রেলে ‘শীতের পোশাক’ নিয়ে তিন বছর ধরে চলছে নাটকের পর নাটক

কখনও নগদ টাকার খেলা, কখনও চাঁদা চেয়ে নেতাদের বাগড়া

0

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে এবার পোশাক নিয়ে চলছে নয়ছয়। রেলের মেডিকেল স্টাফদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া পোশাকের বদলে রহস্যজনক কারণে কখনও চলছে নগদ টাকা দেওয়ার চেষ্টা, কখনও আবার চাঁদার ভাগ চেয়ে চলছে শ্রমিক নেতাদের বাধা। ফলে ২০১৮ সালে দরপত্র আহ্বান করেও ২২৩ জন মেডিকেল স্টাফের হাতে তুলে দেওয়া যাচ্ছে না শীতের পোশাক।

জানা গেছে, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ২২৩ জন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর শীতের পোশাকের জন্য ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ টাকার মধ্যে ১৭৩ জন পুরুষের জন্য ১ পিস করে ভি-গলার সোয়েটার, ১ পিস করে ফুলহাতা শার্ট, ২ জোড়া করে জুতা ও মোজা এবং একটি করে ছাতা ও ৪৮ জন মহিলার জন্য ১ পিস করে শাল বা সোয়েটার, ১ পিস করে ফুল হাতা গরম গেঞ্জি, ২ জোড়া করে জুতা অথবা সেন্ডেল এবং মোজা ও একটি করে ছাতা কেনার কথা ছিল।

কিন্তু এর প্রায় তিন বছর চলে গেলেও ওই কর্মীদের হাতে তুলে দেওয়া যায়নি তাদের পোশাক। চলতি বছরের ২৯ জুন ২২৩ জন কর্মীর প্রত্যেককে ৩ হাজার ৫০০ টাকা করে দিয়ে বিদায়ের চেষ্টা করলেও তারা নগদ টাকা নিতে রাজি হননি। তারা পোশাক চেয়ে আন্দোলন করলে শেষপর্যন্ত কর্মীদের দাবি মেনে নেয় রেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

s alam president – mobile

তাদের দাবির মুখে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ৮ জুলাইয়ের মধ্যে পোশাকের মাপ দেওয়া ও অনান্য প্রাপ্য কর্মচারীদের বুঝিয়ে দিতে ঠিকাদারকে নির্দেশ দেন ভারপ্রাপ্ত ডিএমও। সে অনুযায়ী সেনিটারি বিভাগের ৯৬ জন কর্মচারী মাপ দিতে এলে বাধ সাধেন রেলশ্রমিক লীগের মিজানুর রহমান, হারুন, রাজুসহ কয়েকজন নেতা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ঠিকাদার চাঁদা না দেওয়ার কারণে শ্রমিকদের ভুল তথ্য দিয়ে আন্দোলন করানোর চেষ্টা করেন নেতারা। নেতারা শ্রমিকদের জানান, প্রত্যেকের জন্য ৯ হাজার ৩০০ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অথচ বাস্তবে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৫ হাজার ৩৮১ টাকা। শনিবার (৩ জুলাই) রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল সিআরবি সেনিটারি বিভাগে ঠিকাদার দর্জিসহ পোশাকের জন্য মাপ নেওয়া শুরু করলে বাধা দেন এসব নেতা।

বাধা দেওয়ার সত্যতা স্বীকার করে হাসপাতালের সেনিটারি ইন্সপেক্টর দীলিপ বলেন, ৯৬ জন কর্মী পোশাকের মাপ দিতে এসেছিল। কিন্তু বাধার মুখে তারা মাপ দেওয়া ছাড়াই ফিরে যায়।

Yakub Group

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মাথাপিছু ৫ হাজার ৩৮১ টাকা করে শ্রমিকদের জন্য পোশাক ক্রয় বাবদ বরাদ্দ দেয় মন্ত্রণালয়। কিন্তু শুরুতে শ্রমিকদের সাড়ে ৩ হাজার টাকা নগদে দিয়ে বিদায়ের চেষ্টা করা হয়। হিসাব বলছে, শ্রমিকদের ৩ হাজার ৫০০ করে (৩৫০০×২২৩) দিলে প্রয়োজন মোট ৭ লাখ ৮০ হাজার ৫০০ টাকা। সরকারি ভ্যাট ১৫%, ট্যাক্স ৩%, ১৮ পার্সেন্ট হিসাব করলে ২ লাখ ৯ হাজার টাকা হয়। সবমিলিয়ে ৯ লাখ ৮৯ হাজার ৫০০ খরচ হওয়ার কথা। কিন্তু বরাদ্দ আছে ১২ লাখ টাকা।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অর্ক এন্টারপ্রাইজের প্রতিনিধি সুব্রত চক্রবর্তী শুভর কাছে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি উল্টো প্রশ্ন করেন, ‘১২ লাখ টাকা পুঁজি দিয়ে ৬ মাস বিলের জন্য বসে থেকে একজন ঠিকাদারের ১ লাখ টাকা লাভ করা কি পুকুর চুরি?’

তিনি বলেন, ‘শ্রমিকরা ৩ মাস বেতনভাতা না পেয়ে মানববেতর জীবনযাপন করছিল। চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের অনুরোধে পোশাকের পরিবর্তে টাকা দিতে চেয়েছিলাম। মানবিক অনুরোধ রক্ষা করা অপরাধ হলে আমি অপরাধী। আন্দোলনকে সম্মান দিয়েছি। পোশাক দেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছে সেটাই দিচ্ছি। তবে কোন চাঁদা দিয়ে ব্যবসা করতে রাজি নই।’

সুব্রত চক্রবর্তী বলেন, ‘গতবার বরাদ্দে ২০ লাখ টাকা দিলেও এবার বরাদ্দ ১২ লাখ টাকা। গতবার ঠিকাদার টাকা দিলে অপরাধ হয়নি। বিপদে সাহায্য করা আমার অপরাধ?’

কে চাঁদা দাবি করে— এমন প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, ‘খোঁজ নিলে দেখতে পারবেন তারা কারা।’

এ ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় কর্মকর্তা (মেডিকেল) চিন্ময় বিশ্বাসের মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

অভিযোগের বিষয়ে রেল শ্রমিক লীগ নেতা মিজানুর রহমানকে (স্টুয়ার্ড) প্রশ্ন করা হলে তিনি চাঁদার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা তাদের অধিকার নিয়ে আন্দোলন করলে আমাদের কী করার আছে?’

কেএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!