রমজান মাস শুরু হতে বাকি মাত্র আর মাত্র কয়েকদিন। সেই অজুহাতে এরই মধ্যে বেড়ে গেছে চাল, ডাল, পেঁয়াজ, তেল, চিড়াসহ সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম । কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়েছে একেবারে আকাশছোঁয়া। বিশেষ করে ছোলা, খেজুর, চিড়া এবং মসুরের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। এতে বিপাকে পড়েছেন বিশেষ করে সীমিত আয়ের মানুষেরা। তবে কাঁচাবাজারে খানিকটা কমেছে দাম।
শনিবার (১৮ এপ্রিল) নগরীর রেয়াজউদ্দিন বাজার, কাজির দেউড়ি, বক্সির হাট, খাতুনগঞ্জের বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে বস্তা হিসেবে প্রতি বস্তায় চালের দাম বেড়েছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। প্যাকেটপ্রতি ময়দার দাম ৫ থেকে ৭ টাকা বেড়ে হয়েছে ৩৫ থেকে ৩৭ টাকা। রসুন কেজি প্রতি ১২০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। ছোলা কেজিপ্রতি ৬৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। শুকনো মরিচ বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ২৪০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা। সয়াবিন তেল লিটার প্রতি ৯৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১১০ টাকা, পাম তেল কেজিপ্রতি ৬৫ থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৫ টাকা। সাদা চিনি কেজি প্রতি ৬০ টাকা থেকে বেড়ে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর লাল চিনি ৭০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৫ টাকা। ইন্ডিয়ান গুঁড়া হলুদ বিক্রি করছে ১২৫ থেকে বাড়িয়ে ১৫৫ টাকা এবং ১০০ টাকার দেশি হলুদ বিক্রি করছে ১১০ টাকা। কেজিপ্রতি আলুর দাম ১৬ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২০ টাকা।
এছাড়া লাগামহীনভাবে বেড়েছে আদা, পেঁয়াজ, খেজুর, চিড়া এবং মসুরের ডালের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে আদার দাম ১৫০ টাকা থেকে লাফিয়ে ২৫০ টাকায় এসে পৌঁছে গেছে। কেজিপ্রতি ৩৫ টাকার পেঁয়াজ এখন ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। সব ধরনের খেজুরের দাম ও বেড়ে গিয়েছে। বিভিন্ন ধরনের খেজুর প্রতি কেজিতে বেড়েছে ১০০ থেকে ২০০ টাকা। ৫০ কেজির বস্তাপ্রতি চিড়ার দাম ১৮০০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২৭০০ টাকা। কেজি প্রতি ৩৬ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫৪ টাকা।
শনিবার কাজির দেউড়ি বাজারে হাসেম নামের এক ক্রেতা এসেছিলেন বাসার জন্য সপ্তাহের বাজার কেনার জন্য। কিন্তু বাজারের দাম দেখে তিনি অবাক হন। রেগেও যান বিক্রেতার ওপর। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘দিনে দিনে সপ্তাহে সপ্তাহে মাসে মাসে এভাবে বাজারের দাম বাড়ার কারণে আমরা বিপদে পড়ে যাই। বাজারের দাম বাড়লেও আমাদের আয় তো আর বাড়ে না। সামনে রমজান। বাজার একটু বেশি কিনতে হচ্ছে। কয়েকটা পণ্যের দাম বাড়লেও এদিক-ওদিক করে কেনা যায়। কিন্তু সব পণ্যের দাম বেড়ে গেল। রমজানে তো আরও বাড়বে। একে তো এখন বেকার হয়ে বসে আছি। সামনে রোজা। খরচও বেশি। তার মধ্যে বাজারের সব পণ্যের দাম বাড়তি। আমরা অসহায় মানুষেরা কোথায় যাবো। কয়েকদিন পরে তো না খেয়ে মরবো মনে হচ্ছে।’
দাম বাড়ার কারণ হিসেবে বিক্রেতারা বলছেন, করোনা ভাইরাসের কারণেই মূলত সবকিছুর দাম বেড়ে গিয়েছে। আগের চেয়ে বেশি গাড়ি ভাড়া দিয়ে মালামাল আনতে হচ্ছে। বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। ক্রেতাও কমে গেছে। সবমিলিয়ে বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
হামিদুল্লাহ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে আগের মতো পণ্য সরবরাহ হচ্ছে না। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে মানুষকে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। ফলে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে অধিকাংশ পণ্যের দাম বেড়েছে। এখন যোগাযোগ ব্যবস্থাও তেমন ভালো না। বিশেষ করে রমজানকে কেন্দ্র করে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে।
করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজের দাম দফায় দফায় বাড়লেও তুলনামূলক কম দামে পাওয়া যাচ্ছে সবজি। রিয়াজউদ্দিন বাজার, কাজির দেউড়ি বাজারে টমেটো বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৫ টাকা। যা আগে ছিল ১০ টাকা। কেজি প্রতি করলার বিক্রি হচ্ছে ১৩ টাকা যা আগে বিক্রি হতো ২৫ টাকা, কাকরোল ৮০ টাকা থেকে কমে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, বরবটি ২৫ টাকা থেকে কমে বিক্রি হচ্ছে ১৭ টাকা, পটল ৩৩ টাকা থেকে কমে ২২টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে, লাউ ও মিষ্টি কুমড়া ১৫ টাকা থেকে কমে ৭ থেকে ৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, লম্বা লতি ৩৫ টাকা থেকে কমে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে,খাটো লতি ৩০ টাকা থেকে কমে ২২ টাকা, কুমিল্লার মোটা লতি ৩০ টাকা থেকে কমে ২৩ টাকা। লম্বা বেগুন ২০ থেকে কমে হয়েছে ৮ টাকা, দেশি বেগুণ ২০ টাকা থেকে কমে হয়েছে ১০ টাকা এবং শশা ২০ টাকা থেকে কমে ৭ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দাম কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে রিয়াজউদ্দিন বাজারের বিক্রেতা মান্নান বলেন, করোনার কারণে ক্রেতা কমে গেছে বাজারে। চাহিদাও কমে গেছে। তাই বিক্রিও কম হচ্ছে। আগে একদিনে প্রায় ৫ হাজার কেজি সবজি কিনে আনতাম বাজারে বিক্রি করার জন্য। কিন্তু এখন সারা দিনে মিলে বিক্রি হয় ২ হাজার কেজি। তারপরেও থেকেও যায়। বাসি হয়ে যায়, পঁচে যায়। উৎপাদন হিসেবে চাহিদা কমে যাওয়ায় সব জায়গায় এখন কম দামেই বিক্রি হচ্ছে।
সিপি