রাতভর অভিযানে গ্রেপ্তার চট্টগ্রামের পূজায় হামলার ৪ ‘পরিকল্পনাকারী’সহ ৯ জন
চট্টগ্রামে রাতভর অভিযানে ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন যুব ও ছাত্র অধিকার আন্দোলনের ৪ নেতাসহ মোট নয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। চট্টগ্রাম নগরীর পূজা মণ্ডপে হামলার সাথে তাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করার কথা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) দিবাগত রাত ৯ টা থেকে সাড়ে ৯ টার মধ্যে তিনটি পৃথক জায়গা থেকে সাদা পোশাকের কিছু মানুষ যুব ও ছাত্র অধিকার আন্দোলনের ৪ নেতাকে তুলে নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ছাত্র অধিকার পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক জসিম উদ্দিন।
যে চারজনকে সাদা পোশাকের লোকজন ধরে নিয়ে গেছেন তারা হলেন— যুব অধিকার পরিষদের চট্টগ্রাম নগর কমিটির আহ্বায়ক নাছির, চট্টগ্রাম মহানগর সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার মিজানুর রহমান, বায়োজিদ থানার আহ্বায়ক রাসেল এবং নগর ছাত্র অধিকার আন্দোলনের দপ্তর সম্পাদক ইমন।
এদের মধ্যে মিজান ও ইমনকে চকবাজার এলাকা থেকে, নাছিরকে টেরিবাজার এলাকা থেকে ও রাসেলকে ষোলশহর ২ নম্বর গেইট এলাকা থেকে আটক করা হয়।
এদিকে শুক্রবার দিবাগত রাতব্যাপি অভিযানে এই চারজন ছাড়াও নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। রাত আড়াইটায় এই রিপোর্ট লেখার সময়ও সন্দেহভাজনদের ধরতে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছিল।
এই নয়জনকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নেজাম উদ্দিন।
শুক্রবার দিবাগত রাত দুইটায় চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, সন্দেহভাজন এই চারজনকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা চট্টগ্রাম নগরীর পূজা মণ্ডপে হামলার ঘটনার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে।
তবে তদন্তের স্বার্থে এর বিস্তারিত জানাতে অসম্মতি প্রকাশ করেন ওসি নেজাম।
চট্টগ্রামের জেএমসেন হল পূজামণ্ডপে হামলা মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে ইমরান মাজেদ রাহুলকে। তার বাবা মো. ইলিয়াছ চট্টগ্রাম মহানগরের দেওয়ানবাজার ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি। তার চাচা মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান। মণ্ডপে হামলার পরই রাহুলকে গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালী থানা পুলিশ।
জানা গেছে, নগরীর ঘাটফরহাদবেগ এলাকার মো. হানিফ, রিয়াজ উদ্দিন বাজারের নুপুর মার্কেটের আবদুর রহিম ও চন্দনাইশের হাশিমপুর এলাকার সায়দাবাদ গ্রামের এসএম ইউসুফও নেতৃত্ব দিয়েছেন মিছিল ও হামলায়। মহানগরের এ হামলার ঘটনায় ৯ শিশু ও কিশোর জড়িত ছিল। তবে খলিফাপট্টি এলাকার কিছু হকার্স লীগ সমর্থকও এ মামলায় জড়িত বলে খবর পাওয়া গেছে। হামলার ঘটনায় জড়িতদের বেশিরভাগই টেরিবাজার, রিয়াজ উদ্দিন বাজার ও খলিফাপট্টি এলাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। যাদের বাড়ি সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও বাঁশখালী এলাকায়।
কুমিল্লার ঘটনার জের ধরে শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে জুমার নামাজের একটি মিছিল থেকে ঐতিহাসিক জেএম সেন হলের পূজামণ্ডপে গেটে হামলা হয়। হিন্দু সম্প্রদায় ওই পূজামণ্ডপের গেট ভাঙচুর করা হয়েছে বলে দাবি করলেও মাঠপর্যায়ে কাজ করা গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সংগৃহীত ভিডিও ফুটেজে মূলত গেটের ব্যানার ও কাপড় ছেঁড়ার চিত্রই ধরা পড়েছে।
নিউমার্কেট এলাকার আমতল, গোলাম রসুল মার্কেট ও রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকা থেকে আরও হাজারখানেক লোকের একটি মিছিল তুলসীধামের মন্দির এবং নন্দনকানন লোকনাথ মন্দির হয়ে আন্দরকিল্লায় আসার চেষ্টা করে।
নিউমার্কেট এলাকার আমতল, গোলাম রসুল মার্কেট ও রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকা থেকে আরও হাজারখানেক লোকের একটি মিছিল তুলসীধামের মন্দির এবং নন্দনকানন লোকনাথ মন্দির হয়ে আন্দরকিল্লায় আসার চেষ্টা করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওইদিন দুপুরে জুমার নামাজ শেষে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ গেইটে ৫০০ থেকে ৭০০ লোক ‘কুমিল্লার ঘটনার প্রতিবাদ’ জানিয়ে সমাবেশ করে। বেলা ১টা ৪০ মিনিটে নিউমার্কেট এলাকার আমতল, গোলাম রসুল মার্কেট ও রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকা থেকে আরও হাজারখানেক লোকের একটি মিছিল তুলসীধামের মন্দির এবং নন্দনকানন লোকনাথ মন্দির হয়ে আন্দরকিল্লায় আসার চেষ্টা করে। এ সময় মিছিলটি কোতোয়ালী জোনের সহকারী কমিশনার ও ওসির নেতৃত্বে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে নন্দনকানন বোস ব্রাদার্স মোড়ে। এরপর মিছিলটি সিনেমা প্যালেস হয়ে আন্দরকিল্লা মোড়ে এসে বিক্ষোভে মিলিত হয়।
সেখান থেকে তারা মিছিল নিয়ে জেএমসেন হলের দিকে এগিয়ে যায়। শুরুতেই তারা আন্দরকিল্লা মোড়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এর মধ্যে কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ে মিছিলটি। এর মধ্যে একটি গ্রুপ সিরাজদ্দৌল্লা সড়কে, একটি গ্রুপ রেডক্রিসেন্ট গলিতে এবং অপর গ্রুপটি মসজিদে ঢুকে পড়ে। তবে এই ফাঁকে শ’খানেক লোক চলে যায় চেরাগি পাহাড় মোড়ের দিকে। এই গ্রুপটিই মূলত জেএমসেন হলের তোরণের ব্যানার ও কাপড় ছিঁড়ে নেয় এবং মন্দিরের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে। যদিও পরে টিয়ারশেল ছুঁড়ে হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ।
ফাঁকে শ’খানেক লোক চলে যায় চেরাগি পাহাড় মোড়ের দিকে। এই গ্রুপটিই মূলত জেএমসেন হলের তোরণের ব্যানার ও কাপড় ছিঁড়ে নেয় এবং মন্দিরের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে।
এআরটি/সিপি