যুবলীগের সম্মেলনে অতিথি তালিকা নিয়ে ‘অসন্তোষ’ চট্টগ্রামে

চট্টগ্রামে যুবলীগের তিন ইউনিট সম্মেলনের অতিথি তালিকা নিয়ে অস্বস্তি ছড়িয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের সম্মেলনে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশকে উদ্বোধক ও প্রধান অতিথি করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে করা হয়েছে সম্মানিত অতিথি। বিষয়টি নিয়ে অনেকটাই বিব্রত চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা। সেই অস্বস্তির পালে বাড়তি হাওয়া যোগ করেছে নগর যুবলীগের সম্মেলনের অতিথি তালিকা। যেখানে প্রধান অতিথি করা হয়েছে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমকে।

প্রায় একই সময়ে দুটি সম্মেলনের একটিতে আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্যকে প্রধান অতিথি করে অন্য অপরটিতে আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্যকে শুধুমাত্র সম্মানিত অতিথি করে তাঁকে অসম্মানিত করা হলো কিনা এটিই এখন চট্টগ্রামের রাজনীতির মূল আলোচনায়।

এই বিষয়ে অস্বস্তি ছড়ালেও প্রকাশ্য প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন না কেউই। এরমধ্যে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে স্থানীয় রাজনীতির অস্বস্তির কথা কেন্দ্রে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি এই পোস্টার এখন পর্যন্ত ছাপানো হয়নি জানিয়ে উত্তর জেলা যুবলীগের যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা চলছে। কেন্দ্র থেকে চূড়ান্ত নির্দেশনা পেলেই এই বিষয়ে জানানো হবে।’

অন্যদিকে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সভা করে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে যুবলীগের সম্মেলন প্রসঙ্গে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান আতা।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের সম্মেলনে উদ্বোধক ও প্রধান অতিথি করা হয়েছে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশকে।

এতে সম্মানিত অতিথি রাখা হয়েছে যথাক্রমে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনকে।

এতে প্রধান বক্তা রাখা হয়েছে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিলকে।

অন্যদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক ও উত্তর জেলার আওতাধীন সংসদীয় আসনগুলো থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের দলীয় সাংসদদের রাখা হয়েছে বিশেষ অতিথি হিসেবে।

এছাড়া নগর যুবলীগের সম্মেলনে উদ্বোধক রাখা হয়েছে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশকে।

এতে প্রধান অতিথি রাখা হয়েছে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমকে।

সম্মেলনে সম্মানিত অতিথি রাখা হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ ও চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনকে।

প্রধান বক্তা রাখা হয়েছে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিলকে।

এই দুটি পোস্টার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হলে এটি নিয়ে নানান সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রামের স্থানীয় রাজনীতিতে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা যুবলীগের এক নেতা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘পরশ ভাই প্রধান অতিথি, সে সম্মেলনে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন শুধুমাত্র অতিথি- এটা আসলেই অশোভন। কথা হলো সব ইউনিটে যদি এমন হতো তাহলেও হয়তো ব্যাপারটা মানা যেত। কিন্তু এখানে নগরে আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্যকে প্রধান অতিথি করায় বিষয়টা বেশি দৃষ্টিকটু মনে হয়েছে।’

চট্টগ্রাম উত্তর জেলার এই ধরনের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ষড়যন্ত্র থাকতে পারে শঙ্কা জানিয়ে যুবলীগের ওই নেতা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এটা নিয়ে কেউ কোনো স্পষ্ট কথা বলছে না। বলা হচ্ছে চেয়ারম্যানের নির্দেশে এটা করা হয়েছে। আমরা চেয়ারম্যানকে যেভাবে চিনি তিনি যতটা সজ্জন আর পোলাইড তাতে মনে হয় না এটা সত্য। আমাদেরতো সন্দেহ হচ্ছে এখানে চেয়ারম্যানের নাম ব্যবহার করে অন্য কেউ কোনো ষড়যন্ত্র করছে কিনা।’

পোস্টারের বিষয়ে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের অবস্থান কী-এই প্রশ্নের উত্তরে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল আলম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা এখনো পোস্টার ছাপাইনি। এটি নিয়ে আমাদের মতামত আমরা কেন্দ্রে জানিয়েছি। সেখান থেকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত পেলে আমরা বিষয়টি জানাবো। তবে আমাদের গঠনতন্ত্রে চেয়ারম্যানকে সর্বময় ক্ষমতার অধিকার দেওয়া হয়েছে। তিনি যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।’

এই ধরনের অতিথি তালিকা সাজানোর বিষয়ে যুবলীগের যৌক্তিক কোনো অবস্থান আছে কিনা-এমন প্রশ্নের উত্তরে রাশেদুল আলম বলেন, ‘এই বিষয়ে যদি আপনি জানতে চান তাহলে তা কেবলমাত্র বলতে পারবেন আমাদের চেয়ারম্যান।’

এই বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন কিংবা আওয়ামী লীগের নেতারা এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে রাশেদুল আলম বলেন, ‘ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন একটা ইতিহাস, একটা ইনস্টিটিউট। এসব বিষয়ে কথা বলার মত ব্যক্তিত্ব উনার না। আমরা আমাদের অবস্থান থেকে কথা বলছি।’

জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান আতা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এটা যুবলীগের সাংগঠনিক বিষয়। আমরা এটা নিয়ে সংযত হয়ে কথা বলতে চাই। তারা কেন এটা করেছে সেটার যৌক্তিক ব্যাখ্যাও থাকতে পারে। আমরা বিষয়টি নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সবাই মিলে বসে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে সিদ্ধান্ত নেবো। আপাতত এর বেশি কিছু বলতে চাই না।’

অতিথি তালিকার বিষয়ে জানতে চাইলে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘যুবলীগের সম্মেলন, তাদের সাংগঠনিক বিষয়। তারা কিভাবে সিদ্ধান্ত নেবে এটা তাদের ব্যাপার। তারা যেটা দিয়েছে সেটাই হবে, অসুবিধা কোথায়। যুবলীগ তাদের মতো পোস্টার করছে এটাকে তারা ঠিক মনে করছে।’

সম্মেলনে যাচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ বলেন, ‘আমার শরীর যদি ভাল থাকে আমি সম্মেলনে যাব।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!