‘ছোটবেলায় স্কুলে নিয়ে যাওয়ার সময় বাবা বলতেন— মা আমার ডাক্তার হবে, বড় ডাক্তার। আমাদের শিকলবাহায় একটি হাসপাতাল হবে আর সেখানে বিনামূল্যে সবাই সেবা পাবে। তখন থেকেই ইচ্ছে জাগে ডাক্তার হয়ে বাবার স্বপ্নপূরণ করবো।’
বাবার কথা রেখেছেন ডা. ফারহানা মমতাজ রানু। করোনা পরিস্থিতিতেও এলাকার লোকজনকে বিনামূল্যে দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসাসেবা। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা এলাকায় নিজের বাড়িতে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র খুলেছেন। প্রতিদিন ‘বকুল বাংলো’তে শিকলবাহা ইউনিয়ন ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের মানুষ চিকিৎসা নিতে আসছেন। এছাড়া রাত-দিন যে কোনও মুহূর্তে দিচ্ছেন মুঠোফোনের পরামর্শও।
শিকলবাহা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল কালাম চৌধুরী বকুলের একমাত্র কন্যা ডা. ফারহানা মমতাজ রানু। তিনি মাধ্যমিক পাশ করেন চট্টগ্রামের সেন্ট স্কলাস্টিকাস বালিকা স্কুল থেকে। উচ্চ মাধ্যমিক ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ এবং এমবিবিএস পড়েছেন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চট্টগ্রামে। চেম্বারও করেন সেখানে।
ডা. ফারহানার বাবা দীর্ঘদিন অসুস্থতায় ভুগে গত ১৭ জুন বুধবার চট্টগ্রাম নগরীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫৮ বছর বয়সে মারা যান তিনি।
ডা. ফারহানা মমতাজ রানু বললেন, ‘আমার বাবা হচ্ছেন সেই প্রদীপ, যার আলোতে আমি আলোকিত। বাবার স্বপ্ন পূরণে আমার ডাক্তার হওয়া। তিনি সবসময় বলতেন, আমার এলাকার মানুষ হচ্ছে আমার নিঃশ্বাস, আমার অক্সিজেন। আর আমারও আশা ভরসা সবই ছিলো উনাকে নিয়ে। আমার কোনও কিছুই তিনি অপূর্ণ রাখেননি। যখন যা চেয়েছি, পেয়েছি। উনার আত্মবিশ্বাস আর ভালোবাসার সবটুকু জুড়ে ছিলাম আমি। বাবাকে হারিয়ে এখন বুঝছি কী হারিয়ে ফেলছি। বাবার স্বপ্ন যেন হারিয়ে না যায় সেজন্য ছুটে এসেছি নিজ গ্রামে। গ্রামের মানুষদের বাবার মত সেবা করতে চাই। তাদের পাশে দাঁড়াতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘বাবা যখন অসুস্থ হয়ে পড়েন তখন বলতেন, আমাকে নিয়ে চিন্তা করো না, আমি ঠিক হয়ে যাব। কিন্তু বাবাকে বাঁচাতে পারলাম না। কখনো যদি হতাশা আঁকড়ে ধরে, তখন বাবার কথা স্মরণ করি, ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। অদ্ভুত এক শক্তি এসে জড়ো হয় মনের ভেতর। এখানে আসা রোগীদের সঙ্গে নিজের পরিবারের সদস্যদের মতোই মনে হয়। এখন রোগীরাই আমার প্রিয়জন।’
সিপি