রাউজানে ব্রিকফিল্ড থেকে কোটি টাকার চাঁদাবাজি, বাদ যায়নি কাঠবোঝাই ট্রাকও

সংবাদ সম্মেলনে রাউজান উপজেলা বিএনপি

চট্টগ্রামের রাউজানের ৪৮টি ব্রিকফিল্ড থেকে ২ লাখ টাকা করে কয়েক কোটি টাকা চাঁদা তুলে কার হাতে তুলে দিয়েছেন, তা অনেকেই জানে। রাঙামাটি থেকে চট্টগ্রামগামী কাঠবোঝাই প্রতি ট্রাক থেকে বন বিভাগের মাধ্যমে ৩০০ টাকা করে চাঁদা কার কাছে যায় এবং গহিরা, রাউজান মুন্সিরঘাটা, নোয়াপাড়া এলাকার বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও লোকজনের কাছ থেকে চাঁদাবাজির কোটি কোটি টাকা কোথায় গিয়েছে প্রশাসন জানলেও তা জনগণও জানতে চায়। এলাকায় কাদের নেতৃত্বে চাঁদাবাজি চলছে তা প্রশাসন জানলেও রহস্যজনকভাবে কাউকে গ্রেপ্তার করছে না।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করছেন রাউজান উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক জসিম উদ্দিন
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করছেন রাউজান উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক জসিম উদ্দিন

শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে হত্যা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ডাকা সংবাদ সম্মেলনের এসব বক্তব্য তুলে ধরা হয় রাউজান উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে।

রাউজান উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক জসিম উদ্দিন সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।

এসময় তিনি বলেন, বিগত ১৭ বছর ধরে রাউজানের সাধারণ জনগণ স্বাধীনভাবে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেনি বাকস্বাধীনতা বলতে কিছুই ছিল না। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে পুরো রাউজানবাসী জিম্মি অবস্থায় ছিল। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পর ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে এলাকার সাধারণ জনগণের মধ্যে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফিরে এসেছিল। কিন্তু দেখা যায়, রাউজানের একটি পক্ষ যারা দীর্ঘ সময় এলাকায় ছিল না, তারাই আজ পতিত আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে পুরনো কায়দায় এলাকার বাড়ি ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, লুটতরাজ, চাঁদাবাজি, রাহাজানি ও খুনের সাথে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। এতে রাউজানের মানুষ আবারও নিরাপত্তাহীন হয়ে চরম অসহায় হয়ে পড়েছে।

বড় অংকের চাঁদা নিয়ে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের বিএনপিতে আশ্রয় দিচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘তারা পশ্চিম গুজরায় ১৫ শতাংশ চাঁদা পরিশোধ না করায় ব্রিজের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিয়েছে। চাহিদা মত চাঁদা আদায় করতে না পেরে তারা সিআইপি ইয়াছিনের বাড়িতে হামলা করে অগ্নিসংযোগ করেছে। সিআইপি ফোরকানের ওপর হামলা করেছে। বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও প্রবাসীদের জিম্মি করে চাঁদা আদায় করছে। এসব চাঁদাবাজি, লুটতরাজের টাকা কার হাতে যাচ্ছে তাও সকলের জানে। বড় অংকের চাঁদা নিয়ে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের বিএনপিতে আশ্রয় দিচ্ছে।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকারকে জড়িয়ে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে যারা এলাকায় সত্রাস ও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তারা বিএনপির চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা, সাবেক সাংসদ, সাবেক রাষ্ট্রদূত, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ গোলাম আকবর খোন্দকারকে জড়িয়ে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। আমরা এমন ষড়যন্ত্রের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

রাউজানে কারা সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে—জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনার সব জানেন। নির্দিষ্ট করে বলার কিছু নেই। কারা করছে তা সকলেরই জানা।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রাউজান উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা এখানে ব্যক্তিগতভাবে কারো বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করিনি। আমরা রাউজানের অস্থিতিশীলতার বিরুদ্ধে করেছি। দীর্ঘ ১৭ বছর যারা আমাদেরকে জ্বালিয়েছে, তারা ৫ আগস্টের পরে রুপ পরিবর্তন করে আবারো আমাদের জ্বালাচ্ছে। কারা কি কি করেছে, তার সিসিটিভি ফুটেজ আছে। ফুটেজ দেখে অপরাধী যে দলের হোক, যে নেতার রাজনীতি করুক তাকে গ্রেপ্তার করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন—রাউজান পৌরসভা বিএনপির সভাপতি আবু মোহাম্মদ, সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার উদ্দিন খান সহ বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সংবাদ সম্মেলন করতে এসে বাধার মুখে পড়েন রাউজান উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা। তারা যাতে প্রেস ক্লাবে প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য কয়েকজন লোক তাদের পথরোধ করে রাখেন। পরে পুলিশের সহযোগিতায় তারা প্রেস ক্লাবে প্রবেশ করে।

সংবাদ সম্মেলনের আগে ঘটে যাওয়া হট্টগোলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা সংবাদ সম্মেলনে আসার পথে আমাদের বাধা দেয়। যেটা খুবই অন্যায়। কারা করেছে, তা সকলে দেখেছে।

এমএ/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm