রেজিস্ট্রার পদে নাটকীয়তার অবসান হলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে

এক মাস ১৪ দিন পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার পদ নিয়ে নাটকীয়তার অবসান হলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক রেজিস্ট্রার কেএম নুর আহমদকে পুনরায় এ পদে নিয়োগ দিলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাকে রেজিস্ট্রারের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

সোমবার রাতে বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার।

তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক রেজিস্ট্রার কে এম নুর আহমদকে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত তিনি রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করবেন।’

এর আগে কাউন্সিল শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার পদ থেকে ২০২০ সালের ৩০ জুনে অবসরে যাওয়া কেএম নুর আহমদকে ২০২২ সালের ৬ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুনরায় কাউন্সিল শাখার প্রধান হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়।

২০১৮ সালের ৩ এপ্রিল থেকে ২০২০ সালের ২৯ জুন পর্যন্ত তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করেছেন।

জানা গেছে, নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার পদে নিযুক্ত সমাজতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর মনিরুল হাসানের উপর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বড় একটি অংশ ক্ষুব্ধ ছিল। রেজিস্ট্রার পদে থাকাকালীন শিক্ষকদের পদোন্নতিতে স্বেচ্ছাচারীতা ও জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের মত গুরুতর অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে।

বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রেজিস্ট্রার পদে বসে মনিরুল হাসানের এমন আচরণের ফলে শিক্ষক কমিউনিটি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যকে ‘ভুল’ বুঝতে শুরু করে। সমাজবিজ্ঞান অনুষদভুক্ত নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষকের ‘প্ররোচনায়’ মনিরুল হাসান শিক্ষকদের পদোন্নতি আটকে রাখাসহ বিশ্ববিদ্যালয়কে নানামুখী সংকটে ফেলে দেয় বলেও অভিযোগ উঠে। মনিরুল হাসান একটি ‘সিন্ডিকেট’কে বিশেষ সুবিধা দিতে তৎপর ছিলেন বিধায় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের ভাবমূর্তিও ক্ষুন্ন হয় বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।

পরবর্তীতে কর্মকর্তা, কর্মচারীদের সঙ্গেও অপেশাদার আচরণ করার অভিযোগ উঠলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকেও মনিরুল হাসানের উপর নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়।

একপর্যায়ে শীতকালীন ছুটি শুরু হওয়ার আগেই গত বছরের ডিসেম্বরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা সমিতি মনিরুল হাসানের পদত্যাগের একদফা দাবিতে আন্দোলনে নামে। কিন্তু তবুও রেজিস্ট্রার পদে থাকতে চাওয়া শিক্ষক মনিরুল হাসান পদত্যাগ না করে গত ১ জানুয়ারি প্রথম দফায় পাঁচ দিনের ছুটিতে যান। কিন্তু পাঁচদিনের ছুটিতে গেলেও কর্মকর্তাদের অনড় অবস্থানের কারণে তিনি এই পদে আর যোগ দেওয়ার সুযোগ পাননি প্রায় দেড় মাস ধরে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এলেও তিনি নিজ বিভাগেই সময় কাটিয়েছেন।

এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান, মাইক্রোবায়োলজি ও কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের একজন অধ্যাপক মনিরুল হাসানকে পুনরায় ওই পদে ফেরাতে জোর তৎপরতা চালায়। তারা অফিসার সমিতিকে ‘ম্যানেজ’ করতেও একের পর এক কৌশলও প্রয়োগ করতে থাকে। মনিরুল হাসানকে রেজিস্ট্রার পদে রেখে দিতে গোঁ ধরা ওই তিন শিক্ষকের চাপের কারণে দেড় মাস পর্যন্ত কোনো রেজিস্ট্রার পদায়ন কর‍তে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ডেপু রেজিস্ট্রার মাহবুব হারুণকে এই দেড় মাস রেজিস্ট্রারের রুটিন দায়িত্ব পালন করতে কয়েক দফায় চিঠি দেওয়া হয়।

শেষমেশ ১৩ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের ক্ষমতা বলে কাউন্সিল শাখায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত সাবেক রেজিস্ট্রার কেএম নুর আহমদকেই ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার পদে পুনরায় নিয়োগ দেওয়া হলো।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm