যুবলীগের কমিটিতে চট্টগ্রামের মুখ— আলোচনায় যেসব নাম
সপ্তম জাতীয় কংগ্রেসের এক বছরের মাথায় অবশেষে আলোর মুখ দেখছে কেন্দ্রীয় যুবলীগের কার্যনির্বাহী কমিটি। যাচাই-বাছাই শেষে সরকারি দলের এই যুব সংগঠনের কমিটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য এর মধ্যেই দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরে রয়েছে বলে যুবলীগের একাধিক সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ১১ নভেম্বর যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আগেই সংগঠনটির পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
যুবলীগের এবারের কমিটিতে প্রেসিডিয়াম সদস্য পদে চট্টগ্রাম থেকে দুজন নেতা স্থান করে নিতে যাচ্ছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। যুবলীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী এই ফোরামের সদস্য পদে আলোচিত এই দুই নেতা হলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মামুনুর রশীদ মামুন। এছাড়াও গত কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা বদিউল আলম এবারের কমিটিতে প্রেসিডিয়াম সদস্য কিংবা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানিয়েছে সূত্রটি।
এর আগের কমিটিতেও চট্টগ্রাম থেকে দুজন নেতা যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তারা হলেন আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু ও সৈয়দ মাহমুদুল হক। কেন্দ্রীয় যুবলীগের নতুন কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে সৈয়দ মাহমুদুল হক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আগের কমিটিতে চট্টগ্রাম থেকে আমরা দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্য পদে ছিলাম। এর বাইরেও আরও ৮-৯ জন কেন্দ্রীয় কমিটিতে ছিল। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু কিংবা আমার যুবলীগ করার সুযোগ নেই। তবে গত কমিটিতে চট্টগ্রাম থেকে যারা ছিল তারা সকলেই ভাল ভূমিকা রেখেছিল। সে হিসেবে এবারও কেন্দ্রীয় কমিটিতে চট্টগ্রাম থেকে বেশ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতার জায়গা পাওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।’
এবারের কমিটিতে চট্টগ্রাম থেকে কারা জায়গা পেতে পারেন— এমন প্রশ্নের জবাবে মাহমুদুল হক বলেন, ‘এবারের কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াটা একটু ভিন্ন। নেত্রী সরাসরি বিষয়টা দেখছেন। তাছাড়া বিভিন্ন ধাপে যাচাই-বাছাই করে অনেকটা ছেঁকে ছেঁকে নেতা বাছাই করা হচ্ছে এবার। কাজেই কে কে আসবেন এটা বলা আসলেই কঠিন।’
ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আসলে আমি কিছুই জানি না। সর্বশেষ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। এরপর থেকে কোনো পদ-পদবিতে না থাকলেও দলে আমি একদিনের জন্যও নিষ্ক্রিয় ছিলাম না। দলের জন্য কাজ করে গেছি। কখনও পদপদবি চাইনি। কারণ দলের কর্মী হিসেবে আমি দলীয় নেত্রীর অনুগত।’
পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির এই নেতা বলেন, ‘পরিচ্ছন্ন দল গড়ার প্রচেষ্টা আছে জননেত্রীর। নেত্রী যে নির্দেশই দেবেন, যে দায়িত্ব দেবেন— সেটা আমাকে পালন করতেই হবে। যে দায়িত্বই তিনি দেন সেটা শিরোধার্য।’
এই বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক কাউন্সিলর ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য মামুনুর রশীদ মামুন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় যুবলীগের কমিটির জন্য আমার শুভাকাঙ্ক্ষীরা গত বছর আমার জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছিল এটুকু আমি জানি। কাল থেকে শুনছি যুবলীগের কমিটিতে আমাকে ও আমার বন্ধু মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরীকে প্রেসিডিয়াম মেম্বার পদে রাখা হচ্ছে।’
দলের দুঃসময়ে ভূমিকা রাখা এই নেতা বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছি। দলীয় পদপদবি আমার কাছে দায়িত্ব। আর রাজনীতি করি একটা আদর্শকে সামনে রেখে। দলের আদর্শ বাস্তবায়নে সবসময় জননেত্রী শেখ হাসিনার সৈনিক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি। কোনো দায়িত্ব পেলে সেটি পালনেও আমি সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করবো।’
এদিকে গত কমিটিতে দায়িত্ব পালন করা একজন নেতা নাম বলেন, ‘গত কমিটিতে সবমিলিয়ে চট্টগ্রাম থেকে আমরা ১০ জনের মত ছিলাম। এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। কিভাবে কী হচ্ছে সেটা আসলে বলা মুশকিল। তবে চট্টগ্রাম থেকে অনেকেই বিভিন্নভাবে চেষ্টা তদবির করেছে।’
এদিকে কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন পদে আরও যাদের নাম শোনা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের স্টিয়ারিং কমিটির সাবেক সদস্য দেবাশীষ পাল দেবু। তিনি সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও ছাত্র সংসদের জিএস ছিলেন। শোনা যাচ্ছে চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য ইশতিয়াক আহমেদ চৌধুরী সাদিতের নামও। তিনি নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর ছেলে। এছাড়া আরও শোনা যাচ্ছে যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক উপ কৃষি ও সমবায় সম্পাদক মীর মহিউদ্দিন, কেন্দ্রীয় যুবলীগের গত কমিটির সদস্য রাশেদ খান মেনন ও আরিফুর রহমান, চট্টগ্রাম করোনা আইসোলেশন সেন্টারের উদ্যোক্তা সাজ্জাত হোসেন, চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবুল কালাম আজাদের নাম।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৩ নভেম্বর রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুবলীগের সপ্তম কংগ্রেসের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। সেদিনই সম্মেলনের দ্বিতীয় সেশনে কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে।
এআরটি/সিপি