রাতে সাতকানিয়ায় আবার যুবক খুন, সন্দেহের তীরে মাদকব্যবসায়ী নারী

একজনের অবস্থা গুরুতর, নারীসহ আটক তিনজন

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় আবারও ঘটেছে খুনের ঘটনা। এবার কালিয়াইশ ইউনিয়নে ছুরির আঘাতে নির্মমভাবে খুন হয়েছেন এক যুবক। সন্ত্রাস ও হানাহানিতে বিপর্যস্ত সাতকানিয়ায় এ নিয়ে গত দেড় মাসে চারজন খুন হলেন।

শনিবার (১৩ জুলাই) রাত সাড়ে ৮টার দিকে কালিয়াইশ ইউনিয়নের বিওসি মোড়ের কলোনিতে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও একজন। তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক।

খুন হওয়া ওই যুবকের নাম ইব্রাহিম বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। তিনি বিওসি মোড়ের পশ্চিমে কলোনিতে ভাড়া থাকতেন। অন্যদিকে এ ঘটনায় আহত যুবকের নাম তাৎক্ষণিকভাবে জানা না গেলেও ওই যুবকের বাড়ি দোহাজারি পৌরসভার চাগাচর ওয়ার্ডে বলে জানা গেছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে দোহাজারী সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়।

পূর্ব বিরোধের জের ধরে খুনের এই ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে।

পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে হোসনে আরা বেগম ওরফে ভুট্টোনী নামে এক নারীসহ তার দুই ছেলেকে আটক করেছে বলে জানা গেছে। ওই নারী মাদকব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

চলতি বছরের ১ এপ্রিল ভুট্টোনীকে (৫৫) ২৫০ পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রামের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। পরে তাকে সাতকানিয়া থানায় সোপর্দ করা হয়। এরপর কিছুদিন কারাগারে থেকে আবার মাদকব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন এই নারী ও তার ছেলেরা। ভুট্টোনীর দুই ছেলে পারভেজ ও আকাশের বিরুদ্ধেও বেশ কয়েকটি মাদক মামলা আছে বলে জানা গেছে।

একের পর এক খুন

এর আগে গত ৯ জুন বিকাল সাড়ে চারটার দিকে সাতকানিয়ার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তাঁতীপাড়া এলাকার ফজল করিম মেম্বারের গরুর ফার্মের পূর্ব পাশে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ফজল আহমদ (৫৫) নামের এক কৃষককে। তিনি সোনাকানিয়া ২ নম্বর ওয়ার্ডের কুতুব পাড়ার সাচি মিয়ার পুত্র। ঘটনার পর হত্যাকারী সন্দেহে আবুল কাশেম (৫৫) নামে এক ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও পরবর্তী কোনো অগ্রগতি জানা যায়নি। নিহত ফজল আহমদের স্ত্রী রেহেনা আক্তার বলেন, ‘বাড়ির উত্তর পাশের কুতুব পাড়ার আবুল কাশেম ও তার ছেলে তৌহিদ আমার স্বামীকে কোদাল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে। আমার স্বামী খুবই নিরীহ লোক ছিল। আমার ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে রয়েছে।’

গত ২৯ মে রাত ৮টার দিকে সাতকানিয়ার আমিলাইশ ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড দক্ষিণ আমিলাইশে কয়েক দফা পিটিয়ে সদ্যবিবাহিত এক পিকআপচালককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। মো. মহিউদ্দিন (২৫) নামের ওই পিকআপচালককে গাড়িসহ আটক করে কয়েক দফা পেটানোর পর তিনি মারা যান।

গত ২৮ মে উপজেলার ছদাহা ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ড সর্দারপাড়ায় ছুরিকাঘাতে মাহমুদুল হক (৩৩) নামে এক যুবলীগ কর্মীকে পেটে ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয়। নিহত মাহমুদুল গত সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রার্থীর এজেন্ট ছিলেন। গত সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই তিনি হত্যার হুমকি পাচ্ছিলেন বলে স্থানীয় যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। সম্প্রতি ওই ইউনিয়নে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি হওয়ার পর এই হুমকি আরও বেড়ে যায়। সর্বশেষ খুনের ঘটনার আগের দিনও প্রাণনাশের হুমকি পান তিনি।

দিনেদুপুরে খুনের এ ঘটনায় সাতকানিয়া থানা মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে ৩ জুন চট্টগ্রামের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারি অভিযোগ দায়ের করেছেন নিহত মাহমুদুল হকের বড় ভাই এনামুল হক (৪১)। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জকে (ওসি) ফৌজদারি অভিযোগটি সরাসরি এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ দেন। নৃশংস খুনের এই মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন ছদাহা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান জয় (২৫) ছাড়াও স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের আট সদস্য। এর মধ্যে গত ৮ জুলাই মাহমুদুল হক হত্যায় অন্যতম অভিযুক্ত সাকিব প্রকাশ টোকাই সাকিবকে গ্রেপ্তার করা হয়।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm