতে হয়, কারখানার ভেতরে অবস্থানরত শ্রমিকদের দিয়ে স্বাস্থবিধি মেনে কাজ করাতে পারবে তারা। কোন অবস্থাতেই ভেতরের শ্রমিক বাইরের যেতে পারবে না, বাইরের শ্রমিক ভেতরে যেতে পারবে না।’
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশিক উর রহমান বলেন, ‘দুপুর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত আমরা সীমা স্টিল রি-রোলিং মিলের কারখানা পরিদর্শন করেছি। কারখানায় যাতে বাইরেথেকে কোন শ্রমিক ভেতরে প্রবেশ না করে এবং কারখানার ভেতরে অবস্থানরত কোন শ্রমিক যাতে বাইরে অবাধে যাতায়াত না করে সেই নির্দেশনা দিয়েছি। পাশাপাশি ভেতরের কাজ করার সময় যাতে নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত হয় সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কারখানা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, রোববার রাতে ওই শ্রমিকের শরীরে করোনা শনাক্ত হলে ফৌজদারহাট কলেজ রোড এলাকায় তার বাসস্থানটি লকডাউন করে সীতাকুণ্ড প্রশাসন। কিন্তু কোন পদক্ষেপ নেয়নি তার কর্মস্থল এসএআরএম কারখানার বিষয়ে। এসএআরএম কারখানায় কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের অনিরাপদভাবে কাজে বাধ্য করা নিয়ে ১১ মে ‘সীমা স্টিলের সীমাহীন ‘লুকোচুরি’, করোনা আক্রান্তের পরও লকডাউন নয়’
শিরোনামে চট্টগ্রাম প্রতিদিনে সংবাদ প্রকাশ হয়। প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রথম কর্ম দিবসেই প্রশাসন শ্রমিকদের সুরক্ষায় এগিয়ে এসে কারখানাটি লকডাউন করলো।
সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নুর উদ্দিন রাসেদ বলেন, ‘আক্রান্ত শ্রমিক আমাদের জানিয়েছেন তিনি চার দিন আগে কারখানায় তিনি কাজ করেছেন। আমরা তার পরিবারের সদস্যদের নমূনা সংগ্রহ করেছি। কারখানায় যারা তার সংস্পর্শে এসেছে তাদের উপর নজর রাখছি। তবে ১৫০ জন শ্রমিককে হোম কোয়ারেন্টাইন মানার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।’
এর আগে আক্রান্ত ওই শ্রমিকের বিষয়ে মিথ্যা তথ্য দেয় এসএআরএম কারখানায় কর্তৃপক্ষ। তারা জানিয়েছিল, ওই শ্রমিক এক সপ্তাহ আগ থেকে ছুটিতে ছিলেন। মুলত তিনি করোনা শনাক্ত হওয়ার একদিন আগেও কারখানায় কাজ করেছেন। যা পবর্তীতের প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ নিশ্চিত হয়েছে।
চলতি বছর ১৪ জানুয়ারি সীমা স্টিল রি-রোলিং মিলে ফার্নেস অয়েলে লোহা গলানোর কাজ করার সময় বিস্ফোরণে ঘটনায় ৫ শ্রমিক গুরুতরভাবে দগ্ধ হয়। এর আগে ২০১৭ সালের ১৬ জুলাই বিস্ফোরণে ৯ শ্রমিক দগ্ধ হয়। এছাড়া মাত্রাবহির্ভূত অপরিশোধিত বিষাক্ত বায়ু ছেড়ে দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশ দূষণ করে গত বছর ৯ ডিসেম্বর ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও গুণতে হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে।
জানা যায়, সীমা স্টিল ১৯৯১ সাল থেকে জাহাজ ভাঙা দিয়ে শুরু করে কোম্পানির ব্যবসা। ২০০৩ সাল থেকে ইস্পাত পণ্য রড উৎপাদনে যুক্ত হয় সীমা অটোমেটিক রি-রোলিং মিলস। কোম্পানিটির বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ৬০ হাজার মেট্রিক টন।
এফএম/এমএফও