রং বদলের উত্তেজনাকর ম্যাচে পাকিস্তানকে হারালো অস্ট্রেলিয়া

আমিরের পাঁচ উইকেট, ওয়ার্নারের সেঞ্চুরি

পাকিস্তান দলকে নিয়ে ভবিষ্যতবাণী করা বোকামির কাজ। এই দলটি কখন কি করবে, আগে থেকেই বলা মুশকিল। ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ তকমা তো আর নামের পাশে এমনি এমনি জুড়ে বসেনি। যেমনটা বলা গেল না টনটনে আজকের (বুধবার) ম্যাচটির শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। এই না হলে পাকিস্তান!

এবারের বিশ্বকাপের সবচেয়ে নাটকীয় ম্যাচটিই উপহার দিল টনটন। যে নাটকের পুরো চিত্রনাট্যই ঘুরপাক খেলো পাকিস্তানের হাত ধরে। ম্যাচে উত্থান-পতন আর টানটান উত্তেজনা, সব কিছুই ঘটলো আসলে পাকিস্তানের আনপ্রেডিক্টেবল চরিত্রের কারণে।

নাটকীয়তায় ঠাসা ম্যাচটি শেষও হলো নাটকীয়ভাবে। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ননস্ট্রাইক এন্ডে সরফরাজ আহমেদ যেভাবে রানআউট হলেন, সেটাও আসলে মনে রাখার মতো। অস্ট্রেলিয়া ম্যাচটি জিতেছে ৪১ রানে।

পাকিস্তানের বোলিংয়ের সময় মনে হচ্ছিল অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানরা দুমড়ে মুচড়ে দেবেন আজ। সেখান থেকে এক ওভার বাকি থাকতেই অজিদের অলআউট করে দেয় সরফরাজের দল। পরে রান তাড়ায়ও একটা সময় মনে হলো, সহজেই জেতার পথে হাঁটতে যাচ্ছে পাকিস্তান। কিন্তু মনে হলে তো হবে না, দলটা যে পাকিস্তান! কখন কি করবে বলা মুশকিল।

রং বদলের উত্তেজনাকর ম্যাচে পাকিস্তানকে হারালো অস্ট্রেলিয়া 1
ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করলেন পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ আমির

ক্ষণে ক্ষণে রং বদল! এই এদিকে উল্লাস তো ওদিকে কিছুপরই হাসি। ম্যাচ হেলে পড়তে থাকল দু-দিকেই। ১৬০ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর যখন মনে হচ্ছিল বড় হার দেখতে চলেছে পাকিস্তান, তখনই ম্যাচটা ঘুরিয়ে দিলেন লেজের ব্যাটসম্যানরা। তাদের ব্যাটে আবার যখন দারুণ এক জয়ের স্বপ্ন দেখছিল পাকিস্তান, দারুণ এক রিভিউয়ে ম্যাচটা নিজেদের করে নিল অস্ট্রেলিয়া! নিজেদের ব্যাটিংয়ের সময়ও বড় সংগ্রহের ইঙ্গিত দিয়ে পথ হারিয়েছিল ওয়ার্নার-স্মিথরা।

টন্টনে বুধবার দারুণ এক লড়াইয়ে এভাবে রং বদলের ম্যাচে শেষ হাসি অজিদের। পাকিস্তানের বিপক্ষে ৪১ রানের জয় তুলে নিয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। অস্ট্রেলিয়ার দেয়া ৩০৮ রানের লক্ষ্যের জবাবে লেজের ব্যাটসম্যানদের লড়াই সত্ত্বেও কাছে গিয়ে ২৬৬ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান।

দলের রান যখন ২, ওপেনার ফখর জামানকে (০) হারায় পাকিস্তান। এরপর বাবর আজমকে সঙ্গী করে ৫৪ রানের জুটিতে ধাক্কা সামাল দেন আরেক ওপেনার ইমাম-উল-হক।

১১তম ওভারে নাথান কোল্টার-নাইলের ধাক্কায় সেই জুটি ভাঙলেও অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ হাফিজকে নিয়ে ভালোভাবেই দলকে লড়াইয়ে রেখেছিলেন ইমাম। দুজনের ৮০ রানের জুটিতে একটা সময় মনে হচ্ছিল অস্ট্রেলিয়াকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দিচ্ছে তারা।

পরপর দুই ওভারে ইমাম (৫৩) ও হাফিজ (৪৬) ফিরতেই গর্তে পড়ে যায় পাকিস্তান। রানের খাতা খোলার আগেই শোয়েব মালিক আর ৫ রানে আসিফ আলি সাজঘরে ফিরলে বড় এক হারই চোখ রাঙাচ্ছিল ১৯৯২ বিশ্বকাপ জয়ীদের।

রং বদলের উত্তেজনাকর ম্যাচে পাকিস্তানকে হারালো অস্ট্রেলিয়া 2
ব্যাট হাতে ঝড় তোলার পর সবাইকে অবাক করে বল করতে এসেই হাফিজকে তুলে নেন অসি অধিনায়ক অ্যারেন ফিঞ্চ

