দুই পা কেটে নেওয়ার পর নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে বিএনপি নেতা ও সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আবুল বশর তালুকদারকে। তার এক পা নিয়েও গেছে সন্ত্রাসীরা। একই পরিণতি হয়েছে আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাবের আহমদের। দুই পা কেটে নেওয়ার পর হত্যা করা হয় তাকেও। এরপর পেটে ছুরিকাঘাত করা হয় ব্যবসায়ী নুরুল ইসলামকে।
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা ‘রক্তাক্ত বাঁশখালী’তে পরিণত হয়ে গত চার দিনে এভাবে পৃথক তিনটি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ প্রশাসন। এদিকে দুইটি হত্যাকাণ্ডের ধরণ মিলে যাওয়ায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের কপালে। দুই পা কেটে নিয়ে হত্যা করার ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে ওই অঞ্চলে ঘটেনি বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
জানা গেছে, বাঁশখালীর বাহারছড়া ইউনিয়নের পূর্ব চাপাছড়ি গ্রামের উত্তর পাড়ায় বিএনপি নেতা ও সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আবুল বশর তালুকদারকে (৪৮) দুই পা কেটে নিয়ে খুন করেছে সন্ত্রাসীরা। এ হত্যাকান্ডের পর সন্ত্রাসীরা তার এক পা নিয়ে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, বখাটে যুবকদের মাদক ব্যবসায় বাধা দিতে গেলে গত শুক্রবার (১৯ মার্চ) রাত ১টার দিকে আবুল বশরকে হত্যা করা হয়। শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এস এম রসিদুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
পুলিশ ওই হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মো. মোজাঙ্গীর, মো. সাদু রশিদ, আব্দুল জব্বার নামের তিন জনকে গ্রেফতার করেছে।
হত্যাকাণ্ডের শিকার আবুল বশর তালুকদার নয় নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি’র সাবেক সভাপতি এবং সাবেক ইউপি সদস্য ছিলেন। তিনি স্থানীয় আব্দুস সালাম তালুকদারের পুত্র। তার তিন ছেলে ও চার মেয়ে রয়েছে।
এছাড়া গত ১৬ মার্চ রাতে দোকান থেকে বাড়ি ফেরার পথে চাম্বল ইউনিয়নের ব্যবসায়ী নুরুল ইসলামকে ছুরিকাঘাত করে সন্ত্রাসীরা। তার কাছ থেকে সাত লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায় তারা। ওই রাতেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয় নুরুল ইসলামের।
এদিকে গত ১৮ মার্চ রাতে বাঁশখালীর পুকুরিয়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাবের আহমদকে (৪৮) কুপিয়ে দুই পা কেটে নেয় সন্ত্রাসীরা। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তিনি মারা যান
স্থানীয় প্রত্যক্ষদশীরা জানান, বাঁশখালীর বাহারছড়া ইউনিয়নের পূর্ব চাপাছড়ি গ্রামের উত্তর পাড়ার রাস্তায় মাথায় বেশ কয়েকটি দোকান ও সিএনজি অটোরিক্সার গ্যারেজ রয়েছে। গ্যারেজের মালিক আব্দুল জব্বার । ওই গ্যারেজের ভিতর প্রতিদিন জুয়াখেলার আড্ডা বসাতেন এবং অবাধে মাদক বেচাকেনা হত। ওইখানে এক নারীও ওই মাদক ব্যবসায় জড়িত। প্রতিদিন জুয়াখেলা শেষে বাক বিতন্ডা হয়। ৪/৫দিন আগে স্থানীয় কিছু যুবক মাদক বেচাকেনা নিয়ে উশৃংখল পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে আবুল বশর তালুকদার এবং মো. সাদু রশিদের সাথে বাক বিতন্ডা হয়। ওই সময় আবুল বশরকে দেখে নেয়ার হুমকিও দেন স্থানীয় কিছু চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী।
সরেজমিন গেলে গ্যারেজের মালিক আব্দুল জব্বার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হবার আগে বলেন, ‘শুক্রবার রাত সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত তার গ্যারেজে তাস খেলা খেলেন আবুল বশর তালুকদার, জমির, শাহজাহান ও রুবেল। ওই সময় বাইরে ওৎ পেতে বসে থাকা লাসু বার বার উঁকি দিচ্ছিল। তাস খেলা শেষে আবুল বশর বাড়ি যাবার সময় বাড়ির পাশে কবরস্থানে পৌঁছলে ওৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা আবুল বশরের দুই পা কেটে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এমনকি কাটা এক পা নিয়েও যায়। আবুল বশরের আহত অবস্থার গোঙানির খবর পেয়ে স্থানীয় আরেক ইউপি সদস্য করিম ও আবুল বশরের কন্যা শাবনাজ তাকে উদ্ধার করে। এর কিছুক্ষণ পর আবুল বশর প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে মারা যান।
আবুল বশরের স্ত্রী খালেদা বেগম ও মেয়ে শাবনাজের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ‘স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীদের মাদক ব্যবসায় বাধা দিতে গিয়ে খুন হয়েছেন আবুল বশর তালুকদার। তিনি মারা যাওয়ার আগে তার বড় কন্যা শাবনুরকে সব খুনিদের নাম বলে গেছেন।’
সহকারী পুলিশ সুপার (আনোয়ারা সার্কেল) মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আবুল বশর কেন খুন হয়েছেন সে রহস্য বের করতে তদন্ত চলছে। পুলিশ সার্বক্ষণিক মাঠে আছে। জুয়া খেলায় সম্পৃক্ত তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কেটে নেওয়া পা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। হত্যাকাণ্ডগুলোর সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
এমএফও