রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলীয় ট্রেনিং একাডেমি (আরটিএ) প্রধানের (রেক্টর) গাড়ি ব্যবহার করেন ওই একাডেমির আলোচিত উচ্চমান সহকারী মেহরুন আক্তার।
অভিযোগ রয়েছে, আরটিএ’র সিনিয়র ট্রেনিং অফিসার আবুল কাসেমের যোগসাজশে বন্ধের দিনে নিয়মিতই গাড়িটি নিয়ে বের হয়ে পড়েন এই কর্মচারী।
রেক্টরের মত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার গাড়ি একজন কর্মচারীর ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের বিষয়টি এতদিন কানাঘুঁষায় সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এবার রেক্টরের গাড়ি নিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়তে হল মেহরুন আক্তারকে।
শুধু তাই নয়, নিরাপত্তারক্ষীর সামনে রেক্টরের গাড়ি ফেলেই সটকে পড়েন মেহেরুন ও ওই গাড়ির চালক।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, হালিশহর রেলওয়ে আবাসিক এলাকার ভেতর দিয়েই যেতে হয় আরটিএ’তে। সোমবার (২০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯ টায় আরটিএ’তে রেক্টরের গাড়ি নিয়ে প্রবেশের সময় আবাসিকের গেটে কর্তব্যরত নিরাপত্তারক্ষী তাদের দাঁড় করায়। এসময় ঢাকা মেট্রো- গ ৩৩-২৪৪৭ নম্বর প্লেট যুক্ত ওই গাড়ীতে বসা ছিলেন মেহেরুন আক্তার।
করোনা ভাইরাসের কারণে আবাসিকের বাসিন্দারা নিজস্ব অর্থায়নে অস্থায়ী গেট নির্মাণ করে এবং দারোয়ান নিয়োগ দেন। ওই এলাকায় গাড়ি প্রবেশেও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। আবাসিকের গেট দিয়ে গাড়ি প্রবেশ করতে চাইলে দারোয়ান গাড়িটি কোথায় যাবে তা জানতে চান। সঙ্গে সঙ্গেই গাড়ি থেকে নেমে চালক দারোয়ানের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি শুরু করে দেয় এবং গেট খুলে দিতে বলে। এ সময় গাড়িতে বসা মেহেরুনও দারোয়ানকে গালিগালাজ শুরু করে। আওয়াজ শুনে আবাসিকের লোকজন ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। রেক্টরের গাড়িতে মেহেরুনকে দেখে কিছু কর্মচারী প্রতিবাদও করে। একপর্যায়ে গাড়িটি ওখানে রেখেই সটকে পড়ে মেহেরুন আক্তার ও গাড়ি চালক।
এ বিষয়ে আরটিএ নিরাপত্তারক্ষী ওসমান গনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বহিরাগত লোকজন ও গাড়ি নিয়ন্ত্রণে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এক ম্যাডাম ও ড্রাইভার এসে গেইট খুলতে বললে আমি তাদের পরিচয় জানতে চাই। কোন কিছু না বলেই গাড়ির চালক নেমে এসে আমার সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু করে। এ সময় গাড়িতে থাকা ম্যাডামও নেমে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। পরে এলাকাবাসী জড়ো হতে থাকলে গাড়ি রেখেই চালক ও ম্যাডাম সটকে পরে।’
নিরাপত্তা রক্ষী ওসমান গণি আরও বলেন, ‘এলাকাবাসী গাড়িটি ভাঙচুর চালানোর জন্য উদ্যত হয়। একপর্যায়ে একাডেমিতে কর্মরত কয়েকজন চিনতে পারে গাড়িটি রেক্টর স্যারের। ঘটনাস্থলে উপস্থিত কর্মচারীরা এ সময় গাড়িটি নিজেদের হেফাজতে নিয়ে নেয়। পরে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তারা অবহিত করে।’
সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় গাড়ি নিয়ে আরটিএ’তে প্রবেশ করতে চাইলে কোন সময় রেক্টরের গাড়িটি নিয়ে মেহেরুন আক্তার ও চালক বের হয়েছিলেন সে বিষয়েও উঠেছে প্রশ্ন। কারণ রেক্টরের গাড়িটি আরটিএ’র ভেতরেই থাকে।
আরটিএ কর্মচারীদের অভিযোগ, আরটিএ’র যাবতীয় দায়িত্বের পাশাপাশি পরিবহন সংক্রান্ত দায়-দায়িত্বও পালন করেন সিনিয়র ট্রেনিং অফিসার আবুল কাসেম। এ গাড়ি বের করতে হলে আবুল কাসেমের অনুমতির প্রয়োজন রয়েছে। মেহেরুনের সঙ্গে সখ্যতা থাকায় আবুল কাশেম রেক্টরের গাড়ি ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছেন বলেও অভিযোগ কর্মচারীদের।
এ বিষয়ে জানতে আবুল কাসেমের মোবাইলে কল দিলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আরটিএ উচ্চমান সহকারী মেহরুন আক্তার বলেন, ‘আমি নিরাপত্তারক্ষীকে গালাগাল করিনি।’ রেক্টরের গাড়ি ব্যবহারের অনুমতি নেওয়া হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তিনি মোবাইল সংযোগ কেটে দেন।
এ বিষয়ে আরটিএ’র রেক্টর সর্দার শাহাদাৎ আলী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি কাউকে আমার গাড়ি ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করিনি। আমাকে না জানিয়ে আমার গাড়ি ব্যবহার করাও অন্যায়। আমি বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিচ্ছি।’
আরটিএ’র একাধিক কর্মচারীর অভিযোগ, একাডেমির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যাতায়াতের জন্য মাইক্রোবাস ও মিনিবাস রয়েছে। উচ্চমান সহকারী মেহেরুন আক্তার মিনিবাসের ষ্টাফ। কিন্তু তিনি ব্যবহার করেন মাইক্রোবাস। উচ্চমান সহকারী হলেও তিনি ব্যবহার করেন সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তার পরিচয়।
এর আগে ২০০৪ সালে নিয়োগপত্র হাতে পেয়ে সাত বছর পর ২০১১ সালে নজিরবিহীনভাবে রেলওয়েতে যোগদান করেন মেহেরুন আক্তার। রেলওয়ের বিধির তোয়াক্কা না করেই হালিশহর ট্রেনিং একাডেমিতে প্রধান সহকারী হিসেবে তাকে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। গত ৩ ফেব্রুয়ারী মেহেরুন আক্তারের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে ‘রেলে অবাক কাণ্ড— নিয়োগ ২০০৪ সালে, যোগদান ২০১১’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে চট্টগ্রাম প্রতিদিন।
এমএফও