রোগীভর্তি হাসপাতালে ঢুকে সাংসদ হতবাক, ডাক্তারই হাজির নেই
ক্লাসকক্ষ ছেড়ে শিক্ষার্থীরা ঘুরছিল মাঠ-বারান্দায়
শপথ নেওয়ার পর প্রথম দিনেই এলাকার সরকারি হাসপাতালে গিয়ে হতবাক সংসদ সদস্য নিজেই। চারপাশ অপরিষ্কার, চারদিকে অব্যবস্থাপনা। সকাল সাড়ে ৮টায়ও জরুরি বিভাগে নেই চিকিৎসক, এমনকি হাসপাতালে রোগীর ভিড় থাকলেও ছিলেন না ১২ ডাক্তারের কেউ। সাংসদকে কাছে পেয়ে রোগীরাও মেলে ধরলেন অভিযোগের ফিরিস্তি।
এমন অবস্থা দেখা গেল চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান তার শপথ গ্রহণের পর প্রথম দিনেই ছুটে যান বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এছাড়া তিনি দুটি মাধ্যমিক ও দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও পরিদর্শন করেন।
মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৮টায় হাসপাতালে ঢুকে তিনি জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ছাড়া অন্য কারও উপস্থিতি পাননি। অথচ এই দিন রোস্টার অনুযায়ী ১২ জন চিকিৎসক কর্মরত ছিলেন। এমনকি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শফিউর রহমান মজুমদার নিজেও ছিলেন অনুপস্থিত। তবে ৯টার দিকে একে একে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা হাসপাতালে আসতে থাকেন।
সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান হাসপাতাল পরিদর্শনকালে অপরিষ্কার-অব্যবস্থাপনা দেখে ক্ষুব্ধ ও হতবাক হন। তিনি হাসপাতালের ওয়ার্ডে থাকা অপরিচ্ছন্ন টয়লেট, বেড ও বেডশিট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার নির্দেশনা দেন। এ সময় অনেক রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে উপস্থিত থাকলেও চিকিৎসক ও স্টাফ না থাকায় চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হন। কয়েকজন রোগী সাংসদকে কাছে পেয়ে নিজেদের অভিযোগও তুলে ধরেন। সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান রোগীদের কথা শোনেন এবং যাতে রোগীরা পর্যাপ্ত সেবা পায় সে ব্যবস্থা করবেন বলে জানান।
পরে উপস্থিত চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান বলেন, ‘চিকিৎসকদের আমি সম্মান করি। রোগীদের আপনার সেবা দিলে সেই সম্মান আরও বাড়বে। একটা রোগী খুশি হলে সৃষ্টিকর্তা খুশি হয়। এই হাসপাতালের চিকিৎসকদের মধ্যে যে দলাদলি আছে তার জন্য কোন সাধারণ রোগী যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। আমি কাজ কম করবো। কিন্তু যা করবো তা ভালোভাবেই করবো।’
পরে দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান। সকাল ১০টার দিকে বাঁশখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন। ১০টা ১০ মিনিটে বাঁশখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্লাসকক্ষ ছেড়ে মাঠে ও স্কুল বারান্দায় ঘোরাঘুরি করতে দেখেন। এ সময় সাংসদ শিক্ষার্থীদের ক্লাসকক্ষে পাঠাতে শিক্ষকদের অনুরোধ করার পরেও অনেক শিক্ষার্থী বাইরে থাকায় এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ দেখে হতাশ হন তিনি। ১২টার দিকে উপকূলীয় খানখানাবাদ ইউনিয়নের পূর্ব রায়ছটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষার পরিবেশ দেখে খুশি হন এমপি। তিনি বিদ্যালয়টির ক্লাসকক্ষে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথেও কথা বলেন।
এ সময় সংসদ সদস্য বলেন, ‘আজকে দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করে আমি অত্যন্ত খুশি হয়েছি। দুটি বিদ্যালয়েই শিক্ষার পরিবেশ সন্তোষজনক।’
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রায়ছটা প্রেমাশিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান।
এদিকে বাঁশখালী পৌরসভার বাহারউল্লাহ পাড়ায় অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বসতঘর ও গ্যারেজ পরিদর্শন করেছেন সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান। এসময় তিনি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সাথে কথা বলেন এবং ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে সহযোগিতা করার ঘোষণা দেন।