লঙ্কাওয়াশের লজ্জায় বাংলাদেশ

শ্রীলঙ্কার হাতে লঙ্কাওয়াশের লজ্জায় পড়লো বাংলাদেশ ক্রিকেট। অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে শ্রীলঙ্কার বর্তমান দলটি বাংলাদেশের চেয়ে ঢের পিছিয়ে। কিন্তু মাঠের ক্রিকেটে তারা বাংলাদেশকে পিছিয়ে দেয় সব বিভাগেই। ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং তিন ডিপার্টমেন্টেই বাংলাদেশকে মনে হয়েছে শ্রীলঙ্কার তুলনায় নবীন, খাপছাড়া।

শ্রীলঙ্কার জানবাজ প্লেয়ারদের সামনে নতজানু ক্রিকেটে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা এড়াতে পারলো না বাংলাদেশ। তৃতীয় এবং শেষ ম্যাচে এসে শোচনীয় পরাজয়ের মধ্য দিয়ে ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করলো তামিম ইকবালের দল। কলম্বোর প্রেমদাসা স্টেডিয়ামে ১২২ রানে হেরে গেছে টাইগাররা।

স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার ছুঁড়ে দেয়া ২৯৫ রানের বিশাল চ্যালেঞ্জ টপকাতে নেমে স্বাগতিক বোলারদের সামনে সৌম্য সরকার ছাড়া দাঁড়াতেই পারেনি কোনো বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান। যার ফলশ্রুতিতে ৩৬ ওভারে ১৭২ রানেই অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ।

শেষ দিকে তাইজুল ইসলাম ব্যাটিং শেখালেন জেনুইন ব্যাটসম্যানদের। তার স্বল্পস্থায়ী ঝড়ের ওপর ভর করে বাংলাদেশের স্কোর দেড়শ’ পার হয়। শেষ পর্যন্ত থামে ১৭২ রানে। তাইজুল ইসলাম অপরাজিত থাকেন ২৭ বলে ৩৯ রান করে। ৫টি বাউন্ডারি এবং ১টি ছক্কার মার মারেন তিনি।

লঙ্কাওয়াশের লজ্জায় বাংলাদেশ 1
পুরো সিরিজ জুড়ে ছিল বাংলাদেশের ব্যাটিং ব্যর্থতার কাহিনির পাশে শ্রীলঙ্কার উল্লাস।

তাইজুলের আগে সৌম্য সরকার কিছুটা লড়াই করেন। ৮৬ বল খেলে সর্বোচ্চ ৬৯ রান করেন তিনি। ৫টি বাউন্ডারির সঙ্গে ১টি ছক্কা হাঁকান সৌম্য। লঙ্কান বোলারদের মধ্যে দাসুন সানাকা সর্বোচ্চ ৩টি, কাসুন রাজিথা এবং লাহিরু কুমারা নেন ২টি করে উইকেট।

আগের দুই ম্যাচের মধ্যে প্রথম ম্যাচে টস জিতে ব্যাট করতে নামা শ্রীলঙ্কা সংগ্রহ করেছিল ৩১৪ রান। জবাবে বাংলাদেশ অলআউট হয়েছিল ২২৩ রানে। দ্বিতীয় ম্যাচে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ করেছিল ২৩৮ রান। জবাবে ৩২ বল হাতে রেখেই ৭ উইকেটে জিতে গিয়েছিল লঙ্কানরা। এই ম্যাচে ২৯৫ রান লক্ষ্য নির্ধারিত হওয়ার পরই বোঝা হয়ে গিয়েছিল, কপালে কি লিখন আছে টাইগারদের।

হোয়াইটওয়াশের লজ্জা এড়ানোর জন্য লক্ষ্য ছিল ২৯৫ রান। এ লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই মহা বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ। দুই ওপেনার তামিম ইকবাল এবং এনামুল হক বিজয়কে হারিয়ে ফেলে ২৯ রানের মধ্যে। এরপর ৪৬ রানের মাথায় আউট হয়ে যান মুশফিকুর রহীমও। শুরুতেই তিন নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে পরাজয়টা নিশ্চিত করে তোলে বাংলাদেশ। ওই সময়ই জয়ের সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়।

অথচ যেখানে দুই ওপেনারের তরফ থেকে দায়িত্বশীল ব্যাটিং আশা করেছিল সবাই, সেখানে তারা পরিচয় দিলেন চরম দায়িত্বহীনতার। আউট হলেন ২ রানে। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই কাসুন রাজিথার বলে উইকেটের পেছনে কুশল পেরেরার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনি। টানা ৬ ম্যাচে বোল্ড হওয়ার পর সপ্তম ম্যাচে এসে তামিম এবার আর বোল্ড হলেন না।

বরাবরের মত আজও ব্যর্থ ওপেনার তামিম ইকবাল। এই সিরিজের তিন ম্যাচে তিনি করলেন কেবল ২১ রান (০ + ১৯ + ২)। বিশ্বকাপেও ছিলেন ব্যর্থ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কেবল একটি মাত্র হাফ সেঞ্চুরি করতে পেরেছিলেন তিনি (৬২ রান)। এছাড়া ব্যর্থতার ধারাবাহিকতাকেই টেনে আনছেন তামিম বার বার।

দীর্ঘ এক বছর পর ওয়ানডে খেলার সুযোগ পেলেন ওপেনার এনামুল হক বিজয়। কিন্তু ফিরে আসার মান রাখতে পারেননি তিনি। আউট হলেন কেবল ১৪ রান করে। বল খেলেছেন ২৪টি। কোথায় নিজেকে প্রমাণের জন্য উজাড় করে দেবেন, তা না উল্টো উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এলেন কাসুন রাজিথার বলে ফার্নান্দোর হাতে ক্যাচ দিয়ে।

দলীয় ৪৬ রানের মাথায় ফিরে যান মুশফিকও। আগের দুই ম্যাচে ভরসার প্রতীক হয়ে ছিলেন এই ব্যাটসম্যান। দ্বিতীয় ম্যাচে তো তার অপরাজিত ৯৮ রানের ওপর ভর করেই বাংলাদেশ ২৩৮ রানের পুঁজি পেয়েছিল। কিন্তু এবার আর পারলেন না মুশফিক। দাসুন সানাকার বল খেলতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লাগিয়ে ক্যাচ দিলেন প্রথম স্লিপে কুশল মেন্ডিসের হাতে। ১৫ বলে ১০ রান করে ফিরে গেলেন মুশফিক।

পরের ব্যাটসম্যানরা ছিলেন কেবল আসা-যাওয়ার মিছিলে। মোহাম্মদ মিঠুন ৪, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৯, সাব্বির রহমান রুম্মন ৭ এবং মেহেদী হাসান মিরাজ আউট হন ৮ রান করে। অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন সৌম্য সরকার। শেষ মুহূর্তে তাইজুল ঝড় তুলে বাংলাদেশের রান নিয়ে যান ১৭২-এ।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!