রপ্তানি অবশেষে বন্ধ, সোমবার শুরু চামড়া কেনাবেচা

সংকট কাটছে চামড়া শিল্পে। রপ্তানি হচ্ছে না কাঁচা চামড়া। আপাতত এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার। এছাড়া কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া কেনার ঘোষণা দিয়েছে ট্যানারি মালিকেরা। কাল সোমবার (১৯ আগস্ট) থেকে চামড়া কিনবেন ট্যানারি মালিকেরা। অন্যদিকে আড়তদারেরাও চামড়া বিক্রি করতে রাজি হয়েছেন।

রোববার (১৮ আগস্ট) বিকাল ৩টায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভা থেকে এ সিদ্ধান্ত এসেছে। এতে সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মফিজুল ইসলাম। সভায় শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হূমায়ুন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানসহ ট্যানারি ও আড়তদার সমিতির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তবে সভায় ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে আড়তদারদের বকেয়া পাওয়া পরিশোধের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

জানা যায়, সভায় শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হূমায়ুন কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া কেনার জন্য ট্যানারি মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান। অন্যথায় কাঁচা চামড়া রপ্তানির হুঁশিয়ারি দেন তিনি। এতে ট্যানারি মালিকেরা কাল সোমবার থেকে চামড়া কেনার সিদ্ধান্ত জানান। তবে ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে আড়তদারদের পাওনা টাকা পরিশোধের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয় সভাটি।

জানা যায়, ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে আড়তদারদের পাওনা টাকা পরিশোধের বিষয়ে ২২ আগস্ট বিকাল ৪টায় এফবিসিসিআইয়ের মধ্যস্থতায় ট্যানারি মালিক ও আড়তদারদের নিয়ে আরেকটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকার মতিঝিলে এফবিসিসিআইয়ের কার্যালয়ে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় কী সিদ্ধান্ত হয়েছে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম পৌর করপোরেশন কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মো. মো. আবদুল কাদের চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ট্যানারি মালিকেরা কাল সোমবার থেকে কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া কিনবে। শিল্পমন্ত্রী তাদেরকে বলেছেন, ‘কাঁচা চামড়া কিনতে হবে। না হলে রপ্তানি করা হবে। এছাড়া ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে আমাদের পাওনা টাকা পরিশোধ বিষয়ে আগামী ২২ আগস্ট আরেকটি সভা হবে।’

সভায় উপস্থিত থাকা বাংলাদেশ কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন মুঠোফোনে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘চামড়ার বাজার কেনাবেচার জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। কাঁচা চামড়া রপ্তানি হচ্ছে না। ট্যানারি মালিকের কাছ থেকে আমাদের পাওনা আদায়ের জন্য দায়িত্ব নিয়েছে এফবিসিসিআই। ২২ আগস্ট ফের সভা। ওই সভায় আমাদের পাওনা কিভাবে পরিশোধ করা হবে সে বিষয়ে আলোচনা করা হবে। ওই সভায় সিদ্ধান্ত দিতে না পারলে শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হূমায়ুন ও প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান আমাদের পাওনা আদায় করে দেবেন- এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে রোববারের সভায়।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে দেখা গেছে ট্রাকে করে চামড়া ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হচ্ছে—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শিল্পমন্ত্রী বলেছেন, ‘সরকারকে বিব্রত অবস্থায় ফেলতে বিএনপির লোকেরা চামড়া কিনে ডাস্টবিনে ফেলেছে। চামড়া ফেলার আগে থেকেই মিডিয়াকে খবর দিয়ে তা রেকর্ড করে প্রচার করা হয়েছে।’

বৈঠক সূত্রে আরও জানা গেছে, চট্টগ্রামের প্রতিনিধি জানিয়েছেন সেখানে ২৫ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়ে গেছে। অন্য প্রতিনিধিরা জানান, ট্যানারি মালিকরা নিজেরা নতুন নতুন গাড়ি কেনেন, ফ্ল্যাট বাড়ি কেনেন, বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন কিন্তু গরিব মানুষের পাওনা পরিশোধ করেন না। এদের বিচারের দাবি করেন তারা।

উল্লেখ্য, গত ১২ আগস্ট পবিত্র ঈদ উল আজহা অনুষ্ঠিত হয়। এবারের কোরবানিতে আড়তদারেরা আনুমানিক ৫ থেকে সাড়ে ৫ লাখ পিস কাঁচা চামড়া ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে গত দুই বছরের বকেয়া টাকা না পাওয়ায় চট্টগ্রামের আড়তদারেরা লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কাঁচা চামড়া কিনতে পারেনি। এর ফলে কোরবানির পশুর ১৫-২০ শতাংশ প্রায় এক লাখ চামড়া নষ্ট হয়ে যায়৤ যা বর্জ্য হিসেবে ডাম্পিং করেছে সিটি করপোরেশন। ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে চট্টগ্রামের আড়তদারদের পাওনা প্রায় ৩০ কোটি টাকা। সারা দেশ মিলিয়ে ট্যানারি মালিকদের কাছে আড়তাদারদের পাওনা প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।

এমএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!