রেল শ্রমিক লীগের শীর্ষ ১১ পদ অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীর দখলে, ৪ জন চট্টগ্রামের
সভাপতি-সম্পাদকসহ ৫ জনকে অব্যাহতি
বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদ আঁকড়ে আছে অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীরা। অথচ নিয়ম অনুযায়ী যারা রেলে কর্মরত আছে কেবল মাত্র তারাই এই সংগঠন করতে পারবেন। এছাড়া সংগঠনের বেশ কিছু নেতা তাদের পছন্দের ব্যক্তিদের দিয়ে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ। এতে অনেক জ্যেষ্ঠ নেতা পদ যোগ্য পদ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
মূলত শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের সংগঠনের জন্য বরাদ্দ থাকা ১০ শতাংশ কোটার বিধানকে কাজে লাগিয়ে রেল শ্রমিক লীগে অবসরপ্রাপ্তরা জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু আইনত রেল সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় সেই সুবিধা নেওয়া সুযোগ নেই। এই শ্রমিক লীগ কমিটির ৩৫ সদস্যের মধ্যে ১৩ জন রয়েছে চট্টগ্রামের।
চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি হাইকোর্টের আদেশে রেল শ্রমিক লীগের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচ ব্যক্তিকে সংগঠন ও পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। হাইকোর্টের বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও ইকবাল কবিরের দ্বৈত বেঞ্চ এই আদেশ দেন। সংগঠনের নেতাকর্মীদের হাতে এই রায়ের কপি এসে পৌঁছায় গত ২৫ মে। তবে এর বাইরেও ছয়জন শীর্ষ নেতা রয়েছে সংগঠনে, যারা চাকরি থেকে অবসরে গেছেন।
অব্যাহতি পাওয়া পাঁচ শ্রমিক লীগ নেতা হলেন সভাপতি হুমায়ুন কবির, কার্যকরী সভাপতি শেখ মো. লোকমান হোসেন ও ওয়ালী খান, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান আকন্দ এবং অতিরিক্ত-সাধারণ সম্পাদক গোকুল চক্রবর্তী। এদের মধ্যে শেখ মো. লোকমান হোসেন ও গোকুল চক্রবর্তী পূর্বাঞ্চল চট্টগ্রামে কর্মরত ছিলেন।
এছাড়া আগামী তিন মাসের মধ্যে রেল শ্রমিক লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করারও নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় রেলওয়ের শ্রমিক লীগের কমিটিতে কোনো ধরনের অবসর কোটার সুবিধা নেওয়া যাবে না বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে অব্যাহতিপ্রাপ্তরা ছাড়াও সংগঠনের অপর ছয় নেতা হলেন রেল শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি শুভ্র কান্তি রায় বিজয়, সহ-সভাপতি মো. আমজাদ হোসেন চৌধুরী, মো. শহিদুল ইসলাম ও শওকতউজ্জামান শাহীন; ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান, কার্যনির্বাহী সদস্য জহিরুল ইসলাম। এদের প্রত্যেকেই চাকরি থেকে অবসরে গেছেন। এরমধ্যে শহিদুল ইসলাম ও আবু সুফিয়ান পূর্বাঞ্চল চট্গ্রামে কর্মরত ছিলেন।
জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর হুমায়ুন কবিরকে সভাপতি ও হাবিবুর রহমান আকন্দকে সাধারণ সম্পাদক করে রেল শ্রমিক লীগের ৩৫ সদস্যের কমিটি অনুমোদন করা হয়। এর আগে ২০০৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ওই দুইজনের দখলে ছিল সংগঠনের দুই শীর্ষ পদ। অথচ সভাপতি হুমায়ুন কবির ২০ আগস্ট ২০১৫ সালে, কার্যকরী সভাপতি শেখ লোকমান হোসেন ২ আগস্ট ২০১৮ সালে, কার্যকরী সভাপতি ওয়ালী খান ১৩ অক্টোবর ২০১৮ সালে, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান আখন্দ ১৯ মার্চ ২০১০ সালে এবং অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক গোকুল চক্রবর্তী ১৪ জানুয়ারি ২০২১ সালে চাকরি থেকে অবসর যান।
মামলার বাদি মাসুম বিল্লাহ জানান, রেল শ্রমিক লীগ কমিটির ১১ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী। এছাড়া সভাপতির ভাই, সাধারণ সম্পাদকের ছেলে, ভাগিনাসহ ও কার্যকরী সভাপতির ছেলেকে ওই কমিটিতে পদ দেওয়া হয়েছে।
আরও জানা গেছে, অব্যাহতি পাওয়া সভাপতি হুমায়ুন কবিরের ভাই মোসাদ্দেদ আল ফেছানী যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, হাবিবুর রহমানের ছেলে মো. সাজ্জাদুর রহমান সাংগঠনিক সম্পাদক ও ভাগিনা মো. কামাল হোসেন প্রচার ও প্রকাশনা, শেখ লোকমান হোসেনের ছেলে মো. সাইমুম হোসেন সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পান ওই কমিটিতে। এদের মধ্যে সাইমুম পূর্বাঞ্চল চট্টগ্রামে কর্মরত আছেন।
অব্যাহতি পাওয়া সভাপতি হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবো।’
তবে রেল শ্রমিক লীগ নিয়েও রয়েছে দ্বন্দ্ব। এই কমিটির বাইরেও রেলওয়ের কর্মচারী সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছে আরেকটি শ্রমিক লীগ। নিজেকে সেই কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করেন সিরাজ। কমিটিতে হুমায়ুন কবিরকে সভাপতি করা হলেও তিনি পদত্যাগ করেন। পরে হায়দার আলী ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হলেও মূলত একাই সংগঠন চালান সিরাজ। কিন্তু তিনিও অবসরে গেছেন ২০১৮ সালে।
রেল শ্রমিক লীগ কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে রায়ের কপি এখনও দেখেননি বলে জানান সিরাজুল ইসলাম। আর এই বিষয়ে কোনো মন্তব্যও করবেন না বলে জানান তিনি।
ডিজে