চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা ইউনিয়নের আমান আলী ১ নম্বর সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসীর দুঃখ-দুর্দশার কারণ ছিল। অবশেষে এলাকাবাসীর দুঃখ লাঘবে প্রায় ১০ হাজার মানুষের চলাচলের এ সড়কটির পুনঃসংস্কার কাজ শুরু হয়। কিন্তু এবার সড়কটির সংস্কারকাজের শেষ পর্যায়ে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এলাকার একটা পক্ষের বিরুদ্ধে।
এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, সড়কটি পুনঃসংস্কারের জন্য চলতি বছরের ২১ মার্চ দরপত্র আহ্বান করে সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। পরে চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল ইজিবি লটারির মাধ্যমে ১ কোটি ২৬ লাখ ৭৮০ টাকা ব্যয়ে সড়ক পুনঃসংস্কারে এ কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রেহান এন্টারপ্রাইজ।
দরপত্র মতে, পুনঃসংস্কার কাজের মধ্যে ছিল আমান আলী ১ নম্বর সড়কটি এবং সড়কটির মধ্যে ৩৯৯, ৬২০, ৯৬৯ ও ১৬০৫ মিটারের চারটি বক্স কালভার্ট।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কালভার্ট বাদে সড়কের বাকি কাজ শেষ করে প্রথম বক্স কালভার্টের কাজ করতে গেলে সংস্থাটির লোকজনকে বাধা দিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয় এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা বশির উদ্দিন।
এদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কের পুনঃসংস্কার কাজ শুরু করলে তাদের সহযোগিতা করতে উপজেলা প্রশাসন ৮ নম্বর সরফভাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ ফরিদ উদ্দীন চৌধুরীকে নির্দেশ দেন। নির্দেশ অনুযায়ী চেয়ারম্যান নির্মাণাধীন প্রথম কালভার্টের কাজ পরিদর্শন করতে যান। এরপর কাজে স্থানীয় বাসিন্দা বশির উদ্দিন সরফভাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ ফরিদ ও একই ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে আরও ১০ থেকে ১২ জনকে অজ্ঞাত করে জমি দখলের অভিযোগে দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানায় একটি অভিযোগ দেন।
অভিযোগে বলা হয়, গত ১৮ জুলাই রাত সাড়ে ৯টার দিকে অভিযোগকারী বশির উদ্দিন আমান আলী সড়কের পাশেই তার ১৩ শতকের পৈত্রিক সম্পত্তিতে ঘর নির্মাণে জায়গা ভরাট করতে গাড়ি নিয়ে বালি আনার জন্য অপেক্ষা করছিল। এ সময় চেয়ারম্যানের ইন্ধনে ২ নম্বর বিবাদী বশিরকে লাথি, কিল, ঘুষি মেরে জখম করে। তারপর তার সঙ্গে থাকা ৫ হাজার টাকা দামের মোবাইল সেট নিয়ে পালিয়ে যায়। এরপর রাত ১০টার দিকে জায়গা ভরাটের বালি নিয়ে দুটি ডাম্পার আসার পথে গাড়ির ড্রাইভারদেরকেও নামিয়ে মেরে জখম করে। গাড়িতে থাকা বালি রাস্তায় ফেলে দিয়ে তারা পালিয়ে যায়। এছাড়া বশির ও তার দুই বোনকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার কথাও অভিযোগপত্রে বলা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, সরফভাটা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ১০ হাজারের অধিক মানুষের যাতায়াতের একমাত্র প্রধান সড়ক হচ্ছে আমান আলী ১ নম্বর সড়ক। সড়কটিতে প্রকল্পিত ৪টি কালভার্টের মধ্যে নির্মাণাধীন ৩৯৯ মিটারের প্রথম কালভার্টটির চারপাশে ১০০ থেকে ১৫০ পরিবারের বসবাস। কালভার্টটির নির্মাণকাজ থেমে আছে। এছাড়া বৃষ্টির পানি চলাচল করতে না পেরে মানুষের বসতবাড়ি, মসজিদ ও স্কুল এলাকা হাঁটু পানিতে ডুবে আছে। কালভার্টটির নির্মাণকাজ এখনো শেষ না হওয়ায় আবার বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতার এ ভোগান্তি আরও বেড়ে যাওয়ার শংকায় স্থানীয়রা।
স্থানীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, পুনঃসংস্কার কাজের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন নির্মাণাধীন এ কালভার্টটির একপাশে থাকা তিনটি গাছ কেটেছিল। গাছ তিনটি ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করে ৭ হাজার ৫০০ টাকা গাছের মালিক স্থানীয় বাসিন্দা বীষু শীলের মাকে দেওয়া হয়। ঠিকাদারি এ সংস্থার লোকজন কালভার্টের কাজ শুরু করতে গেলে বশির উদ্দিন এসে কাজে বাধা দেয়। তারপর তিনি ডাম্পার ট্রাক নিয়ে বালি এনে কালভার্টের একপাশ বন্ধ করে দেয়। ফলে অল্প বৃষ্টি হলেই এ জায়গার ঘর-বাড়ি, মসজিদ, মাদ্রাসা ও স্কুলে কোমর সমান পানিতে ডুবে যায়। যার ফলে ছোট বাচ্চারা স্কুল-মাদ্রাসায় যেতে পারে না। এটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চরম ভোগান্তিতে স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আমান আলী ১ নম্বর সড়কটি দীর্ঘদিন সংস্কার কাজ না হওয়ায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন ১০ হাজারের অধিক মানুষ যাতায়াত করে। মানুষের চরম ভোগান্তির কথা চিন্তা করে চেয়ারম্যান সড়কটি পুনঃসংস্কারের ব্যবস্থা করেন। ঠিকাদার সড়কের কাজ শেষ করে কালভার্টের কাজ করতে গেলে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন বশির উদ্দিন।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে বশির উদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি বাড়ির বাইরে রাস্তায় আছি। কথা বলতে পারবো না।’
এরপর তিনি আগামীকাল কথা বলবো বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
৮ নম্বর সরফভাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ ফরিদ উদ্দীন চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমান আলী ১ নম্বর সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় বাসিন্দাদের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় একপক্ষের ইন্ধনে বশির উদ্দিন নামে এলাকার একজন বাসিন্দা এ ভোগান্তির জন্য দায়ী। সড়কটির পুনঃসংস্কার কাজ প্রায় শেষের দিকে হলেও এই কালভার্টটি নির্মাণে বাধা দেন তিনি। এরপর তিনি আমার এবং ইউনিয়নের এক ইউপি সদস্যসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যে অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি নির্মাণকাজ আটকে দিয়ে এলাকাবাসীর ভোগান্তি বাড়িয়ে দিয়েছেন।’
দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবাইদুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়টি সত্য। তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ডিজে