যোগ্যতাই নেই, সিডিএতে তবু তারা সহকারী নগর পরিকল্পনাবিদ!

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) বোর্ড সভার সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে সংস্থার নগর পরিকল্পনা বিভাগে সম্প্রতি যোগ্যদের বাদ দিয়ে অযোগ্য ব্যক্তিদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে চউকের ভিতরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, জিআইএস (জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেম) অপারেটর হওয়ার যোগ্যতা নেই—এমন দুজনকে সহকারী নগর পরিকল্পনাবিদ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সিডিএ। জিআইএস অপারেটর মো. জয়নুল আবেদীন ও জান্নাতুল ফেরদৌসকে গত ১৬ মে এক অফিস আদেশের মাধ্যমে সহকারী নগর পরিকল্পনাবিদ হিসেবে পদোন্নতি দিয়েছেন সিডিএর সচিব তাহেরা ফেরদৌস বেগম। কিন্তু ওই দুজনের জিআইএস অপারেটর হওয়ার যোগ্যতাও নেই।

এর আগে গত ১৮ এপ্রিল তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিডিএর ৪৩৫তম জরুরি সভার কার্যবিবরণীর পরিকল্পনা বিভাগের পদোন্নতি ও নিয়োগ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘জিআইএস অপারেটর হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্তির জন্য যে শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রয়োজন, মো. জয়নুল আবেদীন ও জান্নাতুল ফেরদৌস এ দুজন জিআইএস অপারেটরদের কারো এ ধরনের শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকা সত্বেও কর্তৃপক্ষ তাদেরকে জিআইএস অপারেটর হিসেবে নিয়োগ দেয়। এ অবস্থায় নকশাবিদ কেএম আলমগীর ও মানিক চন্দ্র ভৌমিককে সহকারী নগর পরিকল্পবিদ হিসেবে পদোন্নতির জন্য সুপারিশ করা হলো।’

এদিকে জরুরি সভার সিদ্ধান্ত না মেনে পদোন্নতি না দেওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন নকশাবিদ কেএম আলমগীর ও মানিক চন্দ্র ভৌমিক।

নকশাবিদ কেএম আলমগীর চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদেরকে বঞ্চিত করা হয়েছে, অন্যায় করা হয়েছে। আমরা চাই, আমাদেরকেই পদোন্নতি দেওয়া হোক। ২৭ বছর ধরে চাকরি করছি। আমাদের চেয়ে জুনিয়রদেরকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এদের কোন যোগ্যতাই নেই। আমরা এখন হতাশ।’

নকশাবিদ মানিক চন্দ্র ভৌমিক বলেন, ‘যোগ্যতা থাকা সত্বেও আমরা পদোন্নতি পাইনি। জরুরি সভায় তৎকালীন চেয়ারম্যান ও বর্তমান সচিব দুজনই উপস্থিত ছিলেন। তারপরও কেন এমন করা হলো, তা আমাদের বোধগম্য নয়।’

জানা যায়, মো. জয়নুল আবেদীন ও জান্নাতুল ফেরদৌস ২০০৮ সালের ২০ নভেম্বর জিআইএস অপারেটর হিসেবে সিডিএতে যোগদান করেন।

শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মো. জয়নুল আবেদীন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। কমিটিকে জিজ্ঞেস করতে পারেন। আমি কিছু জানি না।’

একই প্রশ্নের জবাবে জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘জিআইএস অপারেটর হিসেবে আমার ১১ বছরের অভিজ্ঞতা আছে। নিয়োগ বিধি অনুসারে সহকারী নগর পরিকল্পবিদ হওয়ার সব যোগ্যতা আমার আছে।’

পদোন্নতিতে অনিয়ম সম্পর্কে জানতে চাইলে চউক বোর্ড এবং নিয়োগ ও পদোন্নতি বাছাই কমিটির সদস্য হাসান মুরাদ বিপ্লব চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘পদোন্নতিতে অনিয়ম করা উচিত না। পদোন্নতির ক্ষেত্রে নিয়মের বাত্যয় হয়ে থাকলে বিষয়টি আমি বোর্ড সভায় তুলবো। এর ব্যাখ্যা চাইবো। অনিয়ম হয়ে থাকলে আমরা খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেবো।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিডিএর সচিব তাহেরা ফেরদৌস বেগম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি পদোন্নতি দেইনি। অফিস দিয়েছে। আমি অফিস আদেশে স্বাক্ষর করেছি। আপনার অভিযোগ সঠিক নয়। বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত না দেখে মুখস্থ কিছু বলতে পারছি না।’

জানতে চাইলে সিডিএর চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এ পদোন্নতিটা আমার মেয়াদে হয়নি। বোর্ড সভায় কী সিদ্ধান্ত হয়েছে; তা না দেখে আমি কোন মন্তব্য করতে পারছি না। বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত দেখে বলতে পারবো।’

এমএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!