রাষ্ট্রপতির দপ্তরে ছাত্রলীগ নেতার অভিযোগ, পদ ছাড়তে হল চবির সহকারী প্রক্টরকে

রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ইফতেখার উদ্দিন আয়াজের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এবার সহকারী প্রক্টরের পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হল সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. হানিফ মিয়াকে।

রোববার (১৯ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে এ পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে এই আবেদন করেন তিনি। তার বিরুদ্ধে বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িত হওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর এসএম মনিরুল হাসান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ব্যক্তিগত কারণে সহকারী প্রক্টরের পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেছেন হানিফ মিয়া। নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর পদে ড. হানিফ মিয়াকে নিয়োগ দেওয়ায় গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর চবি ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ইফতেখার উদ্দিন আয়াজ প্রশাসনিক ভবনের সামনে অনশন কর্মসূচি পালন করেন। পরে এ শিক্ষকের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন তিনি। এ অভিযোগ পাঠানো হয় রাষ্ট্রপতি কার্যালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসিতেও। ছাত্রলীগ নেতা ইফতেখার উদ্দিন আয়াজের অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি কার্যালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ইউজিসি উচ্চপর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।

রাষ্ট্রপতি কার্যালয় ও উপাচার্য বরাবরে পাঠানো অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতা ইফতেখার উদ্দিন আয়াজ উল্লেখ করেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কটূক্তির ঘটনায় গ্রেফতার চবি সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক মাইদুল ইসলামকে মুক্তির দাবিতে সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. হানিফ মিয়া সভা-সমাবেশ আয়োজন করেন। ওই সময় সরকারের বিরুদ্ধে সারা দেশে জামায়াত-শিবিরের ইন্ধনে নৈরাজ্য চলছিল। এ সময় সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে প্রকাশ্যে শিক্ষার্থীদের উস্কানি দিতে থাকে মাইদুল ইসলাম। তার পক্ষে প্রকাশ্যে কর্মসূচি দিয়ে রাস্তায় নামা শিক্ষক কখনো আওয়ামীপন্থী প্রশাসনের দায়িত্ব পালন করতে পারে না।

এছাড়াও অভিযোগ উঠে, বিশ্ববিদ্যালয় জীববিজ্ঞান অনুষদের পুকুর থেকে গত ১৬ এপ্রিল বিনা অনুমতিতে মাছ ধরে নিয়ে যান ড. হানিফ মিয়া। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ চলাকালে মাছ ধরার বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা হলে ড. হানিফ মিয়া এ মাছ বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চপদস্থ ব্যক্তির বাসায়ও পাঠিয়েছেন বলেও ক্যাম্পাসে রটে যায়। আবার অবৈধভাবে মাছ ধরে বড় একটি কাতলা মাছ বুকে জড়িয়ে ধরে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সমালোচিত হন সহকারী প্রক্টর ড. হানিফ মিয়া।

এদিকে ড. হানিফ মিয়া মাছ ধরে ক্যাম্পাসে উচ্চপদস্থ ব্যক্তির বাসায় মাছ পাঠিয়েছেন- এমন গুজবে চরম বিব্রত হয় প্রশাসন। এ ধরণের বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে ড. হানিফ মিয়াকে সহকারী প্রক্টর পদ থেকে অপসারণের প্রস্তাব উঠে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, ড. হানিফ মিয়ার বিরুদ্ধে ইউজিসির তদন্ত কমিটি গঠন এবং অবৈধভাবে মাছ ধরার মত কর্মকান্ডে তিনি পড়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে অব্যাহতি প্রদান করার সিদ্ধান্ত নেয় আরও দুই মাস আগে। কিন্তু বামপন্থি কয়েকজন শিক্ষক বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চাপের মুখে রাখে।

পরবর্তীতে গত কয়েকদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী জায়গা থেকে ড. হানিফ মিয়াকে তাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়। পদত্যাগ না করলে তাকে অপসারণ প্রদান করা হবে বলেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একপর্যায়ে তিনি বাধ্য হয়েই রোববার পদত্যাগ পত্র জমা দেন।

এ ধরনের বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িয়ে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই কোনো সহকারী প্রক্টরের পদ থেকে সরে যাওয়ার ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনের সময়ে এটিই প্রথম।

এ বিষয়ে জানতে চবি সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. হানিফ মিয়ার মুঠোফোনে সোমবার (২০ জুলাই) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কয়েকদফা কল দেওয়া হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে চবি ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য ইফতেখার উদ্দিন আয়াজ বলেন, ‘সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে রাস্তায় নেমে উস্কানিমূলক সভা-সমাবেশ করেছেন এই হানিফ মিয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন প্রশাসন এলে তিনি ভোল পাল্টে আওয়ামীপন্থী শিক্ষক সেজে যান। নানা ছলচাতুরী করে বাগিয়ে নেন সহকারী প্রক্টরের পদও। আমি তার সরকার বিরোধী কর্মকান্ডের সকল ডকুমেন্ট উপাচার্য মহোদয়, মহামান্য রাষ্ট্রপতি দফতর, প্রধানমন্ত্রী দফতরসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে পাঠাই। মহামান্য রাষ্ট্রপতির দফতর আমার অভিযোগ আমলে নিয়ে ইউজিসিকে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি করতে বলে। বিষয়টি এখনো তদন্ত চলছে৷’

ইফতেখার উদ্দিন আয়াজ আরও বলেন, ‘এরই মধ্যে সহকারী প্রক্টরের পদ থেকে ড. হানিফ মিয়াকে সরানোর উদ্যোগ গ্রহন করায় আমি মাননীয় উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’

এমআইটি/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!