রেলের জায়গা দখলে নিয়ে এছাক ব্রাদার্সের পার্কিং বাণিজ্য

রেলের জায়গা দখল ও বন্দরের বাইপাস টোল রোডের দু’পাশে অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিং করে বাণিজ্য করছে বেসরকারি কনটেইনার ইয়ার্ড এছাক ব্রাদার্স লিমিটেড। এ সড়কে একদিকে চলছে সরকারি জায়গায় দখলের মহোৎসব অন্যদিকে সড়কে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, গ্যারেজ ও অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ— এতে সড়ক সংকুচিত হয়ে বাড়ছে দুর্ঘটনা।

অভিযোগ আছে, অতি প্রয়োজনীয় চট্টগ্রাম বন্দরের বাইপাস টোল রোডে প্রতিদিন জেলা-উপজেলা ও বন্দর থেকে আসা শত শত পণ্যবাহী কাভার্ডভ্যান, লরি ও ট্রেইলার ও ট্রাক পণ্যগুলো লোড-আনলোড করতে এছাক ডিপোতে ঢুকে। এতে ওই ডিপোর অতিরিক্ত গাড়ির চাপ থাকায় সড়কের দু’পাশে নৈমিত্তিক যানজট লেগে থাকে। প্রায় এ এলাকায় দুর্ঘটনাও হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বন্দর পোর্ট সংলগ্ন এছাক ব্রাদার্স ইয়ার্ডে ঢুকতে হাতের বামপাশে রেলের জায়গায় গড়ে তুলেছে বিশাল কাভার্ডভ্যান রাখার গাড়ি পার্কিং। হাতের বামপাশে রয়েছে রেলক্রসিং ঘেঁষে ২টি নামবিহীন ট্রেইলার ও কাভার্ডভ্যান রাখার গাড়ির গ্যারেজ। তার বিপরীত পাশে রয়েছে ওসমান নামের ব্যবসায়ীর একটি গ্যারেজ। তার কনস্ট্রাকশন নির্মাণের স্থাপনার স্তুপও রয়েছে তার গাড়ি পার্কিং। টোল রোডে বাইপাসের দু’পাশে রয়েছে এছাক ডিপোর ভারী যানবাহনের সারি সারি কাভার্ডভ্যানের পার্কিং ব্যবস্থা।

এদিকে টোল রোডে রেলের জায়গা দখল করে গাড়ি পার্কিং করার বিষয়ে ব্যবসায়ী ওসমান বলেন, ‘রেলের জায়গাটি ইতিপূর্বে রেল থেকে আমার ইজারা নেওয়া ছিল। এখন ইজারার মেয়াদ নেই। সরকার যদি আবার ইজারা দেয় তাহলে পুনরায় নেব। ভাই কি করব, দীর্ঘদিনের ব্যবসা ফেলে তো আর যাওয়া যায় না।’

স্থানীয়রা জানায়, এছাক ডিপো নিয়ম ভঙ্গ করে অতিরিক্ত ভারী যানবাহন ও রেলের ভূমি দখল করে অবৈধ স্থাপনা করায় যানজট লেগে থাকে। এতে দুর্ঘটনা ঘটছে। গত কয়েক বছরের মধ্যে বাইপাস রোডে সড়ক ঘেঁষে বেশ কিছু জায়গা সরকার ইজারা দেওয়ায় সড়কটি সংকুচিত হয়। এতে প্রচুর গাড়ির চাপ বেড়ে যায়।

Railway-grab2
রেলের জায়গা দখল করে গ্যারেজ

স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিউল আলম বলেন, ‘টোল রোডে যানজটের অন্যতম কারণ হলো এছাক ব্রাদার্স ডিপোর অতিরিক্ত গাড়ির চাপ, রেলের জায়াগা দখলের করে যত্রতত্র পার্কিং ও বন্দরের ইয়ার্ডের গাড়িগুলো একসঙ্গে আসায় মূলত এই সড়কে অতিরিক্ত যানজট হয়। সড়কে অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিং করার কারণে এলাকার কিছু চাঁদাবাজ এসব গাড়িগুলোর কাছ থেকে চাঁদা নিচ্ছে। পরিবহন শ্রমিকরা চাঁদা না দিলে বাইপাস সড়কে প্রায়ই অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এছাক ডিপোর গেট সংলগ্ন চতুরমুখী গাড়ি চলাচলের কারণে প্রায় দুর্ঘটনা ঘটে বাইপাসে। যানজট নিরসন নিয়ে যানজট প্রতিরোধ কমিটি ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মহোদয়ে বেশ কয়েকবার অবগত করা হয়।আশা করছি এই সমস্যা সমাধানের একটা পথ বের হবে।’

এ প্রসঙ্গে এছাক ব্রাদার্স লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার ফকরুল আকবর বলেন, ‘টোল রোড বাইপাস সড়কের থাকা পার্কিং করা কার্ভাডভ্যানগুলো ডিপোর না। ভারী যানগুলো বিভিন্ন ফ্যাক্টরি ও মানুষের পণ্যবাহী গাড়ি।’

রেলের জায়গা দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে পাশ কাটিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের গাড়ির পার্কিং ডিপোর পাশে ব্রিজের নিচে।’

বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ইশরাত রেজা বলেন, ‘রেলের জায়গা সরকারি সম্পত্তি।ইতিমধ্যে রেলওয়ের বেশ কয়েকটা স্থানে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। বন্দর এলাকায় রেলের লাইনের পাশে অবৈধ স্থাপনা ও যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং—এ মাসেই মধ্যে জায়গা উদ্ধারের অভিযান পরিচালনা করা হবে।’

প্রসংগত, চলতি বছরের ১৮ অক্টোবর বন্দর টোল রোডে কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় পুলিশ সার্জেন্ট বকশি মোহাম্মদ আবদুল্লাহ (২৮) নিহত হয়। এর আগে ২৭ জুলাই একই এলাকায় মো. ইফতেখার (২৭) নামের এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়। ২০১৮ সালের ১ মার্চ বাইপাস টোল রোডে রাতে চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সোলায়মান আলম শেঠের পুত্র উমায়ের আলম শেঠের বেপরোয়া গতির প্রাইভেট কারের ধাক্কায় মো. মানিক (২৫) নামের ভ্যান চালক নিহত হয়। ২০১৮ সালের ১৯ নভেম্বর পুরনো টোল রোডে পাশে পোর্ট মার্কেটের এছাক ডিপো সংলগ্ন এলাকায় টমটমের ধাক্কায় বেসরকারি ঘাসফুল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিইসি পরীক্ষার্থী সুমনা আকতার (১১) নিহত হয়।

এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!