লামাকে জেলা ঘোষনার দাবী উপজেলাবাসীর : প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা

রফিক সরকার, লামা প্রতিনিধি :
‘স্থাগিতাদেশ প্রত্যাহার করে সাবেক মহকুমা লামাকে জেলা ঘোষনা কর; করতে হবে’, ‘লামা-আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলাকে নিয়ে পূর্ব ঘোষিত জেলা লামাকে জেলা পুর্নবহাল কর; করতে হবে’, ‘লামা উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নকে পূর্ব ঘোষিত থানা পুর্নবহাল কর; করতে হবে, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নকে পূর্ব ঘোষিত থানা পুর্নবহাল কর; করতে হবে’- ইত্যাদি শ্লোগান সম্বলিত পোষ্টারে ছেয়ে গেছে বান্দরবানের লামা পৌরসভাসহ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের আনাচে কানাচে।

unnamed

লামা নাগরিক ফোরাম ও জেলা বাস্তবায়ন কমিটির ব্যানারে চা দোকান থেকে সর্বত্র এমন পোষ্টারিং হয়েছে। শুধু লামা উপজেলায় সীমাবদ্ধ নয়, এ দাবী আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার আনাচে কানাচে ছেয়ে গেছে। স্থানীয় ৫ লক্ষাধিক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি ও বাঙ্গালীদের এখন একটাই দাবী; সাবেক লামা জেলাকে পূণরায় জেলা ঘোষনা করা হউক।

 

উপযুক্ত আয়তন, সমতল ভূমি এবং প্রয়োজনীয় অধিদপ্তরসহ লোকবল থাকা সত্বেও লামাকে জেলা ঘোষণা না করায় পুষে উঠছে এতদ্বঞ্চলে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি ও বাঙ্গালী অধিবাসীরা। দিন দিন এ আন্দোলন জোরালো হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এতদ্বঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি ও বাঙ্গালীসহ সকল সম্প্রদায়ের উন্নয়নের দিক বিবেচনা করে লামাকে জেলা বাস্তবায়ন করে উন্নয়নের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন জনগুরুত্বপূর্ণ লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় বসবাসকারী পাঁচ লাখ অধিবাসী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আশির দশকে হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ সরকারের আমলে দেশের ৪৭টি মহকুমাকে পুর্নাঙ্গ জেলা ঘোষণা করা হয়। সে সাথে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে গণমুখী করতে বেশ কয়েকটি এলাকাকে থানায় রপান্তরিত করা হয়। ১৯৮২-৮৩ সালে পুর্নাঙ্গ জেলা ঘোষণা করা হয় দেশের এক দশমাংশ ভূ-আয়তন পার্বত্য চট্টগ্রামের একমাত্র জেলা রাঙ্গামাটির কাপ্তাই, খাগড়াছড়ি, রামগড়, বান্দরবান ও লামা মহকুমাকে। একই বিবেচনায় তৎকালীন সরকার বান্দরবানের লামা মহকুমাধীন আলীকদম, গজালিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারী ইউনিয়নকে থানা ঘোষণা করে।

জনসংখ্যার সল্পতা হেতু সরকারের এক প্রজ্ঞাপনে ঘোষিত এসব জেলা ও থানা তার কিছুদিন কার্যক্রম চলার পর স্থগিত হয়ে যায়। পাশাপাশি পার্বত্য এলাকায় শুধুমাত্র আলীকদমকে থানা হিসেবে বহাল রেখে, জনবহুল বাইশারী ও গজালিয়া থানার কর্মকান্ড স্থগিত করে তৎকালীণ সরকার। একই কারণে নতুন করে জেলা ঘোষিত ৪৭টি মহকুমার মধ্যে ৪২ টি মহকুমাকে পুর্ণাঙ্গ জেলা বহাল রেখে বাকি ৫টির জেলা কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেন। এর মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটির কাপ্তাই, খাগড়াছড়ির রামগড় ও বান্দরবানের লামা মহকুমা সরকার ঘোষিত জেলা কার্যক্রম স্থগিত হয়।

 

