প্রবাদ আছে ’অতি লোভে তাঁতী নষ্ট’। লাভের আশায় ফাঁদে পড়ে আসল টাকাটাও হারিয়ে যাচ্ছে অনেকের।
রূপসা মাল্টিপারপাসের পাতানো ফাঁদে পড়ে লভ্যাংশ তো দূরের কথা, জামানতের আসল টাকাটা পাওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে ২ লাখ গ্রাহক ও তাদের প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা।
এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিজন গ্রাহক জামানত রেখেছে ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা। প্রতিবেদকের অনুসন্ধান ও গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকাল ৮ টা থেকে নগরের ইপিজেড থানার চৌধুরী মার্কেট দ্বিতীয় তলায় রূপসা মাল্টিপারপাস নামের প্রতিষ্ঠানে গার্মেন্টস শ্রমিক ছাড়াও বিভিন্ন স্তরের লোক কর্মস্থলে না গিয়ে জামানতের টাকা ফেরত নিতে ভীড় জমায়। ইপিজেড থানার পরিদর্শক ওসমান গণির নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা গ্রাহকদের টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দিতে দেখা যায়।
শুধু তাই নয়, দ্রুত সমিতির স্থান থেকে না সরলে লাঠিচার্জ করার হুমকি দেন ইপিজেড থানার ওই পরিদর্শক। দুপুর ২টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সেখানে বেশিরভাগ গ্রাহক চৌধুরী মার্কেট ও সেখানকার ভিআইপি রোডের পাশে অবস্থান করছিল।
গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেশির ভাগ গ্রাহক আর প্রতিষ্ঠানে জামানত রাখতে চান না। তারা সকল ডিপিএস, এককালীন এফডিআর ও বীমার মূল টাকা ফেরত চান। গত ১৩ বছর ধরে লাভের টাকা উঠাতে গেলে নানা প্রলোভন দেখিয়ে সেই টাকা আর উঠাতে দেয় না তারা। তারা বলেন, আজকের মধ্যে আমাদের সকল টাকা ফেরত চাই। না হয় সেখান থেকে বাসা-বাড়ি না ফেরার সিদ্ধান্তে অটল সকল গ্রাহকরা।
গ্রাহকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এমডি জাকির হোসেন প্রতিষ্ঠানের কেউ নই। তিনি মার্কেটিং অফিসার থেকে এখন এমডি বনে গেছেন। আসল মালিকরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে। গতকাল ডিবি পুলিশ মাত্র ৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা জব্দ করে। কিন্তু গ্রাহকের এখনো ৪ হাজার কোটি টাকা জমা আছে। সেই টাকা কোথায়?
তারা আরও বলেন, রূপসার মাত্র হাতেগোনা কয়েকটি বিল্ডিং কেনা ও একটি জায়গা ক্রয় দেখিয়ে প্রতিমাসে গ্রাহক থেকে শতকোটি টাকা সংগ্রহ করে বিদেশে টাকা পাচার করেছে চেয়ারম্যান গং।
জানতে চাইলে ঘটনাস্থলে থাকা ইপিজেড থানার পরিদর্শক ওসমান গণি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সকাল ৮টা থেকে এখানকার পরিস্থিতি ভাল। প্রতিষ্ঠানের আশপাশে যাতে কোন ভীড় না থাকে তাই সবাইকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বুধবার যাদের লোন কিংবা টাকা নেওয়ার কথা ছিল, তাদেরকে টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন এমডি জাকির হোসেন। তাই ওনার কথামতো সবাইকে সরিয়ে দিচ্ছি।
তিনি বলেন, কাল তো আপনারা অনেক নিউজ করেছেন, আবার নিউজ করে কী করবেন?
রূপসা কিং গ্রুপের তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ইপিজেড থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। এরা হলেন রূপসা কিং গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মুসা হাওলাদার, পরিচালক গোলাম ফয়সাল এবং প্রকল্প পরিচালক রাসেল হাওলাদার। এদেরকে ঢাকা থেকে আসা ডিবি পুলিশের টিম নিয়ে যেতে পারে বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে ইপিজেড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোহাম্মদ নুরুল হুদা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, রূপসা মাল্টিপারপাস প্রতিষ্ঠানের উদ্ধার হওয়া টাকা থানায় রেখেছে ঢাকার গোয়েন্দা টিম। গ্রেপ্তার তিনজনের তথ্যের ভিত্তিতে টাকাগুলোর বিষয়ে পরে আরও বিস্তারিত জানানো হবে।
তিনি আরও বলেন, সেখানে এখনো গ্রাহকরা ভীড় জমাচ্ছে। ওরা সবাই আতঙ্কে আছে। ওই প্রতিষ্ঠানে জামানত রাখা বেশিরভাগই পোশাক শ্রমিক।
মুআ/এসএইচ/সিপি