চট্টগ্রামে গরুর চামড়া বিক্রি হল ছাগলের চামড়ার দামে। শনিবার কোরবানির দিনে নগরীর আতুরার ডিপো থেকে মুরাদপুর পর্যন্ত রাস্তায় বসলো চামড়ার হাট। কিন্তু সেখানে চামড়া বিক্রেতা দেখা গেলেও ক্রেতা দেখা যায়নি। যাও দেখা গেছে, তাতেও বড় চামড়ার দাম উঠছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। যা স্বাভাবিক সময়ে একটি ছাগলের চামড়ার সমান।
বাংলাদেশে চামড়া পুরো বছরের চাহিদার বেশিরভাগই মেটে কোরবানির পশুর চামড়া থেকে। জানা গেছে, ২০১৯ সালে সবচেয়ে নাজুক অবস্থা ছিল চামড়ার দরের। এ সময় অনেকে ক্ষোভে-প্রতিবাদে ডাস্টবিনে-নদীতে চামড়া ফেলে দিয়েছিলেন। নানান বিতর্কের কারণে অনেকে মনে করেছিলেন এ বছর হয়তো কিছুটা বেড়ে স্বাভাবিক হবে চামড়ার দাম। কিন্তু উল্টো আরও পতন হয়েছে চট্টগ্রাম অঞ্চলে।
গরুর চামড়ারই যখন এই অবস্থা, তখন ছাগলের চামড়া কেনার লোকই পাওয়া মেলেনি সেভাবে। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের ইকবাল হোসেনসহ অনেকে ছাগলের চামড়া মাটিচাপা দিয়েছেন।
অথচ বছরতিনেক আগেও গরুর চামড়া এক হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। আর খাসির চামড়া ৫০০ টাকা পর্যন্ত কেনাবেচা হয়েছে। এখন বড় একটি গরুর চামড়া বিক্রি করেও সে সময়ের খাসির চামড়ার টাকা মিলছে না।
নগরীর মুরাদপুর এলাকার শহিদুল আলম নামের এক ব্যবসায়ী বললেন, ‘৮০ হাজার টাকায় কোরবানির গরু কিনেছি। সেই গরুর চামড়ার দাম বলছে ৫০ টাকা। তাকে চামড়াটা দিয়ে আর ৫০ টাকা নিইনি। কারণ এটি পরিষ্কার করতে হলে ১০০ টাকা দিতে হতো একজন লেবারকে।’
হামজারবাগ এলাকার শামসুল ইসলাম জানান, তারা তিনজন মিলে ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি গরু কোরবানি দিয়েছেন। সেই চামড়ার দাম ৪০ টাকা দিয়ে দরাদরি শুরু হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ৬০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। যা এক সময়ের ছাগলের চামড়ার চেয়েও কম। এক সময় তারা খাসির চামড়াই বিক্রি করেছেন ৪০০ টাকায়।
ফটিকছড়ির বিবিরহাট বাজারের চামড়া বিক্রেতা মুছা আহমদ বলেন, ‘এবার চামড়ার ক্রেতাই নাই। অন্যান্য বছরগুলোতে ১০-১৫ জন ফড়িয়া আসতো চামড়া কিনতে। তারা দরদাম করে চামড়া কিনে নিয়ে যেতো। কিন্তু এবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মাত্র দুজন ক্রেতা এসেছে। মনে হয়েছে চামড়া ছেড়ে দিতে পারলে বাঁচি। ব্যাপারি ১৫০ টাকা দিয়ে চলে গেছে। বলেছে যদি বেশি দাম কেউ দেয়, তাকে দিয়ে দিয়েন। আমি পরে এসে টাকা ফেরত নিয়ে যাবো।’
গ্রামে কোরবানির চামড়া বাড়ি বাড়ি গিয়ে কেনেন ক্রেতারা। সকাল ১০টার পর থেকে ব্যাপারীরা গ্রামে গ্রামে ঘুরতে থাকেন। তখন অনেক গরুর চামড়া পুরোপুরি রেডি না হলে টাকা দিয়ে চলে যেতেন। বিকেল নাগাদ চামড়া সংগ্রহ করতেন। আবার একশ্রেণির ব্যাপারী ছিলেন যারা ঈদের গরুর হাটে ঘুরে ঘুরে চামড়ার দাম ঠিক করে বায়না দিতেন। দুই তিন বছর আগেও এমন ব্যাপারীদের দৌড়ঝাঁপ দেখা গেছে। কিন্তু চামড়ার দর পড়ে যাওয়ায় এখন আর ক্রেতার দেখা মিলছে না।
এএস/সিপি