সীমান্ত থেকে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করলেও ধোবাউড়া সীমান্তেই যাননি এমন দাবি করে দৈনিক ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত ও একাত্তর টেলিভিশনের সদ্য সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু জানিয়েছেন, একদল লোক অস্ত্রের মুখে তাদের জিম্মি করে গাড়িচালককে মারধর ও টাকাপয়সা হাতিয়ে নেয়। এ সময় তাদের হত্যার পরিকল্পনাও ছিল বলে দাবি করেছেন তারা।

এর আগে সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ধোবাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. চাঁন মিয়া দাবি করেন, ময়মনসিংহের ধোবাউড়া সীমান্ত হয়ে অবৈধভাবে ভারতে যাওয়ার সময় একটি প্রাইভেট কারসহ সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবু ও শ্যামল দত্তসহ চারজনকে আটক করেন এলাকাবাসী। পরে তাদের পুলিশে দেয় তারা। চারজনের অন্য দুজন হলেন একাত্তর টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার মাহবুবুর রহমান ও গাড়িচালক সেলিম। ময়মনসিংহে তাদের নামে কোনো মামলা না থাকায় পরে তাদের ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।
ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত ও একাত্তর টিভির সদ্য সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজ্জাম্মেল বাবু দুজনেই আওয়ামী লীগপন্থী সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত। তারা দুজন ক্ষমতাচ্যূত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও ঘনিষ্ঠজন ছিলেন।
এদিকে ধোবাউড়া থানায় আটক অবস্থায় শ্যামল দত্ত জানান, গোয়ালাবাজার এলাকায় অবস্থানকালেই ১৫-২০টি মোটরসাইকেলে করে একদল লোক এসে তাদের ঘিরে ধরে। এ সময় লোকগুলো তাদের গাড়িচালককে প্রচণ্ড মারধর করে। পরে মোটরসাইকেলে করে আসা লোকজনই প্রাইভেট কারটি চালিয়ে সবাইকে ধোবাউড়া নিয়ে যায়।
ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, ‘ড্রাইভারকে মারধর করে পুরো গাড়ি চালিয়ে ওরা নিয়ে আসছে ধোবাউড়ায়। আনার পরে ওদের মোটরসাইকেলে আমাদেরকে নিয়ে গেছে একেবারে গভীর বিলের মধ্যে। এবং আমাদেরকে মেরে ফেলবে, আমাদেরকে জবাই করবে এমন আর কী! ড্রাইভারকে ব্যাপক মারধর করেছে তারা। অস্ত্রের মুখে আমাদেরকে ওখানে নিয়ে গেছে। এটা হচ্ছে (রাত) সাড়ে নয়টার ঘটনা।’
তিনি বলেন, ‘সকাল ছয়টা পর্যন্ত পুলিশ যখন আমাদেরকে খুঁজতেছে, প্রকাশ্য বাজারের মধ্যে হয়েছে তো, ধোবাউড়া বাজার থেকে, তখন লোকজন পুলিশে খবর দিয়েছে। পুলিশ পরে ভোর রাতের দিকে রওনা দিয়েছে ওইদিকে, বিলের মধ্যে। ছয়টার দিকে আমাদেরকে উদ্ধার করেছে তারা।’
শ্যামল দত্ত বলেন, ‘আমাদের পকেটে যা ছিল টাকাপয়সা ক্রেডিট কার্ড মানিব্যাগ সব তারা নিয়ে গেছে। আমরা কিন্তু ধোবাউড়া আসিও নাই তখন। আর আমরা যদি বর্ডারে যেতাম, তাহলে তো পুলিশে দেওয়ার কথা।’
এর আগে ধোবাউড়া থানার ওসি মো. চান মিয়া দাবি করেন, শ্যামল দত্ত ও ময়মনসিংহের ধোবাউড়া সীমান্ত হয়ে অবৈধভাবে ভারতে যাওয়ার সময় এলাকাবাসী তাদের আটক করে।
ওসির দাবি, ‘আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি অসংখ্য এলাকাবাসী তাদেরকে ঘিরে ধরে আছে। পরে তারা নিজেরাই হেঁটে এসে আমাদের কাছে ধরা দেয়।’
এর আগে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার পরদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া হয়ে সপরিবারে ভারতে যাওয়ার সময় শ্যামল দত্তকে আটকে দেয় ইমিগ্রেশন পুলিশ। অন্যদিকে মোজাম্মেল বাবু সরকার পতনের পর থেকেই আত্মগোপনে ছিলেন।
সিপি