রাঙ্গুনিয়ায় পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে ৩০ হাজার মানুষ, মাইকিং করেই দায় সারছে প্রশাসন

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের পাহাড়ের চূড়া ও পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে প্রায় ৯ হাজার বসতঘর। এতে প্রতিবছর বর্ষায় পাহাড়ের মাটি ধসে অনেক বসতঘর চাপা পড়ে। ঘটে হতাহতের ঘটনাও।

এদিকে চলতি বর্ষায় গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে পাহাড়ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। উপজেলা প্রশাসন পাহাড়ের চূড়ায় থাকা লোকজনকে অন্যত্র সরে যেতে শুধুমাত্র করছে মাইকিং। প্রাণহানির আশঙ্কা থাকার পরও তাদের সরানোর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না প্রশাসন।

রাঙ্গুনিয়া উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ১৫ ইউনিয়ন ও পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় ৯ হাজার একর সরকারি ও ১৫ হাজার একর সংরক্ষিত বনভূমি ও পাহাড় রয়েছে। এসব পাহাড়ে প্রায় ৯ হাজার বসতঘর রয়েছে। এর মধ্যে পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে আছে অন্তত ২০ হাজার মানুষ।

রাঙ্গুনিয়ায় পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে ৩০ হাজার মানুষ, মাইকিং করেই দায় সারছে প্রশাসন 1

গত ২০১০ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ভারী বর্ষণে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। এতে ২ শতাধিক বসতঘর মাটি চাপা পড়েছে। গত ২০১৭ সালের ১৩ জুন মঙ্গলবার দিবাগত রাতে উপজেলার রাজানগর ও ইসলামপুর ইউনিয়নের দুই পরিবারের ২২ জনসহ একই বছরের ৩০ ডিসেম্বর দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর এলাকায় পাহাড় কাটার সময় মাটি চাপা পড়ে এক শিশুসহ ৩ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বেতাগী ইউনিয়নের কমিউনিটি সেন্টার, জঙ্গল বেতাগী এলাকায় পাহাড় কেটে প্রভাবশালীরা মাটি বিক্রি করছে। একইভাবে উপজেলার উত্তর রাঙ্গুনিয়ার ১ নম্বর রাজানগর, ১৪ নম্বর দক্ষিণ রাজানগরের মুহাম্মদপুর, বাইশ্যাের ডেবা, লেলিঙার টিলা, ১৩ নম্বর ইসলামপুরের মঘাছড়ি, রইস্যাবিল, একই ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবুল কালাম নিজেই গাবতল এলাকায় পাহাড় কেটে বসতঘর তৈরি করছেন।

এছাড়া ১৫ নম্বর লালানগরের চাঁদের টিলা, ছনখোলা বিল, পেইট্ট্যাঘোনা, আগুনিয়া চা বাগান, হোসনাবাদ ইউনিয়নের নিশ্চিন্তাপুর, ফকিরারটিলা, ফুইট্ট্যােগোদা , পোমরা, কোদালা, পারুয়া ইউনিয়নের জঙ্গল পারুয়া, সরফভাটা, শিলক ও পদুয়া ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকায় পাহাড় কেটে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি তৈরি করেছে প্রায় ৮ থেকে ৯ হাজারেরও বেশি পরিবার। যেখানে বসবাস করছে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ।

রাঙ্গুনিয়া পৌরসভা কার্যালয় সূত্র জানায়, পৌরসভার ভেতরে ১০টিরও বেশি পাহাড়ে ভূমিধসের ঝুঁকি রয়েছে। এসব পাহাড়ে ৩ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি তৈরি করে বসত করছে ৫ হাজারের বেশি মানুষ।

রাঙ্গুনিয়ায় পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে ৩০ হাজার মানুষ, মাইকিং করেই দায় সারছে প্রশাসন 2

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার রাঙ্গুনিয়ার সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ জহুরুল আনোয়ার বলেন, ‘বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ে অবৈধভাবে অসংখ্য বসতঘর গড়ে উঠেছে। যারা অধিকাংশ ঘর নির্মাণ করেছে পাহাড় কেটে। আর এসব ঘরে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে কয়েক হাজার পরিবার।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন মাইকিং করে দায়সারা ভাবে দায়িত্ব পালন করলে হবে না। পাহাড়ের নিচে অবৈধ বসবাসকারীদের অনতিবিলম্বে সরিয়ে নিতে হবে। উচ্ছেদ করতে হবে অবৈধ স্থাপনা। নতুন করে পাহাড়ের নিচে যাতে কেউ অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলতে না পারে তা প্রশাসনের নজরদারিতে রাখতে হবে।’

রাঙ্গুনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ সম্পাদক মো. জসিম উদ্দিন শাহ বলেন, ‘পাহাড় কাটার কারণে পাহাড়ধসের ঝুঁকি বাড়ছে। আগে পাহাড় কাটা রোধ করতে হবে। তাহলে ধসের পরিমাণ কমে যাবে। এতে প্রশাসনের উদাসীনতা রয়েছে। পাহাড়ে অভিযানের পর ফলোআপ করে না বন বিভাগ বা উপজেলা প্রশাসন। বর্ষা এলেই মাইকিং করে দায়িত্ব শেষ করে। আগে থেকেই পরিকল্পনা নিতে হবে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের কী করতে হবে।’

রাঙ্গুনিয়ার পৌর মেয়র শাহাজাহান শিকদার বলেন, ‘পৌরসভার ইছাখালী, গুচ্ছগ্রাম, জাকিরাবাদ, কাদের নগর ও নোয়াগাঁও পৌর এলাকায় পাহাড়ে বসবাস করছে প্রায় ১ হাজার পরিবার। এদের অনেকে পাহাড়ের চূড়া কেটে বসতঘর তৈরি করে বসবাস করছে। পাহাড়ে এসব ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে পৌরসভার পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে।’

এ প্রসঙ্গে বন বিভাগের রাঙ্গুনিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মাসুম করিম বলেন, ‘পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীরা কোনো আইন মানে না। তাদের উচ্ছেদ করার পরও আবার বসতি গড়ে।’

এ ব্যাপারে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইফতেখার ইউসুফ বলেন, ‘পাহাড়ের চূড়া ও পাদদেশ ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের পাহাড় ছাড়তে অনুরোধ জানিয়ে এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। এছাড়াও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এরপরও বসবাসকারীরা স্বেচ্ছায় সরে না এলে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পাহাড়ে বসবাসকারী এতগুলো পরিবারকে পুনর্বাসন করাও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এ অবস্থায় পাহাড় ধসের হাত থেকে বসবাসকারীদের বাঁচানোর ব্যাপারে প্রশাসন খুবই উদ্বিগ্ন।’

এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm