লাগামছাড়া/ চসিকের ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন ফি এক লাফেই বাড়ল ৬ গুণ

এক লাফেই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনসহ সব করপোরেশন ও পৌরসভায় সব ধরনের ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের ফি ছয় গুণের বেশি বেড়ে গেছে। গত ৩০ জুন এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে গত ১৬ জুলাই তা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাছে পাঠিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এর বিরোধিতা করে স্বয়ং অর্থমন্ত্রীকে নালিশ দিয়েও কোনও কাজ হয়নি বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন বলছে, সরকারের আদেশ মানতে তারা বাধ্য। সুতরাং এটা দিতেই হবে। নতুন অর্থবছরে লাইসেন্স নবায়নের অগ্রিম কর ছয় গুণ বাড়ানোর এ সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন চট্টগ্রামের লাখ লাখ ছোট-বড় ব্যবসায়ী। এর আগে গৃহকরের পরিমাণ একলাফে ১০ গুণেরও বেশি বাড়িয়ে চরম সমালোচিত হয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।

জানা গেছে, প্রতি বছর জুন-জুলাইয়ে সাধারণত ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করে থাকেন ব্যবসায়ীরা। একসঙ্গে একাধিক বছরের ফি জমা দিয়েও একাধিক বছরের জন্য ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করার সুযোগ আছে। দেশে বিদ্যমান ২৯৮ ধরনের ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স ফি বাড়ানো হয়েছে। গত অর্থবছরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন থেকে বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৮০ হাজার ৫১টি ট্রেড লাইসেন্স নতুন ও নবায়ন করা হয়েছিল। এবার নতুন করে ছয়গুণ নবায়ন অগ্রিম কর বাড়ানোর কারণে ব্যবসায়ীরা নবায়নবিমুখ হওয়ার আশংকা রয়েছে খোদ সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তাদেরও। তবে নতুন অর্থবছর শুরু হওয়ায় এখনো গ্রাহক পর্যায়ে বিষয়টি সেভাবে প্রকাশ পায়নি। ফলে এ নিয়ে আলোচনাও তেমন নেই।

সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত ট্রেড লাইসেন্স ফি নতুনের ক্ষেত্রে ক্যাটাগরি হিসেবে ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত নির্ধারিত। তবে পরবর্তী বছর থেকে লাইসেন্স ফি নবায়নের ক্ষেত্রে প্রত্যেক ক্যাটাগরির ব্যবসায়িক ট্রেড লাইসেন্সের ক্ষেত্রে ৫০০ টাকা করে নবায়নে অগ্রিম কর দিতে হতো। এই নিয়মটি গত অর্থবছরেও বলবৎ ছিল।

কিন্তু ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী এখন প্রত্যেক ট্রেড লাইসেন্স নবায়নে অগ্রিম কর দিতে হবে ছয় গুণ বেশি। যে ফি আগের অর্থবছরে ছিল ৫০০ টাকা, সেটি এখন থেকে দিতে হবে তিন হাজার টাকা। লাইসেন্স নবায়ন করতে হলে ট্রেড লাইসেন্স ফি অর্থাৎ আদর্শ কর আগের নিয়মেই থাকবে। আর ভ্যাট বাবদ দিতে হবে মোট টাকার শতকরা ১৫ ভাগ এবং অগ্রিম আয়কর ৫০০ টাকার স্থলে এবার দিতে হবে তিন হাজার টাকা। এছাড়া সাইনবোর্ড করও দিতে হবে আগের নিয়মে ৬০০ টাকা।

নতুন প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নতুন অর্থবছরে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নবায়ন অগ্রিম কর ফি ৫০০ টাকার স্থলে তিন হাজার টাকা করা হয়েছে। অন্য সিটি করপোরেশনে আগের ৩০০ টাকার স্থলে দুই হাজার টাকা। যে কোনও জেলা সদরের পৌরসভায় ৩০০ টাকার স্থলে এক হাজার টাকা। আর অন্যান্য পৌরসভায় ১০০ টাকার স্থলে ৫০০ টাকা নবায়ন অগ্রিম ফি দিতে হবে।

চসিকের রাজস্ব বিভাগের সিনিয়র এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সব সিটি করপোরেশনের জন্য রাজস্ব বোর্ড থেকে ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের অগ্রিম কর ছয় গুণ বাড়িয়ে পুননির্ধারণ করে নতুন গেজেট জারি করে। এটি গত ৩০ জুন প্রকাশিত হলেও গত ১৬ জুলাই আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এই প্রজ্ঞাপন মতই আমাদের মাঠপর্যায়ের পরিদর্শকরা ফি আদায় শুরু করেছেন।’

তবে খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ জামাল হোসাইন বলেন, ‘ব্যাংকঋণের সুদহার, ভ্যাট ও ট্যাক্সসহ বিভিন্ন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় এমনিতেই ব্যবসায়ীরা চাপে আছেন। এর ওপর ট্রেড লাইসেন্সের নবায়ন ফি ছয়গুণ বৃদ্ধি করায় অনেক ব্যবসায়ী বিপাকে পড়েন। বিশেষ করে বর্ধিত ফির কারণে নতুন উদ্যোক্তাদের মধ্যে ট্রেড লাইসেন্স নেওয়ার প্রবণতা কমে যাবে। ছোট ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এর একটি যৌক্তিক ফি নির্ধারণ করা দরকার। প্রয়োজনে যারা ফুটপাতে ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করছে তাদেরও করের জালে নিয়ে আসা হোক।’

চিটাগং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন ফি অস্বাভাবিক ও অযৌক্তিক হারে বাড়ানো হয়েছে। এক লাফেই ছয়গুণ নবায়ন ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্তটা ব্যবসার জন্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে। বিষয়টি নিয়ে যখন প্রাক-বাজেট আলোচনার সময় অর্থমন্ত্রী ও এনবিআর চেয়ারম্যানকেও বলেছি। কিন্তু সরকার যখন ব্যবসায়ীদের বিরোধিতার পরও অটল, এখন এর প্রতিক্রিয়া কী হবে তা জানি না। সরকারকেই এর দায় নিতে হবে।’

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, ‘সরকার যখন প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে কর বাড়ানোর বিষয়টি জানায় তখন আদায়কারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে সিটি করপোরেশনের করার কিছুই থাকে না। আমরা শুধুমাত্র এনবিআরের আদেশ পালন করি মাত্র। সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এনবিআরের সব আদেশ মানতে বাধ্য।’

এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের চাপ বাড়লেও সিটি করপোরেশনকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান মেয়র।

তবে ট্রেড লাইসেন্সের অস্বাভাবিক এই ফি বাড়ানোর ব্যাপারে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে জনস্বার্থে কেন আপত্তি বা দ্বিমত জানানো হল না—এর কোনো জবাব মেলেনি কোথাও।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!