রোডসকে বিদায়ই করে দিল বিসিবি। অথচ ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ বলেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) একজন ইংলিশকে প্রধান কোচ নিয়োগ দিয়েছিল; কিন্তু তাতে কোনো সুবিধা অর্জন করতে পারেনি বলে বলেই মনে করছে দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থাটি। তাই তো মাশরাফিদের কোচকে আর রাখছে না বিসিবি।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচের পরই কানাঘুষা শুরু হয়েছিল কোচ থাকছেন কি থাকছেন না। অবশেষ সেই কৌতুহলের ইতি টেনেছে ক্রিকেট বোর্ড। সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে রোডসের বিদায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশে ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী। পারস্পরিক চুক্তির মাধ্যমে সম্পর্কের ইতি টানা হয়েছে বলে জানান নিজামউদ্দিন, ‘স্টিভ রোডসের সঙ্গে আমরা একটা পারস্পরিক বোঝাপড়ায় এসেছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি একসঙ্গে কাজ না করার। বিশ্বকাপের পর প্রতিটি বোর্ডই ক্রিকেটার ও কোচদের পারফরম্যান্স পুনর্বিবেচনা করে থাকে। সেদিক থেকে আমরা বসেছিলাম। এগুলো আসলে একতরফা হয় না। দুই পক্ষের সিদ্ধান্ত নিয়েই হয়। কোচ থাকতে পারবে কি পারবে না, এটা কোচের ইচ্ছার যেমন দরকার হয়, আমাদেরও সিদ্ধান্তের দরকার হয়। সেদিক থেকে দুই পক্ষই রাজি হয়েছি। বোর্ড এবং স্টিভ রোডস সমঝোতায় এসেছে আর একসঙ্গে কাজ না করার ব্যাপারে।‘
মূলতঃ স্টিভ রোডসকে কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয়ার সময় যে চুক্তি করা হয়েছিল, সেখানে ধারা ছিল, ‘বিশ্বকাপের পর তার পারফরম্যান্সের চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে পারবে বিসিবি।’ ভাবা হচ্ছে, সেই ধারাতেই বিসিবির সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন স্টিভ রোডসের সাথে কথা বলে আপোস মিমাংসা তথা সমঝোতার মাধ্যমে তার সঙ্গে করা চুক্তি নবায়ন না করে তা বাতিলের কথা জানিয়েছেন।
সিইও নিশ্চয়ই বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের নির্দেশেই জাতীয় দল তথা স্টিভ রোডস ঢাকায় ফিরে আসার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তার সাথে চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন। যদিও বর্তমানে ম্যানচেস্টারে অবস্থানরত বিসিবির ক্রিকেট অপরাশেনন্স কিমিটর চেয়ারম্যান এবং জাতীয় দলের কোচ নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত আকরাম খান সিইও’র এই তাৎক্ষণিক ঘোষণায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
আকরামের কথা, ‘কোচের ব্যাপারে আমরা ভেতরে ভেতরে নেতিবাচকই ছিলাম এবং তাকে রাখা হবে না এটা মোটামুটি নিশ্চিতই ছিল। কারণ, বিশ্বকাপসহ তার পারফরম্যান্সে আমরা সন্তুষ্ট নই। তবে সেটা আলোচনা সাপেক্ষে এবং নতুন কোচ নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করেই তার পর স্টিভ রোডসকে না করে দেয়ার কথা ছিল। আগামী ২২ জুলাই আমিসহ বোর্ডের নীতি নির্ধারক মহলের কর্তারা বসে বিষয়টা চূড়ান্ত করার কথা ছিল। কাজেই আমি ঠিক জানি না সিইও কোন প্রেক্ষিতে এত শিগগিরই কোচকে না করে দিলেন।’
প্রশ্ন হচ্ছে রোডকে বিদায় করে বিসিবি এখন কার হাতে তুলে দেবে জাতীয় দলকে। সামনেই শ্রীলংকা সফর। হাওয়ায় ভাসছে বাংলাদেশের সাবেক কোচ শ্রীলংকার হাথুরুসিংহেকে দায়িত্ব দেয়া হতে পারে। সেটা না হলে স্থানীয় কাউকে; কিন্তু বিসিবির ওই পরিচালক বলেছেন, ‘আপাতত রোডসকে না রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরপর কি হবে তা এখনো চূড়ান্ত নয়।’
রোডসের বিদায় নিশ্চিত। আর অন্যদিকে ঝুলে আছে পেস বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশের ভবিষ্যৎ। বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার সঙ্গেই চুক্তি শেষ হয়ে গিয়েছে ওয়ালশের। তাঁর সঙ্গে চুক্তি বাড়ানো হবে কি না, তা পরবর্তী বোর্ড সভায় চূড়ান্ত হবে। তবে ওয়ালশের চুক্তির মেয়াদ বাড়ার সম্ভাবনা তেমন নেই।
এর মধ্যে এ মাসের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশ ওয়ানডে সিরিজ খেলতে যাবে শ্রীলঙ্কায়। ওই সফরে ভারপ্রাপ্ত কোচের অধীনে খেলবে বাংলাদেশ। সর্বশেষ শ্রীলঙ্কা সফরেও বাংলাদেশ ভারপ্রাপ্ত কোচ নিয়ে গিয়েছিল।
কোচ স্টিভ রোডসের সাথে চুক্তি আছে ২০২০ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত। যে কারণে তাকে রাখা-না রাখার সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়টি স্পর্কাতরই ছিল বিসিবির জন্য। দুই পক্ষের সমঝোতার মাধ্যমে ফয়সাালা হওয়ায় অর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হতে হবে না বিসিবিকে।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ৯ ম্যাচের ৮টি খেলেছে। শ্রীলংকার বিরুদ্ধে ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে বৃষ্টিতে। বাংলাদেশের মিশন শুরু হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে আর শেষ হয়েছে পাকিস্তানের কাছে হেরে। মাঝে বাংলাদেশ জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে। হেরেছে ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার কাছে।