রেলে ভুয়া গেটপাসে পাচার হচ্ছে মালামাল, জড়িত আরএনবির লোকজনই

ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা

চট্টগ্রাম রেলওয়ে ওয়ার্কসপ থেকে ভুয়া গেটপাস ইস্যু করে মালামাল পাচারের ঘটনা বাড়ছে। রেলের একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে এসব ঘটনা ঘটছে। ফলে সরকারি সম্পত্তি আত্মসাতকারীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। ৫ দিনের মধ্যে এরকম দুটি ঘটনা ঘটলেও তা প্রচারের আড়ালেই রয়ে যায়। তবে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য।

গত সোমবার (৫ জানুয়ারি) এরকম একটি ঘটনায় রেলের নিরাপত্তা বাহিনীর চিফ ইন্সপেক্টরের হাতে পাচারকৃত মালামালসহ আটক হন ৪ জন। তবে ঘটনা ধামাচাপা দিতে আটক হওয়াদের বিষয়ে কোনো তথ্যই প্রকাশ করেনি রেল কর্তৃপক্ষ। এর আগেও ১ জানুয়ারি রাত ৮টা ২০ মিনিট (জিডি নং ৩৩০) ৫০টি টিন বের করে নেওয়ার প্রমাণ মিলেছে।

জানা যায়, ৫ জানুয়ারি খুলশী থানার পাহাড়তলী রেলওয়ে ওয়ার্কসপ থেকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সিআই রেদোয়ানুর রহমান ১৬০ পিস টিন পাচারের চেস্টা করেন। এ সময় খবর পেয়ে সেখানে উপস্থিত হন নিরাপত্তা বাহিনীর (গোয়েন্দা বিভাগ) চিফ ইন্সপেক্টর সিআই সালাউদ্দিন ও সিআই সালামত উল্লাহ। তাঁরা টিন পাচারকালে গাড়ির ড্রাইভারসহ ৪জনকে আটক করেন। আটকের পর ওই ৪ জনকে গোপনস্থানে রেখে দেন নিরাপত্তা বাহিনী।

আটককৃতরা চট্টগ্রাম রেল স্টেশন দিয়ে ভূয়া গেটপাস ইস্যু করে মালামাল বের করে পাচার করছিল। তবে ঘটনাকে বৈধ করতে একদিনের মাথায় পাল্টে ফেলা হয় ইস্যুকৃত গেটপাস। পাহাড়তলী নিরাপত্তা বাহিনীর সিআই রেদোয়ানুর রহমান ও বিভাগীয় প্রকৌশলী (২) জোবায়ের (এসএসএই) এর যোগসাজশে এসব মালামাল পাচার করা হচ্ছিল বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।

সূত্রমতে, রেলওয়ের যে কোন অপ্রয়োজনীয় টিন বা স্লিপার নিতে হলে নির্ধারিত টাকা জমা দিয়ে মেমো নিয়ে তবেই পাহাড়তলী পুলিশ বিট পুরাতন সেল ডিপো হতে মালামাল নিতে হয়। কিন্তু রেলের সম্পূর্ণ নিয়ম ভঙ্গ করে বিভাগীয় প্রকৌশলী (২) অফিস সহকারী পরিচালক জোবায়ের রেলওয়ে কারখানা শাখা ওয়ার্কসপ হতে কোন অনুমতি ছাড়া ভারী ১৬০ পিস টিন ৭ জনের নামে স্লিপ দিয়ে বরাদ্দ দেন। যা তার ক্ষমতার এখতিয়ার বহির্ভুত।
মালামাল স্লিপে প্রথম নাম ছিল পাহাড়তলী চৌকি ও গেটের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিআই রেদোয়ানুর রহমানের। তার নামে বরাদ্দ দেয়া হয় ২০টি টিন। বাকি যে ৬ জনের নাম জমা দেয়া হয় তারা হলো, এনামুল হোসেন (সিপাহি ৩০টি), ইকবাল হোসেন (খালাসী ৩০টি), তারেক ( খালাসী ৩০টি), মো. মহসিন (টিআই ২০টি), আমান উল্লাহ (সময় রক্ষক ২০টি) ও রফিকুল ইসলাম (প্রধান সময় রক্ষক ১০টি)।

রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (গোয়েন্দা বিভাগ) চিফ ইন্সপেক্টর সালাউদ্দিন সোমবার রাত ১০টায় বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ১৬০ পিস ভারী টিন পাচারকালে আটক করা হয়। এসময় বৈধ কোন কাগজ কেউ দেখাতে পারেনি। বিভাগীয় প্রকৌশলীর অফিস সহকারী পরিচালক জোবায়েরের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি চুপ থেকে প্রতিবেদককে অনৈতিক প্রস্তাব দেন।

জেনারেল শাখার চিফ ইন্সপেক্টর (সিআই) সালামত উল্লাহ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, তারা গোয়েন্দা বিভাগকে সহায়তা করছেন। ৬ জানুয়ারি তদন্তের মাধ্যমে মালামাল পাচারের বিষয়টি বের হবে।

তবে তদন্তের আগেই ছিঁড়ে ফেলা হয় গেট পাস, যা চট্টগ্রাম প্রতিদিন সংগ্রহ করেছে।

বিভাগীয় প্রকৌশলী (২) আহসান হাবিবের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তার অধীনস্হ এসএসএই’কে কোন মালামাল কাউকে দেওয়ার জন্য লিখিত বা মৌখিক আদেশ দেননি বলে জানান। তবে নির্ভরযোগ্য সূত্রের দাবি রেলওয়ের আরএনবি এবং প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান মিলেই এ পাচার কাজ সিআই রেদোয়ানুর রহমান ও এসএসএই জোবায়েরের মাধ্যমে পরিচালনা করছিল।

কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!