রেলের ডিপোতে রহস্যের ‘আগুন’ নিয়ে প্রশ্নের ডালপালা (ভিডিও)

তদন্তে অস্বাভাবিক ধীরগতি

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পাহাড়তলী সেল ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড তদন্তে ৩ সদস্যের কমিটিকে সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হলেও এখনও জমা হয়নি সেই তদন্ত রিপোর্ট। এদিকে সংশ্লিষ্টদের দাবি, এটি নিছক অগ্নিকাণ্ড নয়, পরিকল্পিতভাবেই অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এছাড়াও প্রতিবেদকের অনুসন্ধানেও এ অগ্নিকাণ্ড নিয়ে কিছু অসামঞ্জস্যপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। অগ্নিকাণ্ডের দিন ডিপোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. ইউনুস সিগারেট থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে দাবি করলেও দমকল বাহিনী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, ‘এ আগুন মানবসৃষ্ট’।

গত ১০ মার্চ পাহাড়তলী আকবরশাহ রেলওয়ে সেল ডিপোতে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুনে প্রায় ৩ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১০ মার্চ দুপুর ১২টার কিছুক্ষণ পরেই রেলের স্ক্র্যাপ ডিপোতে পরিত্যক্ত চেয়ার, বিটুমিন ড্রাম, ফিল্টার প্লাস্টিক ফাইবার জমা করে রাখার স্থানে হঠাৎ আগুন লাগে। ঘটনার ৩০ মিনিট আগে সহকারী প্রকৌশলী মো. ইউনুসসহ অন্যান্য কর্মচারীরা অফিস ত্যাগ করেন। রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) তিনজন নিরাপত্তাকর্মী ও সিসি ক্যামেরা থাকলেও আগুনের উৎস খুঁজে না পাওয়া, নিরাপত্তা কর্মীদের অসংগতিপূর্ণ তথ্যে ঘটনা নিয়ে এরই মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের পর রেলওয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থলে এসে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক রেল কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রকৃত অর্থে আগুন লাগার মতো ঘটনা ঘটেনি, বরং আগুন লাগানো হয়েছে ইচ্ছেকৃতভাবে।’ এদিকে দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী মো. ইউনুস বলেন, ‘সিগারেটের আগুন থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।’

বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী চট্টগ্রাম প্রতিদিনের প্রতিবেদককে জানান, ৯ মার্চ থেকে ১৬টি সিসি ক্যামেরা ছিল অকেজো। ঘটনার ৩০ মিনিট আগে কর্মকর্তারা কেন অফিস ত্যাগ করলেন— এ নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের দাবি, এ অগ্নিকাণ্ড পূর্ব পরিকল্পিত। তারা এও বলছেন, সিসিটিভি যে নষ্ট তা প্রমাণ করতে কম্পিউটার, বক্স ও লাইন আগেই বিচ্ছিন্ন করে টেবিলের ওপর রাখা ছিল। আগুন লাগার স্থান ও অফিসের দূরত্ব অনেকটাই কাছে। সিসিটিভি মেরামতের চেষ্টা না করে সেটি বিচ্ছিন্ন করা ছাড়াও অগ্নিকাণ্ডের পর ১৭ টন লোহার ঘাটতিসহ বিভিন্ন তথ্য রহস্যকে আরও ঘনীভূত করেছে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে অস্বাভাবিক ধীরগতি নিয়েও তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন।

আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিস ইনচার্জ কবির আহমেদ প্রায় ৩ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি ও ১০ লাখ টাকার সম্পদ রক্ষার কথা জানিয়ে বলেন, ‘আসলে সিগারেটের আগুন থেকে এ ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।’

এ বিষয়ে রেলওয়ের প্রধান সরঞ্জাম কর্মকর্তা ফরিদ আহমেদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে সাতদিনের মধ্যে রির্পোট দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত রিপোর্টের ধীরগতির বিষয়টি খোঁজ নেব।’

উল্লেখ্য, অগ্নিকাণ্ডের সংবাদে ঘটনাস্থলে আসেন (সিসিএস) প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা রুহুল কাদের আজাদ, অতিরিক্ত প্রধান সরঞ্জাম কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ওসি রেজওয়ানুর রহমান।

এসএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!