রীতিমতো ‘থানা’ খুলে বসেছে চট্টগ্রামের রেল নিরাপত্তা বাহিনী

চট্টগ্রামে আইনের ভুল ব্যখ্যা দিয়ে আসামি গ্রেপ্তারের পর এফআইআর ফর্ম বানিয়ে মামলা রেকর্ড করে গ্রেপ্তারকৃতদের হেফাজতে নিয়ে রীতিমত থানা খুলে বসেছে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি)।

সরকারি এফআইআর ফর্ম (প্রাথমিক তথ্য বিবরণী) সরবরাহ করা হয় কেবল থানায়। পুলিশ ছাড়া অন্য কোনো বাহিনী কোনো অপরাধীকে গ্রেপ্তার করলে নিকটস্থ থানায় সোপর্দ করে। থানার প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে মামলা সম্পর্কিত তথ্য লিপিবদ্ধ করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতের হেফাজতে পাঠানো হয়। এরপর বিচার প্রক্রিয়া চলে এখতিয়ারযুক্ত আদালতে।

সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা জানিয়েছেন, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী আইন ২০১৬ ও রেলওয়ে সম্পত্তি (অবৈধ দখল উদ্ধার) আইন ২০১৬ মূলত সমন জারি, গ্রেপ্তার, বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার, তদন্ত ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতা দিয়েছে আরএনবিকে। নিয়ম অনুসারে গ্রেপ্তারকৃতকে সোপর্দ করতে হয় থানায়। থানাই রেকর্ড করবে মামলা। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪ ধারায় থানা ও থানার কাজের পরিধি বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে কোথাও থানা ছাড়া কোন চৌকির কথা উল্লেখ নেই। আরএনবি যে এফআইআর ফর্মটি ব্যবহার করছে সেটি থানার নয়। তবে ওই ফর্ম তৈরির অনুমোদন সরকার দিয়েছে কিনা তা জানা নেই।

জানা গেছে, চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে সম্প্রতি রেলওয়ের পুরাতন ডিপোর এক সরকারি কর্মকর্তাকে ফাঁসাতে ৪ ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে গিয়ে নিজেদের তৈরি করা এফআইআর ফর্মে চুরির মামলা রেকর্ড ও আসামি হেফাজতে নিয়েছে আরএনবি। ওই মামলায় সরকারি কর্মকর্তাকে পলাতক আসামি করে গ্রেপ্তারের অনুমতিও চায় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে। সেই জেরে রেল কর্তৃপক্ষ সাময়িক বরখাস্ত করেছে ওই কর্মকর্তাকে।

এ বিষয়ে রেলওয়ে (পূর্ব) আইন কর্মকর্তা সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মামলা নেওয়ার ক্ষমতা বাহিনী কিভাবে পেল আমি জানি না। বাহিনীর চিফ কমান্ড্যান্টকে প্রশ্ন করে জেনে নিন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরএনবির এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, ২০১৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী বিল ২০১৬ পাস হয়। ওই অধ্যাদেশে গ্রেপ্তার ও তদন্ত করার ক্ষমতা থাকলেও মামলা রেকর্ড করার ক্ষমতা দেওয়া হয়নি আরএনবিকে।

এদিকে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) কমান্ড্যান্ট শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘অপারেশন ইউনিট হিসেবে আমাদের নিরাপত্তা চৌকির ব্যবহার করা যাবে।’ অপারেশন ইউনিট কী— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পুলিশের অপারেশন ইউনিট হলো থানা, দুদকের অপারেশন ইউনিট আঞ্চলিক কার্যালয়। আমাদের অপারেশন ইউনিট নিরাপত্তা চৌকি। আমাদের আইনে বলা আছে অপারেশন চৌকিতে থানার কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে।’

এ ব্যাপারে ঢাকা রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুল হোসেনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন আগে আরএনবি বাদি হয়ে মামলা করে রেলের মালামালসহ এক ব্যক্তিকে আমার থানার মাধ্যমে আদালতে চালান করেছে। নিজেদের কোন চৌকির মাধ্যমে নয়।’

এ ব্যাপারে আইনি মতামত জানতে চট্টগ্রাম আদালতের সিনিয়র আইনজীবী ইফতেখার সাইমুল চৌধুরীর কাছে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর, ডিবি বা র‌্যাব আসামি গ্রেপ্তার করে স্ব-স্ব থানার মাধ্যমে মামলা রুজু করে গ্রেপ্তারকৃতদের সংশ্লিষ্ট আদালতে সোপর্দ করে। কিন্তু আরএনবির আইনে ভিন্ন কোন কিছু থাকলে সেটা আমার জানা নেই।’

উল্লেখ্য, গত ২৭ জুন খুলশী থানাধীন রেলওয়ে পুরাতন ডিপোতে বিকেল ৩টায় বাহিনীর হাবিলদার নোমান ৪ জনকে ধরে নিয়ে রেলওয়ে সম্পত্তি আইন ২০১৬ এর ৪ ধারায় মামলা রুজু করে সেটি রেকর্ড করে নিজস্ব এফআইআর ফর্মে (নম্বর- ১,তাং ২৭.৬.২০২০)। তাতে রেল কর্মকর্তা ডিপো ইনচার্জ এসএসএই ইউনুস খোকনকে পলাতক আসামি হিসেবেও উল্লেখ করা হয়। রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সিআই রেজয়ানুর রহমান চৌকি উল্লেখ করে মামলাটি রেকর্ড করেন ও তদন্তের আদেশ দেন বাহিনীর এসআই হাবিব উল্লাহকে।

এসএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!