যে কারণে হেরে গেলেন ফজলে করিম

উত্তর চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের সম্মেলন

উত্তর চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অনেকটাই একাকী পথ হাঁটা রাউজানের চারবারের সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী রাজনীতিতে আবারও একা হয়ে গেলেন।

গত ১১ মাস আগে সাবেক সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরীর মৃত্যুজনিত কারণে উত্তর চট্টগ্রামের রাজনীতির শীর্ষ পদটি পেয়ে লাইমলাইটে আসেন তিনি। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হলেও দায়িত্ব নিয়েই তিনি দলীয় কার্যালয় সংস্কার ও সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে চার উপজেলায় সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্বও উপহার দেন।

তবুও সম্মেলনে এসে তৃণমূলের ভোটে বিশাল ব্যবধানে সাধারণ সম্পাদক এম এ সালামের কাছে হারলেন ফজলে করিম। ফলে ভারপ্রাপ্ত থেকে আর ভারমুক্ত হয়ে সভাপতি হতে পারেননি রাউজানের এ সাংসদের। এই হারের পেছনের কারণ হিসেবে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলছেন, দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতি জড়িত ফজলে করিম জেলার দায়িত্বশীল পদে থেকেও নিজ সংসদীয় এলাকার বাইরে নেতাকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেননি। উত্তর চট্টগ্রামের রাজনীতিতে প্রেসিডিয়াম মেম্বার ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও এম এ সালামের সুদৃঢ় নেতৃত্বের কারণে তৃণমূলে তাদের প্রভাব এখনও বিদ্যমান। সেটিও ভোটের রাজনীতিতে প্রভাব রেখেছে।

উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এম এ সালাম দীর্ঘ বছর উত্তর জেলার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় প্রতিটি উপজেলা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যন্ত তার পরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। বিপরীতে সেই পরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতা নেই ফজলে করিমের। তার যা পরিচিতি বা গ্রহণযোগ্যতা সবই রাউজানকেন্দ্রিক। এম এ সালামকে নেতাকর্মীরা সজ্জন বিনয়ী হিসেবে জেনে আসলেও ফজলে করিমকে চিনেন অনেকটা রাগী ও প্রভাবশালী হিসেবে। এছাড়া তৃণমূলে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের যে প্রভাব এখনও বিদ্যমান সেখানে তার প্রার্থী ছিলেন এমএ সালাম। তৃণমূলের বেশিরভাগই তাদের অভিভাবক মোশাররফের মতের বাইরে গিয়ে ফজলে করিমকে ভোট দেননি। এছাড়া উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের বাসিন্দা কেন্দ্রিয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতাও চাননি ফজলে করিম চৌধুরী নেতৃত্বে আসুক। সব মিলিয়ে এম এ সালামের দিকেই ঝুঁকেছে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

জেলা কমিটিতে দায়িত্বশীল ও জনপ্রতিনিধি, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত এরকম দুজন আওয়ামী লীগ নেতা নাম প্রকাশে অনিচ্ছা জানিয়ে বলেন, নেতাকর্মীদের কাছে ফজলে করিমের চেয়ে এম এ সালামই সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও নিরাপদ মনে হয়েছে। তাদের মনের ভাষা অনুধাবন করার জন্য এম এ সালাম পক্ষান্তরে ফজলে করিমের চেয়ে অনেক বিশ্বস্ত। দুজনের তুলনামূলক ব্যবহার মেজাজেও অনেক পার্থক্য রয়েছে। সবমিলিয়ে মোশাররফ হোসেনের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের প্রার্থী এম এ সালামের ওপরই আস্থা রেখেছেন ভোটাররা।

এ প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগ করা হলেও রাউজানের সাংসদ এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর মোবাইলে সাড়া মেলেনি।

প্রসঙ্গত তৃণমূল আওয়ামী লীগের প্রত্যক্ষ ভোটে সভাপতি হয়েছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম আর জেলা পরিষদের সদস্য আতাউর রহমান আতা নতুন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। মোট ৩৬৬ জন কাউন্সিলর তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এরমধ্যে নতুন সভাপতি এম এ সালাম পেয়েছেন ২২৩ ভোট আর তার প্রতিদ্বন্দ্বী রাউজানের সাংসদ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী পেয়েছেন ১২৯ ভোট। অন্যদিকে নতুন সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতা পেয়েছেন ১৯৬ ভোট আর প্রতিদ্বন্দ্বী গিয়াস উদ্দিন পেয়েছেন ১৫৪ ভোট।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!