লালখানবাজারে তালিম নেওয়া জঙ্গি ২১ বছর পর ধরা ঢাকায়
শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টায় ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ডের আসামি
চট্টগ্রামের বহুল আলোচিত মুফতি ইজহারের মাদ্রাসা থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া হরকাতুল জিহাদের (হুজি) সদস্য আজিজুল হক রানা ওরফে শাহনেওয়াজ শেষ পর্যন্ত ধরা পড়লেন ২১ বছর পর। গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২০০০ সালে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তিনি।
কোটালীপাড়ার ওই ঘটনার পর দীর্ঘ ২১ বছর ধরে আত্মগোপনে থাকার পর মঙ্গলবার (১ মার্চ) রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে আজিজুল হক রানা ওরফে শাহনেওয়াজকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশর (ডিএমপি) কাউন্টারে টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।
২০০০ সালে গোপালগঞ্জে শেখ হাসিনার সভামঞ্চের পাশে বোমা পুতে রাখার দায়িত্বে মুফতি হান্নানের সঙ্গে ছিলেন আজিজুল হক রানা। এমনকি শক্তিশালী দুটি বোমা বানানোর কাজেও যুক্ত ছিলেন জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) এই নেতৃত্বস্থানীয় সদস্য। বোমা দুটি উদ্ধারের পরপরই গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া থেকে ঢাকায় চলে আসেন গ্রেফতার আজিজুল হক। এরপর নাম-পরিচয় গোপন করে টেইলারিং, মোদি দোকানদার, বই বিক্রেতা এবং সর্বশেষ খিললক্ষেতে প্রিন্টিং ও স্ট্যাম্পপ্যাড বানানোর কাজ করতেন তিনি।
ঘন ঘন অবস্থান পরিরিবর্তন ও নাম-পরিচয় পরিবর্তন করে দীর্ঘ ২১ বছর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করে সাংগঠনিক কাজও পরিচালনা করে আসছিলেন আজিজুল।
গ্রেফতার আজিজুল হক রানা ১৯৮৭ সালে গাজীপুরের শ্রীপুরে জামিয়া আনোয়ারিয়া মাদ্রাসায় নূরানী বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর সেখানকার ওস্তাদ মাওলানা আমিরুল ইসলাম আজিজুলকে হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশে যোগদানের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। সে সময় ওই মাদ্রাসায় মুফতি হান্নান, আব্দুর রউফ, আব্দুস সালাম সহ হরকাতুল হুজির সিনিয়র সদস্যদের যাতায়াত ছিল এবং গোপন বৈঠক করতেন।
আজিজুল হক রানা সংগঠনে যোগদানের পর অন্য ছাত্রসহ প্রশিক্ষণ ও তালিম নেওয়ার জন্য চট্টগ্রামে হুজি নেতা মুফতি ইজহারের লালখানবাজার মাদ্রাসায় যান এবং তালিম গ্রহণ করে। সেখানে তিনি বোমা তৈরি, আত্মরক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন।
২০০০ সালে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে কোটালীপাড়াস্থ শেখ লুৎফর রহমান সরকারি আদর্শ কলেজ মাঠে অবস্থিত সভামঞ্চের পাশে মাটির নিচে একটি ৪০ কেজি ওজনের বোমা এবং হেলিপ্যাডের পাশে মাটির নিচে একটি ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখে। মুফতি হান্নানের সঙ্গে বোমা পুঁতে রাখার দায়িত্বে ছিলেন আজিজুল হক রানা।
বোমা উদ্ধারের পর আজিজুল গোপালগঞ্জ থেকে পালিয়ে ঢাকায় চলে আসেন এবং মাওলানা আমিরুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করেন। আমিরুলের পরামর্শেই আত্মগোপনে যান আজিজুল।
আজিজুল আত্মগোপনে যাওয়ার পর নেত্রকোণা গিয়ে ভুয়া নাম-পরিচয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স করেন। এরপর সেই পরিরিচয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রও বানান তিনি। আজিজুল বিভিন্ন স্থানে গিয়ে বিভিন্ন পরিরিচয়ে অবস্থান করতেন। ঘন ঘন অবস্থান পরিরিবর্তনের কারণে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকতে সক্ষম হন তিনি।
এর মধ্যে বিদেশে পালিয়ে যেতে পাসপোর্ট তৈরির চেষ্টা করেন আজিজুল। পাসপোর্ট তৈরিতে পুলিশ ভেরিফিকেশনের বিষয় থাকায় পরে তিনি এ থেকে সরে আসেন।
সিপি