সেখান থেকে লেজের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে ম্যাচটা জমিয়ে দেন অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ। ১৬০ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর পাল্টা আক্রমণে পাকিস্তানকে ২০০ পার করিয়ে দেন হাসান আলি। মাত্র ১৫ বলে সমান ৩টি করে চার-ছক্কায় ৩২ করেছেন এ পেসার।

হাসান যেখানে থেমেছেন সেখান থেকেই লড়াইটা শুরু করেন আরেক পেসার ওয়াহাব রিয়াজ। অজি পেসারদের শর্ট বলকে রুখে দিয়ে যেভাবে পাল্টা আক্রমণ করেছেন, তাতে লজ্জা পেতেই পারেন পাকিস্তানের মূলসারির ব্যাটসম্যানরা। সরফরাজকে অন্যপ্রান্তে রেখে ওয়াহাব এনে দেন ৩৯ বলে দেন গুরুত্বপূর্ণ ৪৫টি রান।

সেখান থেকে হঠাতই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন মিচেল স্টার্ক। ৪৫তম ওভারে তার এক শর্ট বলে রিয়াজের ক্যাচ নিয়ে মৃদু আবেদন করেন উইকেটরক্ষক অ্যালেক্স ক্যারি। আম্পায়ার না বললেও নির্ধারিত সময়ের এক সেকেন্ড আগে রিভিউ চেয়ে বসেন অজি অধিনায়ক ফিঞ্চ!

শেষ পর্যন্ত সেই রিভিউতেই ভাগ্য ঘুরে যায় অস্ট্রেলিয়ার। রিপ্লেতে দেখা যায় উইকেটরক্ষকের হাতে যাওয়ার আগে ওয়াহাবের ব্যাট ছুঁয়েছে বল। তাতেই সব প্রতিরোধ শেষ পাকিস্তানের। দ্রুত আমির ও সরফরাজকে রানআউট করে ম্যাচটা শেষ করে দেয় অস্ট্রেলিয়া!

অজিদের হয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন প্যাট কামিন্স। ২টি করে উইকেট পেয়েছেন স্টার্ক, কেন রিচার্ডসন।

রং বদল হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসেও। প্রথমে ব্যাট করা অজিরা শুরুতে বড় রানের ইঙ্গিত দিলেও থেমেছে ৩০৭ রানে। কুপার্স অ্যাসোসিয়েশন মাঠে যা তৃতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ।

নিজের ১৫তম সেঞ্চুরিতে (১০৭) যেমন স্বস্তি ফিরিয়েছেন ওয়ার্নার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮২ করেন অজি অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। আর ৩০ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করেছেন পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ আমির।

রং বদলের উত্তেজনাকর ম্যাচে পাকিস্তানকে হারালো অস্ট্রেলিয়া 3
ক্যারিয়ারের ১৫তম সেঞ্চুরির পর উড়ছেন ডেভিড ওয়ার্নার

উদ্বোধনী জুটিতে মাত্র ২২ ওভারে ১৪৬ রানের জুটি গড়েন দুই ওপেনার ওয়ার্নার-ফিঞ্চ। দুজনের ব্যাটিংয়ে একটা সময় মনে হচ্ছিলো হেসে-খেলেই সাড়ে তিনশো পার করবে অজিরা।

কিন্তু প্রথমে ফিঞ্চ ও পরে ওয়ার্নারকে হারিয়ে একটা সময় রং হারিয়ে বসে অজি ব্যাটিং লাইনআপ। শেষদিকে আমিরের ছোবলে কোন রকমে ৩০০ পেরোয় অজিরা।

ম্যাচে যেভাবে দুহাতে রান বিলিয়েছেন সতীর্থরা, তার উল্টো পথে হাঁটেন আমির। ১০ ওভার বল করে দিয়েছেন মাত্র ৩০ রান, তাতে ঝুলিতে ৫ উইকেট। বাকিদের মধ্যে ওয়াহাব রিয়াজের রান গড় কেবল ছয়ের নিচে (৫.৫০)। ২টি মেডেন ওভারও করেছেন আমির।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
অস্ট্রেলিয়া: ৪৯ ওভারে ৩০৭/১০ (ফিঞ্চ ৮২, ওয়ার্নার ১০৭, স্মিথ ১০, ম্যাক্সওয়েল ২০, মার্শ ২৩, খাওয়াজা ১৮, কেয়ারি ২০, কোল্টার-নাইল ২, কামিন্স ২, স্টার্ক ৩, রিচার্ডসন ১*; আমির ৫/৩০, আফ্রিদি ২/৭০, হাসান ১/৬৭, ওয়াহাব ১/৪৪, হাফিজ ১/৬০)।
পাকিস্তান: ৪৫.৪ ওভারে ২৬৬/১০ (ইমাম ৫৩, ফখর ০, বাবর ৩০, হাফিজ ৪৬, সরফরাজ ৪০, মালিক ০, আসিফ ৫, হাসান ৩২, ওয়াহাব ৪৫, আমির ০, আফ্রিদি ১*; কামিন্স ৩/৩৩, স্টার্ক ২/৪৩, রিচার্ডসন ২/৬২, কোল্টার-নাইল ১/৫৩, ফিঞ্চ ১/১৩)
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৪১ রানে জয়ী
ম্যাচসেরা: ডেভিড ওয়ার্নার

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!