ঈদের পর লকডাউনের সময় গার্মেন্টস কারখানা খোলা রাখার দাবি জানিয়েছেন পোশাক শিল্পের মালিকরা। তারা বলছেন, করোনার কারণে যেসব অর্ডার ফিরে এসেছিল সেগুলো নিয়ে মাত্র কাজ শুরু হয়েছে গার্মেন্ট শিল্পে। সামনে শীতের জন্য কাজ চলছে এখন। এমন সময় গার্মেন্টস কারখানা দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ থাকলে দেউলিয়া হয়ে যাবে এ শিল্প।
বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) নেতারা মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। এ সময় তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে লেখা একটি চিঠিও হস্তান্তর করেন। বৈঠক শেষে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান জানান, করোনার কারণে অর্ডার ফিরে আসার সময়েই গার্মেন্টস কারখানা দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ থাকলে দেউলিয়া হয়ে যাবে এ শিল্প। গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ থাকবে এটা শুনেই বায়াররা অর্ডার স্লো করে দিয়েছেন। তাই, আমাদের দাবি সবকিছুর জন্য বিধিনিষেধ থাকলেও গার্মেন্ট শিল্প যেন এ সময় খোলা থাকে।
পোশাকশিল্পের মালিকরা বলছেন, পোশাক উৎপাদকদের জন্য জুলাই-আগস্ট মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় পশ্চিমা বাজারে শীত ও বড়দিনের জন্য বিক্রি বেড়ে যায়। বাংলাদেশ থেকে রফতানি করা মোট পোশাকের ৪০ শতাংশই এ দুই মাসে রফতানি হয়।
ঈদের পর ২৩ জুলাই থেকে শুরু হতে যাওয়া ১৪ দিনের লকডাউনে কাজ বন্ধ রাখা হলে রপ্তানিতে গুরুতর সমস্যা তৈরি হবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছিলেন গার্মেন্ট কারখানার মালিকরা।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে লেখা চিঠিতে বিজিএমইএ নেতারা লিখেছেন, ‘গত রোজার ঈদে কাজের চাপ কম থাকায় ছুটিও কিছুটা শিথিল ছিল। এখন কাজের প্রচুর চাপ থাকায় ঈদে লম্বা ছুটির সুযোগ নেই। কিন্তু ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সরকার ঘোষিত ১৪ দিন ও ঈদের ছুটিসহ মোট ১৯-২০ দিনের বন্ধ পেলে কোনো অবস্থাতেই শ্রমিকদের কর্মস্থলে ধরে রাখা সম্ভব হবে না। শ্রমিকরা ছুটে যাবে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের প্রত্যন্ত এলাকায়। যেগুলো করোনার রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত। ফলে এই বিশাল সংখ্যক শ্রমিক জনগোষ্ঠী ওইসব অঞ্চল থেকে কর্মস্থলে ফিরে আসলে কোভিড-১৯ সংক্রমণের মাত্রা আরও বেড়ে যাবার আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া ২০ দিন বন্ধের পর কারখানা খোলার সঙ্গে সঙ্গে জুলাই মাসের বেতন পরিশোধের বিষয়টিও সামনে চলে আসবে। এমতাবস্থায় আমরা মনে করছি আসন্ন ঈদের ছুটি সংক্ষিপ্ত করে দেশের রফতানিমুখী শিল্প-কারখানাগুলো যত দ্রুত সম্ভব ঈদের পরে খুলে দিলে দেশের রফতানি খাত বহুমূখী বিপর্যয়ের আশঙ্কা থেকে রক্ষা পাবে।’
এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত সৈয়দ নজরুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, পোশাক রপ্তানির সমস্যাই শুধু নয়, গার্মেন্টস বন্ধ করে দিলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণও আরও বেড়ে যাবে। কারণ লম্বা ছুটি পেলে গার্মেন্টস শ্রমিকরা ছড়িয়ে পড়বেন গ্রামের বাড়িতে। আর এতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে করোনা আরও বেশি মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।