জনসংখ্যার কারণে জেলা ও থানা কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হলেও বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে সমাজ-সভ্যতার অনেক অগ্রগতি হয়েছে লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার। সাবেক মহকুমা লামা উপজেলায় বর্তমানে তিন লক্ষাধিক লোকের বসতি। উপজেলায় একটি পৌরসভা, ৭টি ইউনিয়নের সাথে সদর ও উপজেলাগুলোর রয়েছে কার্পেটিং, এসবিবি ও কাচাঁ সড়ক যোগাযোগের সুব্যবস্থা।

৮৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়সহ ১৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি ফাজিল মাদ্রাসা, একটি ডিগ্রী কলেজ, সহকারি পুলিশ সুপারের কার্যালয়, জেলা তথ্য অফিস, বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়, সাব জেল খানা, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত, সড়ক ও জনপথ, উপ-পরিচালক বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন, উপ-সহকারি প্রকৌশলী গনপূর্ত, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর-এর অফিস ও জনবলসহ কার্যক্রম চালু রয়েছে। এছাড়া এখানে রয়েছে ৫টি শিল্পকারখানা।

 

এদিকে, লামা উপজেলাকে জেলা ঘোষনার পর লামা পৌর এলাকার টিটিএন্ডডিসিতে ১৯৭৯ সালে ‘লামা জেলা রেষ্ট হাউজ’ নামে একটি রেষ্ট হাউজও নির্মান করা হয়েছিল। এটি এখন শুধুই জেলার স্মৃতি বহন করে চলেছে।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রতিনিধি এম. রুহুল আমিন বলেন, উপযুক্ত আয়তন, যথেষ্ট সমতল ভূমি এবং লোকবল থাকা সত্বেও লামাকে জেলা ঘোষণা না করায় চরম ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছে লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ৫ লাখ মানুষ। এর কারন লামা উপজেলা থেকে বান্দরবান জেলা সদরের দূরত্ব ৯৮ কিলোমিটার, আলীকদম উপজেলা থেকে ১২১ কিলোমিটার ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার। এ তিন উপজেলা থেকে দুর্গম পাহাড়ি পথ বেয়ে মামলার আসামী আনা-নেওয়ার কাজে পুলিশকে চরম ভোগান্তীসহ নিরাপত্তাহীনতায় ভূগতে হয়। এছাড়া ব্যক্তিগত কাজে এ ভোগান্তি ও আর্থিকভাবে ক্ষতি তো হচ্ছেই।

আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা লামার অতি সন্নিকটে হওয়ায় সাবেক মহকুমা লামাকে জেলা ঘোষনা করা হলে এ ভোগান্তি থেকে রেহাই পাবে অত্রাঞ্চলের মানুষ।
এ প্রসঙ্গে লামা উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল আজিজ জানান, অতীতে লামাকে জেলা ঘোষনার পরেও কি কারনে স্থগিত করা হয়, তা জানা নেই। তবে সাবেক লামা জেলাকে পূণনায় জেলা ঘোষনা করা হউক; এটিই এখন লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলাবাসীর প্রাণের দাবী। আয়তন ও লোক বলের বর্তমান দিক বিবেচনা করে লামা উপজেলাকে পূণরায় জেলা ঘোষনার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
লামাকে পূণরায় জেলা ঘোষনার জোর দাবি জানিয়ে নাগরিক ফোরাম ও জেলা বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক মো. কামরুজ্জামান বলেন, ১৯৮২ সালে সরকার লামা মহকুমাকে জেলা করার জন্য স্থানীয়দের থেকে অনেক জমি অধিগ্রহনও করেছিলেন। জেলা বাস্তবায়ন না হওয়ার কারনে ওই সব জমির বেশিরভাগ বেহাত হতে চলেছে। এছাড়া লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি হচ্ছে প্রাকৃতি সম্পদে ভরপুর। এ সম্পদকে কাজে লাগাতে লামাকে জেলা ঘোষনা করা ছাড়া বিকল্প নেই। তিনি আরো বলেন, লামাকে জেলা ঘোষনা না করা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।

 

এ এস / জি এম এম / আর এস পি :::

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!