রাতের বহদ্দারহাটে চারজন গুলিবিদ্ধ, সড়কবাতি নিভিয়ে থেমে থেমে গুলি

মেডিকেলে চিকিৎসায় বাধা দিচ্ছে পুলিশ—অভিযোগ শিক্ষার্থীদের

রাতে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষে অন্তত চারজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন, কমপক্ষে ১২ জন শিক্ষার্থী বহদ্দারহাটে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। রাত সাড়ে নয়টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বহদ্দারহাট মোড় এলাকায় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া চলছিল। বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে পুলিশ রাবার বুলেট ছাড়াও টিয়ারগ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়ছে বলে জানিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বহদ্দারহাট এলাকায় সড়কগুলোতে সিটি কর্পোরেশনের সড়ক বাতিগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অন্ধকারে থেমে থেমে শোনা যাচ্ছে গুলির শব্দ।

চট্টগ্রাম মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ি থেকে একদল পুলিশ এসে শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ি থেকে একদল পুলিশ এসে শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে।

সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ এক যুবকের নাম আবদুস সাত্তার। অপর একজনের নাম শহীদ বলে জানা গেছে। তার বাড়ি আনোয়ারায়। তবে তাৎক্ষণিকভাবে অপর দুজনের নাম ও বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি। গুলিবিদ্ধ চারজনকেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। চারজনেরই গায়ে রাবার বুলেট লেগেছে বলে চট্টগ্রাম মেডিকেল সূত্রে জানা গেছে।

বহদ্দারহাটে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর পৈত্রিক বাসভবনে পুলিশের প্রহরা
বহদ্দারহাটে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর পৈত্রিক বাসভবনে পুলিশের প্রহরা

এদিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বহদ্দারহাটে গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থীদের চিকিৎসায় বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা দাবি করেছেন, অন্তত ১২ জন শিক্ষার্থী বহদ্দারহাটে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থীদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসার পর মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নিজেই শিক্ষার্থীদের মেডিকেলে ভর্তিতে বাধা দেন। এ সময় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বলেন, ‘গুলিবিদ্ধ কাউকে পুলিশ কেইস ছাড়া ভর্তি করা যাবে না। আগে থানায় যেতে হবে। পুলিশ কেইস হওয়ার পরই তাদের মেডিকেলে ভর্তি করা যাবে।’ তার কথায় উত্তেজিত হয়ে শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম মেডিকেলের জরুরি বিভাগের একটি কাচের দরজা ভাঙচুর করে। এরপর মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ি থেকে একদল পুলিশ এসে শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে। এমনকি তারা মেডিকেলের বিভিন্ন কক্ষে তল্লাশি চালিয়ে সেখানেও শিক্ষার্থীদের প্রহার করে। এক পুলিশসদস্য এ সময় চট্টগ্রাম প্রতিদিনের প্রতিবেদক রিতা আকতারকে ঘটনার ছবি তুললে মহিলা পুলিশ দিয়ে আটক করারও হুমকি দেয়।

পরে বেশকিছু শিক্ষার্থীকে আটক করে পাঁচলাইশ থানায় নিয়ে যাওয়া হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়িতেও আটকে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।

শনিবার (৩ আগস্ট) বিকেল তিনটায় চট্টগ্রাম নগরীর নিউ মার্কেট চত্বরে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির একটি মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা টাইগারপাস, লালখানবাজার, জিইসি মোড়, মুরাদপুর হয়ে রাত সাড়ে সাতটার দিকে বহদ্দারহাটের দিকে এগিয়ে যায়। সেখানে বিক্ষুব্ধ কেউ কেউ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর পৈত্রিক বাসভবন বহদ্দারবাড়ি লক্ষ্য করে ঢিল ছোঁড়েন।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বহদ্দারহাট এলাকায় এ সময় বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও বিজিবি সদস্যের উপস্থিতি দেখা যায়। রাত আটটার দিকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীদের কয়েকটি দল আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় তাদের অনেকের হাতে অস্ত্রও দেখেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশ এ সময় মারমুখী হয়ে ওঠে। পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে এরপরই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।

এ সময় অন্তত চারজন গুলিবিদ্ধ হন। পরে পথচারী ও শিক্ষার্থীরা তাদের ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।

শিক্ষামন্ত্রী ও মেয়রের বাড়িসহ দুই পুলিশ বক্স ভাঙচুর, সাংসদের অফিসে আগুন

চট্টগ্রামে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর পৈত্রিক বাসভবনে ইটপাটকেল ছোঁড়া হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি মিছিল থেকে।

শনিবার (৩ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শিক্ষার্থীদের একটি মিছিল নগরীর দুই নম্বর গেট এলাকার মেয়র গলির দিকে এগিয়ে যায়। বাড়ির সামনে গিয়ে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকেন তারা। এর একপর্যায়ে মিছিল থেকে কয়েকজন শিক্ষামন্ত্রীর বাসা লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোঁড়েন। এতে বাড়ির দোতলার কয়েকটি জানালার কাঁচ ভেঙে যায়। এ সময় তারা বাড়ির নিচে রাখা দুটি পুরনো গাড়িও ভাঙচুর করে। মন্ত্রীর মা ও চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হাসিনা মহিউদ্দিন এ সময় বাসায় অবস্থান করছিলেন।

সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের মিছিলটি মুরাদপুর হয়ে বহদ্দারহাটে পৌঁছায়। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা এ সময় বহদ্দারহাট এলাকায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর পৈত্রিক বাসভবন বহদ্দারবাড়ি লক্ষ্য করে ঢিল ছুঁড়তে থাকে। এ সময় মেয়র বাসাতেই ছিলেন। তবে এতে তাৎক্ষণিক কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর মেলেনি।

এর আগে বিকেল ৪টার দিকে নগরীর নিউমার্কেটে মোড়ে দুই ঘণ্টা অবস্থান করে আন্দোলনকারীরা। সেখানে বিপুলসংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি দেখে একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ নিউমার্কেট মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের একটি বক্স ভাঙচুর করে।

এদিকে বিকেল ৫টার দিকে নিউ মার্কেট মোড় থেকে টাইগারপাস মোড়ে পৌঁছার পর বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা ট্রাফিক পুলিশের একটি বক্স ভাঙচুর করেন। তবে ওই সময় সেখানে কেউ ছিল না।

এরপর সেখান থেকে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের মিছিলটি লালখানবাজার হয়ে ওয়াসা গিয়ে থামে। তারা এ সময় ওয়াসা মোড় এলাকায় সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চুর নির্বাচনী কার্যালয়ের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। এর একপর্যায়ে সেখানে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।

এর আগে বিকেল ৩টা থেকে চট্টগ্রাম নগরীর নিউমার্কেট মোড়ে দুই ঘণ্টা অবস্থান করে আন্দোলনকারীরা। সেখানকার পুলিশ বক্স ভাঙচুর করে আন্দোলনকারীরা। এরপর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মিছিল নিয়ে টাইগারপাসের দিকে অগ্রসর হন তারা। টাইগারপাস মোড়ে পৌঁছে মিছিল থেকে একটি অংশ গিয়ে আবারও সেখানকার পুলিশ বক্স ভাঙচুর শুরু করে।

আরএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm