ভিডিও/ যেখানে ময়লা ফেলা নিষেধ, সেখানেই ময়লা ফেলছে চসিক

নিজেদের নির্দেশনা নিজেরাই অমান্য করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। যেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা নিষেধ, সেখানেই ময়লা-আবর্জনা ফেলছে খোদ চসিক। নগরীর ব্যাংকপাড়া খ্যাত বাণিজ্যিক এলাকা আগ্রাবাদে এমন চিত্র দেখা গেছে।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তা দখল করে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন ওই এলাকার কর্মজীবী মানুষ ও পথচারীরা। দুর্গন্ধে নাক চেপে হাঁটতে হচ্ছে পথচারীদের। রাস্তার ওপর মাটি ও আবর্জনা ফেলায় ওই এলাকায় সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। এতে ওই এলাকার অধিবাসী, পথচারী ও কর্মজীবী মানুষের মধ্যে চসিক সম্পর্কে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে।

চসিকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘জায়গাটি তাদের ময়লা-আবর্জনা ফেলার সেকেন্ডারি স্টেশন।’ যদিও ওই জায়গার পাশে সীমানাপ্রাচীরে ময়লা-আবর্জনা না ফেলার নির্দেশনা দিয়ে ব্যানার টাঙ্গিয়েছে চসিক। আবার চসিকের দাবি, দুপুর একটা থেকে রাত এগারোটার মধ্যে ময়লা অপসারণ করা হয়। তবে সরেজমিনে দেখা যায়, দিনরাত ২৪ ঘন্টায় ওই জায়গায় ময়লা-আবর্জনার স্তুপ পড়েই থাকে।

আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় ভূতাত্ত্বিক জাদুঘরের বিপরীত দিকে একটু দূরেই তিন রাস্তার মোড়। মোড়ের আশেপাশেই কন্টিনেন্টাল গ্রুপ, উত্তরা ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংকসহ অনেকগুলো বাণিজ্যিব প্রতিষ্ঠানের অবস্থান ওই এলাকায়। একটু দূরেই অবস্থিত আন্তর্জাতিক মানের আগ্রাবাদ হোটেল। পূবালী ব্যাংকের সামনেই রাস্তার মোড়ে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা, বালি, মাটি ইত্যাদি। ড্রেন সংস্কারের মাটি আর টমটম ভর্তি ময়লা এনে ওই জায়গায় ফেলছে চসিকের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা।

যেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা নিষেধ, সেখানেই ময়লা-আবর্জনা ফেলছে খোদ চসিক।
যেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা নিষেধ, সেখানেই ময়লা-আবর্জনা ফেলছে খোদ চসিক।

ময়লা ফেলছে কেন জানতে চাইলে এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী বলেন, ‘ময়লা না মাটি ফেলা হচ্ছে। পরে আবার নিয়ে যাবে।’

সরেজমিনে দেখা যায়, ওই মোড়ে মাটি, বালি, কংক্রিট ও আবর্জনার স্তুপ। তার ওপর রাখা হয়েছে স্ক্র্যাপ ভ্যান গাড়ি। রাস্তার পুরোটাই দখল করেছে: আবর্জনার স্তুপ। গাড়ি চলতে না পেরে সৃষ্টি হয়েছে যানজট।

পথচারী উত্তরা ব্যাংকের কর্মকর্তা আদিল মোহাম্মদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘অবস্থা খুবই খারাপ। দুর্গন্ধে মানুষ চলতে পারছে না। ব্যাংকের কাস্টমাররা যাওয়া-আসা করতে অনেক কষ্ট হয়। সিটি করপোরেশনের এদিকে নজর দেওয়া উচিত।’

ময়লা-আবর্জনার স্তুপের পাশেই সীমানাপ্রাচীর টাঙ্গানো ব্যানারে লেখা আছে, ‘এখানে ময়লা আবর্জনা ফেলা সম্পূর্ণ নিষেধ। আদেশক্রমে, আলহাজ্ব মোহাম্মদ আবদুল কাদের, কাউন্সিলর, ২৮ নম্বর পাঠানটুলী ওয়ার্ড, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।’

এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মোহাম্মদ আবদুল কাদের চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি কিছুদিন দেশের বাইরে ছিলাম। তাই ময়লা-আবর্জনা ফেলার বিষয়টি আমার জানা নেই। আমার জানা মতে, ওইখান থেকে রাতের বেলায় ময়লা-আবর্জনা নিয়ে যাওয়া হয়। এখন যেহেতু বলছেন, ময়লা-আবর্জনার স্তুপ বা সিটি করপোরেশন ময়লা ফেলতে, তাহলে আমি বিষয়টি দেখে ব্যবস্থা নেবো।’

দুর্গন্ধে নাক চেপে হাঁটতে হচ্ছে পথচারীদের।
দুর্গন্ধে নাক চেপে হাঁটতে হচ্ছে পথচারীদের।

‘ওই স্থানে ময়লা আবর্জনা ফেলা নিষেধ’—এমন নির্দেশনা থাকার পর কেন ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে প্রশ্ন করা হলে চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কাজী শফিকুল মান্নান সিদ্দিকী জিসু চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘না ফেলার নির্দেশনা থাকলে ওই রকম জায়গায় কেউ ময়লা-আবর্জনা ফেলতে পারবে না।’

সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরাই ময়লা-আবর্জনা ফেলছে কেন জানতে চাইলে তিনি পরক্ষণে বলেন, ‘ওই জায়গাটি ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য সেকেন্ডারি স্পট হিসেবে ব্যবহার করি। ডোর-টু-ডোর ময়লা সংগ্রহ করে এখানে ফেলা হয়। বিকালের মধ্যে পরিস্কার করে ফেলবো।’

বিকাল পাঁচটার পরও ময়লা-আবর্জনা স্তুপের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে জিসু বলেন, ‘রাত এগারোটা পর্যন্ত সময় আছে। এর মধ্যে পে-লোডার দিয়ে সব আবর্জনা-মাটি অপসারণ করে ফেলবে।’

এমএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!